গল্প-কবিতাপ্রধান সংবাদ

কানিজ কাদীরের ছোট গল্প ‘ করোনাময় দিনগুলি’ (৪র্থ পর্ব)

কিছুক্ষণ পর ডা: মোনায়েম জানালেন আমাদের জন্য ডা: জিয়া ল্যাবএইডে একটা কেবিন ম্যানেজ করেছে। আমাদেরকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বললো। কারণ সিট এর খুবই সংকট। ডাক্তার সাহেবকে নিয়ে সব গোছগাছ করে আমি ও নাসিফ বের হলাম। বাসায় তিজী, নোমান, নাবিহা রইল। বাবুল ড্রাইভার আমাদেরকে ল্যাবএইডের ইমার্জেন্সীতে নিয়ে এলো। আমরা ইমার্জেন্সী গেট দিয়ে ঢুকলাম। ইমার্জেন্সীতে ডাক্তার সাহেবের সবকিছু চেকআপ করে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। আমি অগ্রিম বিশ হাজার টাকা দিয়ে কেবিন নং ৫০৩ এ ডাক্তার সাহেবকে ভর্তি করালাম। কিন্তু ডাক্তার সাহেব আমার উপর খুব বিরক্ত হচ্ছিলেন ভর্তি হওয়ায় নাকি কোন দরকার ছিল না। সেন্ট্রালে ভর্তি হলেই পারতাম। আমি ওর আচরণে খুব অবাক হচ্ছিলাম। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। ‘যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর’। উনাকে নিয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে আমিও নাসিফ কেবিনে আসলাম। কেবিনে এসে দেখলাম একটা বেড ও একপাশে লম্বা একটি ডিভান সোফা আছে। বুঝলাম আমাকে এই ডিভানেই শুতে হবে। আমারও তো করোনা পজিটিভ, শরীরটা আমারও খারাপ। নাসিফ আমাদের সাথেই থাকল বেশ অনেকক্ষণ। ডা: নূর মুহাম্মদ স্যারের আন্ডারে ভর্তি হয়েছি। অনেকেই ফোন দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ডাক্তার সাহেবের চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে। জুনিয়র ডাক্তার নার্স সবাই দেখলাম বেশ তৎপর। ডাক্তার সাহেবের শরীরে জ্বর ছিল। জ্বর একটু কমছিল কারন বাসা থেকে দুইটা নাপা খাইয়ে এনেছিলাম। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে কিছুক্ষণ অক্সিজেন দিয়ে এনেছিলাম। উনি বারবার অনেক বিরক্ত হয়ে বকাবকি করছিলেন । তারঁ চিকিৎসা নাকি বাসায়ই হতে পারতো। হাসপাতাল থেকে ভাল খাবারই দিচ্ছে। আমাদের মুখে কোন রুচি ছিল না। নাসিফ আমাদের বাইরে থেকে ঝাল খাবার এনে দিল। নাসিফ বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেল। ইতিমধ্যে ডাক্তার সাহেবকে ওষুধ প্রয়োগ করা শুরু হয়ে গেছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২-৯৩-৯৪% এ উঠানামা করছিল। অক্সিজেন চলছিল মাস্ক দিয়ে। রাত বাড়ছিল। আমি ডিভানে কোন রকমে কাত হয়ে শুয়ে রইলাম। ইতিমধ্যে একটা কারণে আমার মনটা এতটা খারাপ হয়ে গেল যে ওর প্রতি আমার মন থেকে শুধুই প্রচন্ড রাগ ও কষ্ট হচ্ছিল। কি, এসব। রাত বাড়ছিল। ওর জ্বর দেখলাম বাড়ছে। ও ঘুমে অচেতন। কিন্তু ঘুমের মধ্যেই খুব অস্থিরতা কাজ করছে মনে হচ্ছিল। আমি কয়েকবার উঠে ওর কাছে গেলাম। ওকে মনে হচ্ছিল মরার মত পড়ে আছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও প্রায় অচেতনের মত একটু মুখ হা করে শুয়ে আছে। ওর জ্বীহবাটা মুখের একেবারে ভিতরের দিকে পড়ে আছে ঠিক মৃত মানুষের মত। ওর মুখে শুধু মনে হচ্ছিল চিকন নাকের শিরদাড়াটাই দেখা যাচ্ছিল। আমি উনাকে ‘এই এই বলে ডাকলাম। উনি শুধু উহ্ আহ্ করে পাশ ফিরে শুলেন। (চলবে)

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button