প্রধান সংবাদ

‘হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হবে মুজিববর্ষের বড় অর্জন’

স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পাশাপাশি সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

সোমবার (২২ মার্চ) প্যারেড স্কয়ারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ষষ্ঠ দিন ছিল। এদিনের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’।

এদিনের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছি। এ দীর্ঘ সময়ে দেশের চেহারা অনেক বদলে গেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে সেই বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার পথে দ্রুত অগ্রসরমান। জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন, বাংলাদেশের স্থল ও সমুদ্রসীমা স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করেছেন। ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে, যা সফলভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার। তারই দেখানো পথে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে হাজারো বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকার ও রাজনৈতিক দল যখন সততা, আন্তরিকতা দিয়ে জনস্বার্থে কাজ করে তখন জাতির উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অন্তরালের বঙ্গবন্ধু আরও বেশি শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এ দেশের জনগণ থাকবে, ততদিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল অপরিসীম। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি বাংলার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন। ঋণী করে গেছেন বাঙালি জাতিকে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন, ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ পালন একটি যথাযথ পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে ইতিহাস। যে ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়া থেকে। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন। কখনো নিজের ও পরিবারের গণ্ডির মধ্যে বাধা পড়েননি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও গেয়েছেন বাংলা, বাঙালি আর বাংলাদেশের জয়গান। ফাঁসির সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হচ্ছে জেনেও বাঙালির স্বাধীনতার লক্ষ্যে তিনি ছিলেন অবিচল ও অনড়। আজীবন বাংলা ও বাঙালিকে ভালোবেসে গেছেন, স্থান করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়।

চিত্রদেশ//এসএইচ//

Related Articles

Back to top button