প্রধান সংবাদ

হেঁটেই ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস। এরপরও ঈদের ছুটিতে কর্মজীবী মানুষেরা পায়ে হেঁটে, অধিক ভাড়া দিয়ে, পিকআপ ভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে ঢাকা থেকে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন।

ঘরমুখো মানুষের স্রোত ঠেকাতে রাজধানীর আশপাশের প্রবেশদ্বারগুলোতে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। তবে চেকপোস্ট বসিয়েও ঘরমুখো মানুষদের ঠেকানো যাচ্ছে না।

চেকপোস্টে পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে যাত্রীদের নামিয়ে গাড়ি ফেরত পাঠালেও মানুষ কিছুদূর হেঁটে গিয়ে অন্য কোনো ব্যবস্থায় ছুটছেন গ্রামের বাড়িতে। এতে যেমন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, তেমনি করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বুধবার (১২ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী, আমিনবাজার ও হেমায়েতপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক হাজার মানুষ বাড়ি যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজছেন। অধিকাংশ মানুষকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অনেকেই সঠিকভাবে মাস্ক পরেননি। কেউ কেউ আবার কোনো মাস্কই পরেননি।

গাবতলীতে কথা হয় মিজানুর রহমান নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাড়ি গিয়ে মায়ের সঙ্গে ঈদ করব। যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হবে। যতদূর সম্ভব হয় পায়ে হেঁটে যাব, রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক-বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল যাই পাই, তাতে উঠে যাব।

গাবতলী পর্যন্ত বাসে এলেও গাবতলী থেকে হেঁটে হেঁটে বড় বড় ব্যাগ নিয়ে সন্তান-স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আমিনবাজার পর্যন্ত হাঁটছেন সুলাইমান বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘গাবতলীতে বাস থেকে নামিয়ে দিল। এরপর শুনলাম আমিনবাজার গেলে গাড়ি পাওয়া যাবে। গাবতলী থেকে আমিনবাজার রিকশায় যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাড়া দেড়শ টাকা চাওয়ায় বাধ্য হয়ে হেঁটে যাচ্ছি।’

নাজনীন বেগমের এক হাতে খুব ভাড়ি বড় একটি ব্যাগ। অন্য হাতে আরেকটি মাঝারি সাইজের ব্যাগ। গাবতলী থেকে হাঁটা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া। স্বামী মারা গেছে এক বছর আগে। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গ্রামে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এ কারণেই কষ্ট করে বাড়ি যাওয়া।’

এদিকে, মেহেরপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মারুফ হোসেন নামে একজন। তিনি আপাতত ফেরিঘাট পর্যন্ত যেতে ১ হাজার টাকায় একটি মোটরসাইকেল ঠিক করেছেন। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে আবার অন্য কোনো উপায়ে বাকি পথ যাবেন।

এত দীর্ঘপথ মোটরসাইকেলে যেতে ঝুঁকি থাকে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাড়ি যেতেই হবে, যেভাবেই হোক। মোটরসাইকেল বাদে বরং মাইক্রোবাস বা অন্য যানবাহনে করোনার ঝুঁকি বেশি হবে। এ ছাড়া পিকআপ-মাইক্রোবাসে করে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করলেও সেদিকে খেয়াল নেই কারো। যেন বাড়ি ফেরাই সবার শেষ কথা।
মোজাম্মেল নামে একজন নিজ থেকে এসেই জানতে চাইলেন, ‘ভাই কোথায় যাবেন।’ কারণ তিনি বাড়ি ফিরতে প্রাইভেটকার ঠিক করতে চাচ্ছেন। কাউন্টার বন্ধ থাকলেও এখানকার লোকজন প্রয়োজনমতো প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ম্যানেজ করে দিতে পারছেন। কিন্তু খরচ ভাগাভাগি করতে নিজ থেকেই সঙ্গী খুঁজছেন।

তিনি বলেন, ‘বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন গ্রামে থাকেন। বছরে দুইটি ঈদেই সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়। বাড়ি না গেলে ঢাকায় একা একা ঈদ হয় নাকি? সবারই একটা ইচ্ছা থাকে। গাড়ি বন্ধ, তারপরও যেভাবেই হোক বাড়ি যেতেই হবে।’

তাদের মতো এমন হাজারো মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে জীবন বাজি রেখে যেকোনো মূল্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে চান তারা।

চিত্রদেশ//এল//

Related Articles

Back to top button