প্রধান সংবাদ

এডিস মশার ঘাঁটি মগবাজার-ইস্কাটন-বাসাবো-গোড়ান

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আট হাজার ৪১ জন। তাদের মধ্যে চলতি মাসের ২২ দিনেই পাঁচ হাজার ৩৮৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। এর মধ্যে জুনে ১২ জন ও আগস্টে (২২ আগস্ট পর্যন্ত) ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উদ্যোগে মৌসুম এডিস সার্ভে ২০২১ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। গত ২৯ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়।

অধিদপ্তরের ২০টি দলের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিদিন জরিপ শেষে ডেঙ্গ শনাক্ত বাড়িগুলোর ঠিকানাসহ প্রাত্যহিক তথ্য সম্পর্কে সিটি করপোরেশনকে অবহিত করা হয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির যথাক্রমে পাঁচটি করে সর্বমোট ১০টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া যায়।

ঢাকা উত্তরের পাঁচটি ওয়ার্ডের মধ্যে মগবাজার, নিউ ইস্কাটনে মশার ঘনত্ব শতকরা ৫৬ দশমিক ৭ ভাগ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নিকুঞ্জে ৪৮ দশমিক ৪ ভাগ, কল্যাণপুর, দারুস সালামে ৪৬ দশমিক ৭ ভাগ, মিরপুর-১০, কাজীপাড়ায় ৪৩ দশমিক ৩ ভাগ, মহাখালী, নিকেতনে ৪০ ভাগ ব্রুটেক্স ইনডেক্স পাওয়া যায়।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণের বাসাবো, গোড়ানে ৭৩ দশমিক ৩ ভাগ, অ্যালিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ৬৬ দশমিক ৭ ভাগ, আর কে মিশন রোড, টিকাটুলিতে ৫০ ভাগ, বনশ্রীতে ৪০ ভাগ, মিন্টো রোড, বেইলি রোডে ৪০ ভাগ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে।

তবে উত্তর সিটির আবতাফনগর ও মেরুল বাড্ডা এবং দক্ষিণে বংশালে ব্রুটো ইনডেক্স শূন্য পাওয়া গেছে।

জরিপ মূলত ব্রুটো ইনডেক্স ও হাউস ইনডেক্সের মাধ্যমে করা হয়। ব্রুটো ইনডেক্সে ১০০ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা ও পূর্ণবয়স্ক মশা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। সেখান থেকে এডিস মশাজনিত রোগ হতে পারে। লার্ভা ও মশা ১০ থেকে ২০ এর মধ্যে থাকলে সেখানে মশার মোটামুটি উপস্থিতি আছে বলে ধরে নেয়া যায়। একইভাবে হাউস ইনডেক্সে মূলত আক্রান্ত বাড়ির সংখ্যাকে ১০০ দিয়ে গুণ করে ওই এলাকার মোট বাড়ি দিয়ে ভাগ করা হয়। সে ক্ষেত্রে তা ১০ এর বেশি হলে মশার ঘনত্ব বেশি হবে।

জরিপে দেখা যায়, ৪১টি এলাকার মধ্যে ২০১৯ সালে উত্তরের ২৪টি এলাকায় মশার ঘনত্ব ব্রুটো ইনডেক্সে ২০ এর ওপরে ছিল, যা এবার ২৬টি এলাকায় পাওয়া গেছে। এ সময় হাউস ইনডেক্সে ২০১৯ সালে ৩০টি এলাকা থাকলেও এবার তা ৩৯টি এলাকায় উন্নীত হয়েছে। এই দুটি ইনডেক্স ২০২০ সালে যথারীতি ৯টি ও ২৯টি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে ৫৯ এলাকার মধ্যে ২০১৯ সালে ব্রুটো ইনডেক্সে ৩৭টিতে মশার ঘনত্ব বেশি ছিল, যা এবার ৩০টি এলাকায় রয়েছে। তবে হাউস ইনডেক্সে ২০১৯ সালে ৪৭টি এলাকা থাকলেও এবার তা ৪৯টিতে উন্নীত হয়েছে। এই দুই ইনডেক্সে ২০২০ সালে যথাক্রমে ১৭টি ও ৩৭টি এলাকা ছিল।

জরিপে আরও দেখা গেছে, মেঝেতে জমানো পানিতে সর্বোচ্চ শতকরা ১৮ দশমিক ৫ ভাগ, প্লাস্টিক ড্রামে ১২ দশমিক ১ ভাগ, প্লাস্টিক বালতিতে শূন্য ৯ দশমিক ৪ ভাগ, ফুলের টব এবং ট্রেতে শূন্য ৭ দশমিক ৫ ভাগ, পরিত্যক্ত গড়ির টায়ারে ৬ দশমিক ৯ ভাগ এবং রঙের কৌটায় ৩ দশমিক ২ ভাগ এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

জরিপে এডিস মশার পজিটিভ কনটেইনারের (পানিতে লার্ভা ও পিউপার উপস্থিতি) শতকরা হার (পজিটিভ প্রজনন স্থান অনুযায়ী) বহুতল ভবনে ৪৪ দশমিক ২ ভাগ, একক ভবনসমূহে ২৫ ভাগ, নির্মাণাধীন ভবনে ১৮ দশমিক ২ ভাগ, বস্তি এলাকায় ৯ দশমিক ৭ ভাগ ও খালি জমিসমূহে ৩ ভাগ।

চিত্রদেশ//এফটি//

Related Articles

Back to top button