‘আধুনিক প্রযুক্তির মেট্রোরেল যেভাবে ধ্বংস করেছে, মানতে পারছি না’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা শহর যানজটে নাকাল থাকলেও মেট্রোরেল স্বস্তি দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই পরিবহন এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯টার পর দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় মেট্রো স্টেশন ঘুরে দেখেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সেজন্য সরকার মেট্রোরেল করেছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেগুলো যারা ধ্বংস করেছে তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাণ্ডবকারীদের বিচার দেশবাসীকেই করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত শুক্রবার বিকেলে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ার মেট্রো স্টেশনে তাণ্ডব চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় সিসি ক্যামেরা, এলইডি মনিটর, টিকিট কাটার মেশিনসহ বিভিন্ন জায়গায়। লুট করা হয় মূল্যবান অনেক জিনিস।
ধ্বংসপ্রাপ্ত স্টেশন দুটি ঠিক করে চালু করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তার আগ পর্যন্ত এই দুটি স্টেশনে ট্রেনের বিরতি ও যাত্রী সুবিধা বন্ধ থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
তাণ্ডবের ছয় দিন পর মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘যেসব স্থাপনা মানুষের জীবনকে সহজ করে সেগুলো ধ্বংস করা কোন ধরনের মানসিকতা। ঢাকা শহর যানজটে নাকাল থাকলেও মেট্রোরেল স্বস্তি দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই পরিবহন এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না।’
সরকারপ্রধান বলেন, মানুষ যেন নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্র পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। দেশ যেন আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে সেই চেষ্টা করা হবে। এ দেশ মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে, সেটা ব্যর্থ হতে পারে না।
এর আগে, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা হয়। ভাঙচুর করা হয় সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা, এলইডি মনিটর, টিকিট কাটার মেশিনসহ বিভিন্ন জায়গায়। লুট করা হয় মূল্যবান অনেক জিনিস। পরে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয়ে কমিটি করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু হতে কমপক্ষে এক বছর লাগতে পারে বলে জানায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। সহিংসতার ঘটনায় মিরপুর ও কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর মামলা করা হবে বলেও জানায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোরেলের ক্ষতি নিরূপণে অতিরিক্ত সচিব মো. জাকারিয়াকে প্রধান করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)-এর কোম্পানি সচিব তরফদার মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হবে মেট্রোরেলে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরকারীদের। এ ঘটনায় কঠিন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে প্রশাসন।
ওই কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, এ দুই মেট্রোস্টেশন পুনর্নির্মাণে প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর লেগে যাবে। সব যন্ত্রপাতি বসানোর পাশাপাশি কারিগরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। মিরপুর-১০ স্টেশনের পুরো ই-সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। এ সিস্টেম পুনরায় চালু করতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে।
তিনি জানান, কাজীপাড়া স্টেশনের ৫০ শতাংশের বেশি ই-সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। এ সিস্টেম পুনরায় স্থাপন করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লাগবে। আর কম্পিউটার, ডিভাইস, পাঞ্চ মেশিন, ভেন্ডিং মেশিনমহ আরও যে সব যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিক করতে প্রায় দুইশো কোটি টাকা লেগে যেতে পারে। সবমিলিয়ে মেট্রোরেলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব আব্দুর রউফ বলেন, এ দুই স্টেশনে শুধু ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নয়। আরও ক্ষতি হয়েছে। যাত্রী পরিবহনে যে আয় হতো, তা কমছে। মিরপুর-১০ স্টেশন সবচেয়ে যাত্রীবহুল স্টেশন।
মেট্রোরেলের কমলাপুর স্টেশন বর্ধিতকরণসহ পুরো প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের জুন মাসে। তাহলে এ প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের মেয়াদ যেন না বাড়ে, সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করা হবে।