চিত্রদেশ

সাংবাদিক রোজিনাকে নিপীড়ন: তারকারাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ

বিনোদন ডেস্ক:
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিপীড়নের নিন্দা ও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে সারা দেশ। বিনোদন অঙ্গনের তারকারাও ঘৃণ্য এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরিচালক থেকে অভিনয়শিল্পী, সুরকার থেকে কণ্ঠশিল্পীরা কঠোর শব্দ-বাক্যে জানিয়েছেন নিন্দা।

গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘বাঘিনী, এই মুহূর্তে তোমার মুক্তি চাই না। তুমি একটি উপলক্ষ মাত্র। তোমার মাধ্যমেই স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী-আমলা ধ্বংস হবে, মাথা উঁচু করে থাকো আর চিৎকার করে গাও “তোমরা বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্বগ্রাস, আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস। সেই ভয়-দেখানো ভূতের মোরা করব সর্বনাশ।’

ভারত ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান লিখেছেন, ‘রোজিনা সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন, সিঁধ কাটতে নয়। দেখতে পেলাম হেনস্তার শিকার হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন। এই আমাদের আচরণ! এই আমাদের সভ্যতা! রোজিনার গলার ওপর চেপে বসা আঙুলগুলো গভীর অর্থময় এক প্রতীকের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে, আঙুলগুলো কোনো ব্যক্তির গলায় নয়, বরং বাংলাদেশের বাক্‌স্বাধীনতার কণ্ঠনালিতে চেপে বসেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই এমন অশুভ একটি ঘটনা আমাদের দেখতে হলো? রোজিনাকে তাঁর পরিবারের কাছে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ তুমি কার? হে রাষ্ট্রতন্ত্র, ধিক্কার তোমায় আজ, একজন বলিষ্ঠ সাংবাদিককে এভাবে হেয় করার জন্য। এই লজ্জার ভার আমাদের সবার। কারণ আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি আজ।’

নাট্যকার মাসুম রেজা লিখেছেন, ‘ওই অতিরিক্ত সচিব আসলে দেশের কণ্ঠ চেপে ধরেছেন। স্বাধীনতার কণ্ঠ চেপে ধরেছেন। কী ভয়াবহ দৃশ্য! সবার আগে রোজিনার জামিন চাই।’

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘করোনার কারণে আমরা যে মুখোশ পরা শুরু করেছি, সেই অভ্যাসটা থাকুক। কিন্তু আসুন, আসল মুখোশটা খুলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। দৃপ্ত কণ্ঠে আওয়াজ তুলি, “রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই”।’

অভিনেত্রী তানভীন সুইটি লিখেছেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নিপীড়ন ও তাঁকে আটকে রাখার তীব্র নিন্দা জানাই। দুর্নীতির অবসান চাই।’
চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের নেতা বেলায়াত হোসেন মামুন লিখেছেন, ‘হাতকড়া থাকার কথা ছিল দুর্বৃত্ত আমলা ও সরকারি কর্মচারীদের হাতে। কিন্তু এই আমলানির্ভর রাজনীতির আমলে তা তো হওয়ার নয়। তাই এই সময়ে যে জবাবদিহি চাইবে, তার ঠিকানা হবে কারাগার। এই দেশের এখন গভীর অসুখের কাল। দেশ অসুস্থ।’

চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘কালকের ঘটনাটার মাঝে একধরনের মাস্তানির ভাব আছে! সাংবাদিক সমাজের উচিত এই বাড়াবাড়ি বা মাস্তানির ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সবার বিচার নিশ্চিত করতে সোচ্চার থাকা এবং রুটিন করে আগামী এক মাস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে আরও বেশি বেশি রিপোর্ট করা! যা তারা থামাতে চেয়েছে, তাকেই আরও জ্বালিয়ে দেওয়াই হবে আসল উত্তর!’

নাট্য নির্মাতা আশফাক নিপুন লিখেছেন, ‘এর মধ্যে যারাই বলছে, বলবে “দেশটাকে শেষ করে দিল আমলারা”, “দেশ তো চালায় আসলে আমলারা”—একদম চোখ বন্ধ করে ধরে নেবেন সব কটা টাউট! দেশে যখন উন্নয়নের নহর বয়ে যায়, তখন কিন্তু কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” পদ্মা সেতুর বেলায় কিন্তু কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” বড় বড় ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের বেলায় কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পা দেওয়ার কারণ হিসেবে কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” শুধু কোনো ঝামেলা পাকলেই রব শুরু হয়ে যায়, এই টাউটদের “দেশ তো চালায় আমলারা, দেশটাকে শেষ করে দিল আমলারা।” দেশ যদি আমলারাই চালায়, দেশটা যদি আমলারাই শেষ করে দেয়, তাহলে ১০০%+ ভোটে নির্বাচিত সরকার আর জনপ্রতিনিধিরা আসলে কী? এই আমলাদের কামলা?’

অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি লিখেছেন, ‘সরকারের চেয়েও কি শক্তিশালী তারা? অসুস্থ লাগছে ভাবতে। অরাজকতার একটা সীমা থাকা দরকার। রোজিনা আপা, আমরা লজ্জিত-দুঃখিত। প্রতিবাদ জানাই, তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চাই এবং সঠিক তদন্তসহ বিচারের জোর দাবি জানাই!’

কণ্ঠশিল্পী বেলাল খান লিখেছেন, ‘সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, রোজিনাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আমলাদের দুর্নীতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে সাহস না করে! রোজিনা ইসলামের জামিন বাতিল, কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই দেশে সৎ সাহসী রিপোর্টারের, অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের জন্য এভাবেই পুরস্কৃত হতে হয়!’

চলচ্চিত্র পরিচালক দীপংকর দীপন লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ সেই কবে লিখে গেছেন, “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।”’

কণ্ঠশিল্পী কোনাল বলেছেন, ‘আমার মা বলেছে, রোজিনাদের কলম কোনো দিন থামবে না! জয় বাংলা!’

অভিনেতা সাজু খাদেম লিখেছেন, ‘মুক্ত সাংবাদিকতা একটা দেশের উন্নয়নের প্রধান শর্ত, যাঁরা বাধা দিচ্ছেন, তাঁরাই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’

অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ লিখেছেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নিপীড়ন ও আটকে রাখার তীব্র নিন্দা জানাই। দুর্নীতির অবসান চাই।’

এ ছাড়া আরও প্রতিবাদ জানিয়েছেন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার, নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, রেদওয়ান রনি, আবু শাহেদ ইমন, দীপু হাজরা, রায়হান জুয়েল, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাম, মেহের আফরোজ শাওন, ভাবনা, ইমন, মৌটুসী বিশ্বাস, সাইফুল রাজ, রাশেদ মামুন অপু, খায়রুল বাসার, ইমতিয়াজ বর্ষন, কণ্ঠশিল্পী এলিটা করিম, মুহিন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ১৮ মে, মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানা থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সিএমএম আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ১৮ মেছবি: সাজিদ হোসেন
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। পরে বেলা ১১টার একটু পরে রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাঁর রিমান্ড নাকচ করেন। রিমান্ড নাকচের পর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

 

 

চিত্রদেশ//এস//

Related Articles

Back to top button