প্রধান সংবাদশিক্ষা

স্কুল খুলেছে, শিক্ষার্থীদের মনে উচ্ছ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার:
করোনার কারণে কেউ হয়তো গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। কারোও আবার মোবাইল নষ্ট। এরপরও অনলাইনে কথা হয়েছে। তবে দীর্ঘ এ সময়ে প্রিয় বন্ধুটির সঙ্গে খুনসুটি আর না বলা গল্পে শিক্ষার্থীদের মনে জমেছিল কথার পাহাড়। তাই ৫৪৪ দিন পর এটি শুধু স্কুলে ফেরা নয়, এটি ছিল প্রিয় বন্ধুর কাছে এসে হাতটি ধরা। গল্পে গল্পে হারিয়ে যাওয়া। আর বিদ্যাপীঠের জ্ঞানের পরশে আন্দোলিত হওয়া।

দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পা রেখেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে এভাবেই হারিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেই তাদের সবারই চোখে মুখে ছিল খুশির ঝিলিক।

 

রাজধানীর ইস্পাহানি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া আহমেদ বলেন, অনেকদিন পর স্কুলে আসলাম, শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা আর গল্প জমেছে। খুবই ভাল লাগছে।

একই কথা বলেন ইস্পাহানি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতালি রায়। তিনি বলেন, প্রায় ২ বছর পর স্কুলে আসলাম। সব কিছু কেমন যেন নতুনের মতো লাগছে।

ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানান, আজ আমি সত্যিই খুব আনন্দিত স্কুলে আসতে পেরে। আমার খুব ভাল লাগছে। আজিমপুর গভর্মেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুরাইয়া বলেন, সত্যি কথা বলতে আজকের দিনটি সত্যিই মনে রাখার মত। সবচেয়ে মজা লেগেছে স্কুলে বরণ করার বিষয়টি।

 

উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও

সশরীরে পাঠদান অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও। তারা বলছেন, শিক্ষকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বোঝাপড়া। দীর্ঘ দিন পর এটি আবার শুরু হওয়ায় তারা খুবই আনন্দিত।

জানতে চাইলে ইস্পাহানি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাদেকা বেগম বলেন, দীর্ঘ দিন পর সশরীরে পাঠদানে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়ার জন্য আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাস্ক পড়ার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।

একই কথা বলেন ইস্পাহানি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, আজকের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দীর্ঘ দিন পর শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে এসেছে এ এক অন্যরকম অনুভূতি।

 

স্কুলে আবার পাঠদান শুরু হওয়ায় খুশি বড় মগবাজার সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুননাহার বেগমও। তিনি বলেন, শিশুদের কোলাহলে আবার মুখরিত হয়ে উঠল প্রিয় প্রাঙ্গণ। শিক্ষার্থীদের মতো আমারও খুবই ভাল লাগছে।

ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শফিউদ্দিন মিয়া মনে করেন, শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একদমই অচল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমায় দীর্ঘ দিন পর স্কুল খুলল। একটা কথা চির সত্য তা হলো শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একদমই অচল। এই দুইয়ের সমন্বয় না থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যায় না।

শাহনুরী মডেল স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সাইদুর রহমান স্কুল খোলায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। কিন্তু সশরীরে পাঠদান করা সম্ভব হয়নি। আজ আবার আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে অংশ নিতে পারায় আমি খুবই আনন্দিত।

 

আনন্দের সঙ্গে আছে উদ্বেগও

স্কুল প্রাঙ্গণ আবারও মুখরিত চিরচেনা সেই পরিবেশে। যেখানে শিক্ষার্থীরা আবার সশরীরে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন আর শিক্ষকরাও পাঠদান করছেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার চোখে মুখেই ছিল খুশির ঝিলিক। তবে এ আনন্দের সঙ্গে অভিভাবকদের আছে উদ্বেগও। কারণ তারা বলছেন সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে তাদের।

মেয়েকে স্কুলে দিতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী একজন মা। তিনি বলেন, ভাল লাগছে অনেক দিন পর স্কুল খোলায়। কিন্তু মনে এক ধরণের শঙ্কাও আছে। কারণ যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয় তাহলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

একই কথা বলেন ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্ক সরকারের বাবা সুধীর সরকার। তিনি বলেন, স্কুল খোলায় খুশি লাগছে। কিন্তু সরকারের কাছে অনুরোধ যেন স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি রাখা হয় না হলে যুক্তরাষ্ট্রে মতো অবস্থার মুখোমুখি আমাদেরও হতে হবে।

বড় মগবাজার সরকারী প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মৌমিতা রহমানকে নিয়ে এসেছিলেন আতিক রহমান। তিনি বলেন, মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেছি। কিন্তু মনে ভয় হয় যদি স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানা না হয় তাহলে করোনা আক্রান্ত হবার।

 

স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ি

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। এজন্য সরকারে নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যেন মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে না পারে এজন্য শিক্ষকরা নজরদারিও করছেন। তবে স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশিরভাগ স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুপাতে একাধিক ভাগে ভাগ ও তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থী বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইস্পাহানি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে প্রবেশ করতে দেখা যায় সারিবদ্ধ ভাবে স্কুলে প্রবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। সবার মুখে ছিল মাস্ক। প্রবেশ করতেই দায়িত্বপাপ্ত শিক্ষক থার্মোমিটার দিয়ে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা পরিমাপ করছেন।

 

 

চিত্রদেশ//এফটি//

 

Related Articles

Back to top button