কানিজ কাদীরের ভ্রমণ কাহিনি ‘মাদুরাই’ (পর্ব-১৩)
রিসেপশনে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানলাম- কন্যাকুমারী যেতে ৫ ঘন্টা ও কোদাই-ক্যানেল যেতে ৩ ঘন্টা লাগবে। তা ছাড়া কন্যাকুমারী যেতে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মত লাগবে। আর কোদাই-ক্যানেল যেতে তিন হাজার তিন শত টাকা লাগবে। ওরাই গাড়ি ঠিক করে দেবে। ভাবলাম আমরা অতদূর কন্যাকুমারীতে আর যাব না । তাই ঠিক করলাম কোদাই-ক্যানেলই ঘুরে আসি। ১৭ নভেম্বর, রবিবার সকাল ৮টায় গাড়ি চলে আসলো। আমরা তৈরি হয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ির ড্রাইভার খুব এক্সপার্ট।ভালো ইংরেজী বলতে পারে। খুব ভালো ড্রাইভ করে নিয়ে গেল। রাস্তার দু’ধার দেখতে দেখতে গেলাম।
দু’দিকে পাহাড়, গাছপালা খুব সুন্দর লাগছিল। ক্যামেরায় কিছু ছবি তুললাম । পাহাড়ের পাশ ঘেষে সুন্দর রাস্তা একেবেঁকে উপরে উঠেছে। একপাশে উচু পাহাড়। আর একপাশে খালি। কিন্তু ওরা উচুঁ করে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। রাস্তা ভাল আর ড্রাইভার এক্সপার্ট হওয়াতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম না। তবুও ড্রাইভারকে সাবধান হতে বললাম। দূরের পাহাড়ের অপার বিশালতা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। প্রকৃতি এত সুন্দর! কোথাও ধোয়া ধোয়া কুয়াশা দেখছিলাম। কোথাও ছোট ছোট ঝরনা দেখছিলাম। পাহাড়ের কোলে তেমন কোন ঘরবাড়ি নাই।আমরা যখন একেবারে পাহাড়ের উপরে উঠছিলাম কানের ভেতর শব্দ হচ্ছিল । উপরে উঠতেই দেখলাম বেশ কিছু ঘরবাড়ি, জনপদ, দোকান পাট। কোদাই ক্যানেল এসে পৌছাঁর আগেই চারিদিকে বেশ কুয়াশা দেখতে পেলাম। ড্রাইভারকে বললাম ”চারিদিক একরকম অন্ধকার হয়ে গেল কেন।” কিছুইতো দেখা যাচ্ছে না। ” ড্রাইভার বললো ”এখানে অক্টােবর থেকে ডিসেম্বর মাস বর্ষাকাল, তাই মাঝে মাঝে এরকম ফগি ওয়েদার হয়।”ড্রাইভার সামনের লাইট জ্বালিয়েই গাড়ি চালাচ্ছিল। তবু কুয়াশায় সামনে সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছিল। আমরা একটু ভয় পাচ্ছিলাম। কুয়াশার মধ্যেই গাড়ি থামলো এক জায়গায়। ড্রাইভার বেশ বড় একটা ঝরনার কাছে এনে গাড়ি থামালো। ঝরনাটির নাম সিলভার ক্যাসেল। কুয়াশার জন্য আমরা ভাল করে দেখতে পারছিলাম না। ছবি তুললাম কিন্তু খুব ভাল আসলো না। আবার রওনা দিলাম। কোদাই ক্যানেল যেয়ে পৌছাঁলাম। দেখলাম বেশ ঘরবাড়ি, রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ড্রাইভার আমাদের এমন জায়গায় নামালো যে সেখান থেকে টিকিট করে ঢুকে পায়ে হেঁটে বেশ খানিকটা দূরে সাইটিং স্পটে যেতে হয়।তারপর ঘুরে আরেক পথে হেঁটে এসে গাড়িতে উঠতে হবে। আমরা যখন গাড়ি থেকে নামলাম প্রচন্ড কুয়াশা। বেশ শীতও লাগছিল। আমরা প্রচন্ড বাতাস ও ঠান্ডার মধ্যেই ভিতরে ঢুকলাম। এর আগে অবশ্য একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরে খাবার খেয়ে নিয়েছি।আমরা ভিতরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বাতাস ও কুয়াশায় একেবারে ভিজে যাচ্ছিলাম। ঠান্ডায় একেবারে কুকরে্ যাচ্ছিলাম। (চলবে)