প্রধান সংবাদমুক্তমত

কিছু মুক্ত ভাবনা-“নিজের জন্য ভাবা”

কানিজ কাদীর

আমরা সবাই নানা কাজে ব্যস্ত থাকি সারাদিন। কেউ বা কর্মক্ষেত্রে এত ব্যস্ত যে কখন যে কিভাবে সময় চলে যাচ্ছে  বুঝতেই পারি না।কেউ বা সংসার গোছাতে গোছাতে, সংসারের নানা দায়িত্ব পালন করতে করতে  দিন পার  করে দিচ্ছে। প্রতিটা দিন চলে যাচ্ছে এভাবেই। প্রতিদিন সকাল হচ্ছে, দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে , স্বন্ধ্যা হচ্ছে, রাত গভীর হচ্ছে। সেই একই নিয়মে দিনের পর দিন যে যাচ্ছে চলে। এক ঘেয়েমি, একই রকম। স্নিগ্ধ সকালের হাওয়া, অলস দুপুরের ক্লান্তি, স্বন্ধ্যার আলোর ছ্টা, রাতের গভীরতা অনুধাবন করার সময় যেন কারো নেই। আমরা সবাই ক্লান্ত  মন ও শরীর নিয়ে। এই ক্লান্ত শরীরে আমরা যেন নিজের মনের দিকে খেয়াল করতেই একেবারে ভুলে যাই। অথচ এই নিজের মনকে নিয়ে ভাবা বা নিজেকে নিয়ে ভাবা প্রত্যেকটা মানুষের  জন্য খুব জরুরি।এই নিজের জন্য ভাবা শুধু নিজের জন্য  নয় নিজের অস্তিত্বের জন্য দরকার।নিজেকে যোগ্য পরিশীলিত ও মানানোর জন্য দরকার। নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য দরকার। সমাজের জন্য দরকার। একটা মানুষ যখন নিজের মনকে নিয়ে, নিজের শরীর নিয়ে ভাববে সে হবে অনেক সচেতন পরিবার , সমাজ ও দেশের জন্য। সে তখন নিজের মতামত ও কাজকে নিয়ে আনন্দ পাবে। নিজেকে গুরত্বপূর্ণ ভাববে। আসলে এই নিজেকে নিয়ে ভাবনাটা জীবনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সঠিক সময়ে। জীবনে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করা বা দেরী করা উচিত নয়। কান্নাকাটি
বা চিৎকার করে জীবনের কোন সমাধান হয় না। আমার কিছু হলো না এ ধরনের চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। নিজের মত করে শক্ত একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে কেউ কোন ভাবেই দূর্বল ভাবতে না পারে।
একটু স্বার্থপর মনে হলেও নিজেকে তৈরি করার জন্য এ ভাবনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এই ভাবনা বা সিদ্ধান্তের গুরুত্বটা একদম ছোটবেলা থেকে চেতনায় আনতে পারলে আরও ভালো। তবেই  নিজেকে সমাজে শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত করার ভাবনাটাও নিজের মধ্যে তৈরি হয়। তখন একজন ব্যক্তি নিজের চেষ্টাকে অনেক কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। নিজেকে স্বাবলম্বি হিসেবে তৈরি করতে পারে। যা একটা পরিবারে জন্য অনেক স্বস্তিদায়কও হয়। অনেক সময় নিজেকে নিয়ে ভাবনাটা  একটু দেরিতে জীবনের একটা সময় হয়তো ভাবিয়ে তােলে। তখন ভাবনার প্রতিফলন তেমন করে করা যায় না। তবে নিজের ভাবনাটা অভিজ্ঞতা  হিসাবে কাজে লাগে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। আর মানুষের সব বয়সেই একটা নিজস্ব ভাবনা বা চিন্তাচেতনা থাকে। যা তার একান্ত সময়ে কাজে লাগিয়ে নিজের একাকীত্বের  সঙ্গী করে সময়কে বেশ সুন্দরভাবে উপলব্ধি করতে পারে । তাই জীবনের প্রতিটা  স্তরেই নিজেকে নিয়ে ভাবা যায়, নিজেকে ভালোবাসা যায়, নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করা যায়।

নিজের জন্য ভাবনাটা যখন পরিপূর্ণ রূপ পায় তখন মানুষ খুব তৃপ্তি পায়। আর তখন সে এ পৃথিবীটার রং, রূপ, গন্ধ, বাস্তবতা উপলব্দি করার চেষ্টা করে। আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে অলস, অথর্ব। তার ভাবনার জগৎটা নির্ভর করে অন্যের উপর। এই সমস্ত লোকজন জীবনের অর্থ খোঁজে শুধু খাওয়া আর ঘুমানোর মাঝে। তারা নিজের বোঝা নিজেই হয়ে যায়। নিজেকে নিয়ে ভাবনাটা এক পর্যায়ে শুধু অনুতাপেই পরিণত হয়। সঠিক সময়ে সঠিক ভাবনার প্রতিফলন দিয়ে নিজের জীবনকে মজবুত করে যে সে একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন লোক। তাই সবসময় নিজেকে নিয়ে, নিজের মনকে নিয়ে ভাবতে হবে। নিজের মনকে মজবুত করতে চাইলে  প্রথম আমাদের কাজকে ভালবাসতে হবে। এবং কাজ ও মনের সমন্বয় ঘটিয়েই  এই পৃথিবীর মানুষ ও প্রকৃতিকে বোঝার শক্তি আরও প্রখর হয়ে উঠে।

 

লেখক:কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button