বিনোদন

ফোন পেলেই ছুটে যান ‘বকুল করোনা সাপোর্ট সেন্টারের’ স্বেচ্ছাসেবীরা

খুলনা প্রতিনিধি:
করোনাকালে যখন অধিকাংশ রাজনীতিবিদ ঘরবন্দি, তখন সাবেক এক ছাত্রনেতার উদ্যোগে আক্রান্ত মানুষের সেবায় ছুটছে একঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার যে কোনো সময় ফোন পেলেই অক্সিজেন নিয়ে করোনায় শ্বাসকষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তাদের কাজ।

অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় পৌঁছে দেয়াই নয়, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে তা আক্রান্তদের মুখে সংযুক্ত করে দিয়ে আসেন।

করোনা হটস্পট খুলনায় এই ফ্রি সেবা দিয়ে আসছে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ও গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল।

তিনি সেখানে গড়ে তুলেছেন ‘বকুল করোনা সাপোর্ট সেন্টার’। এই সেন্টারের দুটি অফিস রয়েছে। একটি খালিসপুর থানার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এবং আরেকটি দৌলতপুর থানার মিনাক্ষী সিনেমা হলের সামনে। দুটি অফিসে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে।

সেখানে শুধুমাত্র অক্সিজেন সেবাই নয়, চিকিৎসক এর কাজ থেকে চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় ঔষধসহ আনুষঙ্গিক সব ধরনের সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো দুস্থ ও অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তাও দেয়া হচ্ছে রকিবুল ইসলাম বকুলের পক্ষ থেকে।

করোনাকালে তার ফ্রি চিকিৎসা সেবা ও অক্সিজেন সরবরাহ এবং গরীব-অসহায়দের মাঝে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি স্থানীয় মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিপদের বন্ধু হিসেবে পরিচিতও পেয়েছেন।

১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, তার মায়ের ৭০ এর ওপর বয়স। মায়ের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ছিল। কোথাও অক্সিজেনের সাপোর্ট পাচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় রাত ২টায় বকুল করোনা সেন্টারে ফোন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীরা বাসায় সিলিন্ডার নিয়ে যান। এ রকম সুবিধা পেয়ে তিনি খুব খুশি।

রকিবুল ইসলাম বকুল লেন, সাধারণত দেখা যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার এক জায়গায় রেখে দেয়া হয়। সেখান থেকে যাদের প্রয়োজন তারা নিয়ে যায়। কিন্তু আমরা তা করছি না। আমাদের কর্মীবাহিনী আছে। যাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগছে তারা যে কোনো সময় ফোন করলেই বাসায় তা পৌঁছে দেয়া হয়। শুধু তাই নয় অক্সিজেন মুখে সেট করেও দেয়া হয়। অক্সিজেন মুখে যেভাবে সংযুক্ত করতে হয় তার প্রশিক্ষণ দেয়া আছে আমাদের কর্মীবাহিনীর। তাদের পিপিই, মাস্ক দিয়ে সুরক্ষিত করে পাঠানো হয়। এটা রিস্ক হলেও আমরা তা করছি। আমাদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। যে কেউ ফোন করলেও তাদের কাছে পৌঁছে যাবে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা।

করোনাকালে সাবেক এই ছাত্রনেতার মানবিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নির্বাচনী আসনে (খুলনা-৩) ১৫টি ওয়ার্ড এবং দুইটি ইউনিয়ন রয়েছে। সেখানে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার সাধারণ মানুষকে ত্রাণ দিয়েছেন। তৃতীয় লিঙ্গের তিন’শ জনকে এবং প্রতিবন্ধীদের এক হাজার প্যাকেট ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ঈদের আগে অসহায় ও গরীব মোট আড়াই হাজার লোককে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। তারা যেন ঈদের দিন ভালো থাকতে পারেন। ওই সময়ে দলীয় নেতাকর্মী যারা গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার তাদেরকে নগদ টাকা দিয়েছেন। এটা করা হয়েছে ৫০ জনের ওপর নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারকে। রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার প্যাকেটের বেশি। প্রত্যেক দিন এখনও এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

রকিবুল ইসলাম বকুলের প্রেস সচিব শামসুদ্দিন চৌধুরী সানিম জানান, এখন আমাদের কাছে ১০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এক্ষেত্রে আমরা যেটা করেছি করোনা সাপোর্ট সেন্টারে শুধুমাত্র ফোন দিলেই আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আক্রান্ত রোগীর বাসায় চলে যান। এ সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গত সাত দিনে ১২৫ জনকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রচণ্ড রকম আশাব্যঞ্জক সারা পেয়েছি আমরা।

তিনি বলেন, খুলনা-৩ আসন সিটি করপোরেশনের ভেতরে হলেও এটা শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। এখানে মূলত নিম্ন শ্রেণির মানুষের বসবাস। খুলনার সব আধুনিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক শহরমুখী হওয়ার কারণে এবং মানুষের আর্থিক সংকুলান না থাকার কারণে তারা খুব চাপের মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বকুল করোনা সাপোর্ট সেন্টার থেকে ফ্রি অক্সিজেন সুবিধা এবং ফ্রি ওষুধ, মৌসুমি ফলসহ নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক সুবিধার পাওয়ার কারণে এলাকাবাসী আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছেন।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া গত বছর যখন করোনা প্রকোপ শুরু হয়েছিল তখনই সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ২০০ এর বেশি মসজিদে ১০ হাজারের ওপর মাস্ক এবং স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী যেমন-সাবান স্যানিটাইজার এগুলো বিতরণ করা হয়েছে। তার আগে লিফলেট ও বিলবোর্ডের মাধ্যমে করোনা সম্পর্কে এলাকার মানুষকে সচেতন করেছি। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লার মোড়ে মাড়ে এবং সেখানে ঘনবসতি আছে ও একটু নোংরা যেসব জায়গা সেখানে জীবাণুনাশক স্প্রেও বিতরণ করেছি। সে সময় মাসব্যাপী কর্মসূচি ছিল।

 

চিত্রদেশ//এফটি//

Related Articles

Back to top button