কানিজ কাদীরের গল্প ‘উপলক্ষে অবকাশ’ (৩য় পর্ব)
বাইশ তারিখ তূর্যের অংক ক্লাস টেস্ট। তাই বিশ তারিখ সন্ধ্যায়ই আফিয়া সবাইকে নিয়ে ফেরার চিন্তা করল। ভাবলো এ সুযোগে আমার ছোটবেলার শহর আমার প্রাণের শহরে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে যাই।তাই সবাইকে নিয়ে রাকিবের বাসায় থেকে পরের দিন শনিবার ঢাকা ফেরার চিন্তা করল আফিয়া। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তূর্য, তপতী,তপতীর বাবা ও আফিয়া গাড়িতে উঠল। ড্রাইভারকে সাবধানে গাড়ী চালাতে বলে ওরা আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দিল। চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে । চারদিকে বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুধু মনে হচ্ছে ওদের গাড়িটা আলো ছড়িয়ে রাস্তা ভেদ করে এগিয়ে যাচ্ছে। দু’একটা বড় বাস ওদের গাড়ি ক্রস করে যাচ্ছে তখন বেশ ভয় লাগছিল। এমন সময় হঠাৎ তপতী বলে উঠলো -ওয়াও! আকাশে কি সুন্দর তারা! তপতীর বাবাও বলে উঠল ‘বাহ্! সত্যিইতো অপূর্ব লাগছে। সত্যিই আকাশের তারাগুলো যেন ফুটে আছে ফুলের মত। মনে হচ্ছিল কালো কোন বিশাল ঢাকনায় সাদা সাদা হাজার হাজার ফুল জ্বলজ্বল করছে। অপূর্ব লাগছিল। তূর্য বলে – ‘বাহ্ মনে হচ্ছে আমরা কোন স্পেস এর ভিতর দিয়ে যাচ্ছি।’ গাড়ি এগিয়ে চলছে ধীরে ধীরে।
রাত ৯টার দিকে ড্রাইভারকে নিয়ে আফিয়া এসে থামলো তার সেই পুরনো বাসাটিতে। যেখানে ছিল তার সেই শৈশব, কৈশোর ও যৌবন। বাসার গেটে এসেই আফিয়ার মনটা যেন খুঁজছিল তার সেই হারানো দিনগুলোকে । কোথায় লুকিয়ে আছে তার সেই সোনালী দিনগুলো। আফিয়ার মনে এ কোন অনুভূতি! দীর্ঘদিন কেটেছে এই বাসায়। অনেক আপন লাগছিল আফিয়ার। ভাই রাকিব অপেক্ষা করছিল ওদের জন্য। গেট পেরিয়ে বাসায় ঢুকলো সবাই। আম গাছ, জাম গাছ, পেয়ারা গাছগুলো অনেক বড় হয়েছে। মাধবী লতার সুগন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করছে। ঘরে ঢুকেই অবাক হয়ে গেল সবাই। সবাই যেন ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। ঘরবাড়ি খুব সুন্দর টিপটপ করে সাজানো। রাকিবকে আগেই ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল আফিয়া।রাকিবের বউ অনেক যত্ন করে নানা পদ দিয়ে খাওয়ালো । সবার জন্যই সুন্দর করে ঘুমের ব্যবস্থা করে রেখেছে ওরা। বিছানায় ঘুমাতে ঘুমাতে এ ঘরটির অনেক স্মৃতি ভেসে উঠলো আফিয়ার মনে। অনেক অনেক বছর কেটেছে এ ঘরে আফিয়ার। শুয়ে শুয়ে আগের সেই খাট, আলমারী, ড্রেসিং টেবিল,শোকেস, টিভি কোথায় কোথায় ছিল তার একটা নকশা আফিয়ার চোখে বারবার ভেসে উঠছিল। আর ফিরে যাচ্ছিল বিশ বছর আগে।কত সুবিধা অসুবিধা নিয়ে স্বপ্নিল ভবিষৎতের স্বপ্ন শুরু হয়েছিল এখান থেকেই । মানুষের যেন চাওয়ার শেষ নেই। অনেক স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে এক সময় গভীর ঘুুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল আফিয়া। (চলবে)