‘পরকীয়ার’ জেরেই মা-বাবা-বোনকে হত্যা করেন মেহজাবিন!
স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর কদমতলীতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মা-বাবা ও বোনকে হত্যার ঘটনায় বড় মেয়ে মেহজাবিনকে আটক করেছে পুলিশ।সেই হত্যার ঘটনায় পেছনে পরকীয়া প্রেম রয়েছে বলে দাবি করেছে নিহতের স্বজনরা।
এদিকে ঘটনার পরই শনিবার দুপুরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তিন খুনের রহস্য উন্মোচন করার জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, পারিবারিক কলহের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে ঠিক কি ধরনের কলহ ছিল, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশের পাশাপাশি, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডির ক্রাইম সিন টিম এবং র্যাব সদস্যরা রয়েছেন।
তবে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত মাসুদ রানা (৫০) কয়েক বছর ধরে সৌদিতে ছিলেন। বছর খানেক হলো দেশে ফিরছেন। অন্যদিকে ৬ বছর আগে মেহজাবিন মুন ও শফিকুল ইসলাম-এর বিয়ে হয়। এরপর পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ায় মেহজাবিন-এর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু বছর খানেক হলো মেহজাবিনকে মেনে নেয় পরিবার। এতেই বাধে বিপত্তি।
নিহত মৌসুমী ইসলামের বড় বোন জাহানারা বলেন, মেহজাবিনের ছোট বোন মোহিনীর সঙ্গে স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এজন্য তাদের পরিবারে ঝগড়া হতো। তবে গতকাল কী ঘটেছিল, তা আমি জানি না। তবে আমাদের ধারণা, পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই এই ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য শফিকুলকেই দায়ী করেন ওই পরিবারের স্বজনরা।
ঘাতকের চাচাতো বোন শিলা বলেন, মেহজাবিন তার পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। সে তার আগের ঘরের স্বামীকেও খুন করেছিল। সেই মামলায় মেহজাবিনসহ তার নিহত বাবা-মা ও বোনের জেল হয়েছিল। পাঁচ বছর জেল খেটে তারা জামিনে ছাড়া পায়।
তিনি আরও বলেন, গত দুদিন আগে স্বামী সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবিন। এসেই তার ছোট বোনের জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে বলে বাবা-মাকে অভিযোগ করে। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। তার জেরেই হয়তো সে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এছাড়া প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, জায়গা সম্পত্তি নিয়েও পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ছিল মেহজাবিনের। সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য বাবা-মাকে অনেক চাপ দিত। এ নিয়ে এর আগে বৈঠক শালিস হয়েছে।
তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেহজাবিনের স্বামী শরিফুল ইসলাম মেহজাবিনকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মেহজাবিন বেশ কয়েক মাস ধরে উশৃঙ্খল জীবনযাপন করত। কাজ থেকে বাসায় ফিরে তাকে পাওয়া যেত না। তালা মারা থাকত বাসা। কারণ জিজ্ঞেস করলে, উশৃঙ্খল আচরণ করত। গতকালও ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে আসে। এরপর রাত ১১টার দিকে আমাদেরকে কফি খেতে দিয়েছিল।
তার ধারণা, ওই কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশানো থাকতে পারে। যে কারণে তা খাওয়ার পর পরবর্তীতে কী হয়েছে, কিছুই তিনি জানেন না।
তবে পুলিশের ধারণা, ঘুমের ওষুধ মেশানো তরল পানীয় খাওয়ানোর পরই শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। আটক মেহজাবিনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। গতকাল মধ্যরাতের কোনো এক সময় চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাঁদেরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মিলেছে।
এর আগে সকালে মুরাদপুর এলাকার ২৮, লালমিয়া সরকার রোডের ছয় তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে মেহজাবিনের মা মৌসুমী ইসলাম (৪০) বাবা মাসুদ রানা (৫০) ও বোন জান্নাতুলের (২০) লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মেহজাবিন তার বাবা-মা ও বোনকে হত্যা করার পর আজ সকাল ৮টায় ৯৯৯-এ কল করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনার দ্রুত না আসলে আমার স্বামী ও মেয়েকে খুন করে ফেলব।’
পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। আর মেহজাবিনের স্বামী ও সন্তানকে অচেতন অবস্থায় ঢামেকে পাঠায়।
চিত্রদেশ//এফটি//