নারীরা বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে: মেহেবুব হক
আজ ৮ ই মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। এই দিবসকে ঘিরে প্রতিবছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন হয়ে থাকে , রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন র্যালি , সেমিনার ও কর্মদিবসের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে নানারকম বার্তা দেওয়া হয়। কিন্ত এই বিষয়গুলো আত্মসমালোচনা করলে মনে নানান ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে । একজন মানুষ হিসাবে এই দিবসকে নিয়ে আমার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি রয়েছে , যে অনুভূতির সাগরে আমার মন প্রতিনিয়ত দোলা দেয়, ক্ষণে ক্ষণে অন্তরের অন্তঃস্থলে বেড়ে যায় নারীজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ।
আমরা প্রত্যেকে কোন না কোন নারীর গর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসে আলোর মুখ দেখি। নারীরা যুগে যুগে মাতা, স্ত্রী , কন্যা ও বোন রূপে এগিয়ে নিয়ে চলেছে এই জগত সংসারের চাকা। মহান আল্লাহ্তাআলা কেবল নারীর ভিতরে এমন প্রাকৃতিক শক্তি সাহস ও ধৈর্য দিয়েছেন যা পুরুষকে দেন নি। এই নারীরা ঐশ্বরিক শক্তির ক্ষমতা বলে নিজের ভিতরে একজনকে অমিয়সুধা পান করিয়ে দশ মাস দশ দিন অগণিত কষ্ট দুঃখ ও যন্ত্রণার রাত্রি পার করে অসহ্য প্রসব বেদনা সহ্য করে সন্তানদের দুনিয়ার আলোর মুখ দেখান। যে কাজ পৃথিবীতে অদ্বিতীয় । তারপর এই সন্তানকে সুন্দর করে লালন পালন করে বড় করার জন্য একজন মা যোদ্ধা হিসেবে যে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন, সীমাহীন সংগ্রাম করেন তারও তুলনা পৃথিবীতে নেই, কোনদিন হবেও না।
আমার এই কারনে বরাবরই মনে হয় ঈশ্বরের সৃষ্টি হিসেবে পুরুষের তুলনাই নারীই বেশি পূর্ণাঙ্গ । পুরুষের দৈহিক শক্তি হয়তো বেশি থাকতে পারে ,কিন্ত আত্মিক শক্তি নারীর অনেক বেশি । আজকের পৃথিবীতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সংসার সামলানোসহ বাইরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কাজে অংশগ্রহণ করে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে যে সমস্ত নারীরা শুধুই সংসার সামলান তাদের কর্মঘণ্টাকে অর্থনীতির পরিভাষায় হিসেব করলে দাঁড়ায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা যা বর্তমানে একই সময়ের জাতীয় বাজেটের সমান । নারীর সংসার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এত অবদান থাকা সত্ত্বেও যখন চারিদিকে দেখি নারীর প্রতি সহিংসতা ও জিঘাংসার অপকর্মে সমাজের পরতে পরতে রচিত হয়েছে কালো হায়েনাদের অশুভ থাবা , তখন মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেক আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হলে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় নি বরং অনেকাংশেই বেড়েছে । কারণ সামাজিক জীব হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি না। আমাদের সকলের প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন । এটাকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে প্রত্যেক সংসার থেকেই যাত্রা শুরু করতে হবে । ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টির গুরুত্ব সকলের কাছে তুলে ধরতে হবে। চিন্তায় মগজে ও মননে আনতে হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন যার নির্যাস সঞ্চারিত হবে আগামীদিনের শিশুদের মধ্যে । উন্মুক্ত আকাশের নিচে নারীরা তাদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে নিরাপদে ঘুরবে ফিরবে , তবেই সুখি সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল পৃথিবী বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
লেখক পরিচিতি:
কবি – মোঃ মেহেবুব হক
ডেপুটি কমিশনার (৩০ তম বি সি এস )
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট , ঢাকা।