কানিজ কাদীরের গল্প ‘উপলক্ষে অবকাশ’ (শেষ পর্ব)
সকালের নাস্তা খেয়েই সবাই তৈরি হয়ে নিল। শহরের পরিচিত কয়েকজনের বাসায় বেড়াতে গেল আফিয়া সবাইকে নিয়ে।কত পরিবর্তন সবার। বাড়ী-ঘরের পরিবর্তন। নতুন মানুষের আগমনে পরিবেশ যেন সব পাল্টে গেছে। বয়স্করা অসুস্থায় যেন যুবুথুবু। ওনাদের দেখে মন কষ্টে ভরে গেল আফিয়ার।
এবার সবাই মিলে গেল ওরা নদীর তীরে। গাড়ী থেকে নেমে নদীর পাড়ে সবাই একটু হাঁটল। সেই নদী আর নেই। পানি কমে গেছে। চড় পরে গেছে। দূরে গ্রাম, নদীতের ছোট ছোট নৌকা, নদী তীরের সারি সারি গাছ, কাশফুল,শিমুলের লাল রং মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল। বার বার মনে পড়ছিল আফিয়ার ঐ গানটা-
ও পলাশ ও শিমুল
আমার এ মন কেন রাঙ্গালে
জানি না , জানি না. .. .
আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে।
ফেরার পথে তপতীর বাবা বলল, ”একটা দায়িত্ব আমাকে পালন করে যেতেই হবে।তা হলো,আকবর স্যারকে দেখে যাওয়া।উনি নাকি খুব অসুস্থ। ” আকবর স্যার তপতীর বাবা ও আফিয়া দুজনেরই শিক্ষক ছিলেন। কলেজ পড়াকালীন আকবর স্যার অংক, ফিজিক্স,কেমিস্ট্রি পড়াতেন। তপতীর বাবা ওনার একই এলাকার বলে কোন টাকাই নিতেন না। স্যার আফিয়ার শ্বশুরেরও খুব ভক্ত ছিলেন। তাই স্যারের সাথে তপতীর বাবার সম্পর্কটা ছিল খুবই আপন।
তপতীর বাবা সবাইকে নিয়ে আকবর স্যারের বাসায় গেল।স্যার বিছানায় শুয়ে আছেন। উঠতে পারেন না, সবই বিছানায় করতে হয়। হাতে স্যালাইন দেয়া। বিড়বিড় করে কি যেন বলতে চাচ্ছেন। স্যারকে দেখে কান্না পাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মানুষের শক্তি ও সময় কেমন করে ফুরিয়ে যায়।এই কি সেই আকবর স্যার! কি সুন্দর ফিগার,চেহারা ছিল। সুন্দর থালার মতো মুখটিতে যখন পাানের পিক ঠোঁটের দু’পাশে উপচে যেত, স্যারকে কি সুন্দর লাগত! আর স্যারের অংকের যে মেধা ছিল তা অতুলনীয়। স্যার ছিলেন এক জীবন্ত কম্পিউটার। সব তথ্য জমা থাকত স্যারের ব্রেইনে । স্যার তার জ্ঞান অবলীলায় দান করতেন। কত ছাত্রকে যে উনি বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন। আসলে উনি ওনার জ্ঞান ও মেধাকে অকাতরে বিলিয়ে গেছেন।
স্যারকে দেখে আফিয়ার মনটা এতটাই খারাপ হচ্ছিল যে, এই পৃথিবীর নিষ্ঠুর নিয়মের প্রতি প্রচন্ড রাগ ও কষ্ট হচ্ছিল। সময় এমনি একটা জিনিস যার সাথে কোন কিছুই যেন প্রতিযোগিতা করতে পারে না।আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন সময়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমরা কেউ করতে পারি না। এই মুহূর্তে আফিয়ার একটি কথাই বার বার মনে পড়ছিল- ‘লাইফ ইজ শর্ট, আর্ট ইজ লং’। আরো মনে হচ্ছিল ‘সময়’ একটি আশ্চর্য জিনিস।’সময়’ আমাদের জীবনে কিছু সুন্দর ‘সময়’ উপহার দেয় যা কেবল স্মৃতি নামক একটি শব্দই তৈরি করে আর পৃথিবীর প্রতি আমাদের মায়া আরো বাড়ায়।বার বার কবি গোলাম মোস্তফার কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়ছিল আফিয়ার-
‘এ বিশ্বের সব আমি প্রাণ দিয়ে বাসিয়াছি ভালো।
আকাশ,বাতাস,জল,রবি,শশী,তারকার আলো
সকলেরই সাথে মোর হয়ে গেছে বহু জানাশোনা,
কত কি যে মাখামাখি,কত কিযে মায়া মন্ত্রবোনা।
. . .. .. .চৈতীর বিয়ে উপলক্ষে অবকাশটা একটু
ব্যতিক্রমই হলো। সময় খুবই কম।আগামী কাল অবশ্যই ঢাকা পৌঁছাতে হবে।