কানিজ কাদীরের ছোটগল্প ‘করোনময় দিনগুলো’ (৫ম পর্ব)
আমি ডাক্তার সাহেবের আঙ্গুল চেক করলাম। দেখি আঙ্গুলগুলোর চামড়া কুচকানো। আঙ্গুলগুলোর মাথা কালো হয়ে আছে। নখগুলো সব সাদা হয়ে আছে। (মানে অক্সিজেন সেখানে পৌঁছে না। )। এর আগে নাসিফকেও তার বাবার আঙ্গুলগুলো দেখিয়েছি। আমি পালস্ অক্সিমিটার দিয়ে স্যাচুরেশন দেখলাম, দেখি অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯১%,৮৭, ৯০% ৮৮% এ উঠানামা করছে। আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম। দৌঁড়ে বাইরে যেয়ে ডাক্তার ডাকলাম।ডাক্তার চলে আসলো উনার অক্সিজেন বাড়িয়ে দিয়ে৮-১০ লিটার করে দিল। ইতিমধ্যে উনার লুজমোশনও হয়েছিল কয়েকবার। আমি আমার কাছে থাকা ওর স্যালাইন গুলে কয়েকবার খাইয়ে দিয়েছি। ডাক্তারকে সেটাও বললাম। ডাক্তার এপ্রিশিয়েট করলেন। ডাক্তার বললেন উনার সি.টি স্ক্যান রিপোর্ট দেখলাম প্রায় ৫০% এফেক্টেড। ডাক্তার সাহেব বাথরুমে গেলেন।আবার এসে শুয়ে পড়লেন। আমি ডিভানে কাত হয়ে শুয়ে রইলাম। সারারাত কোন ঘুম এলো না। রাতে এশার নামাযে ‘আল্লাহর কাছে কেদেঁছি।’ অনেক দোয়া করেছি।সকালে উঠে ফযরের নামায পড়লাম।সকালে ডাক্তার সাহেব বললেন, ‘ওষুধগুলো মনে হয় বেশ কাজে দিসে। এখন বেশ ভালো লাগতেছে’ ।আমি বেশ স্বস্তি পেলাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালাম। ১২ তারিখ(জুলাই’২১) রাতটা ছিল খুব টেনশনের। কারণ ডাক্তার সাহেবের অবস্থাটা মোটেও ভাল ছিল না। আমি মানসিকভাবে খুব আপসেট হয়ে গিয়েছিলাম। একবার সে বলেই বসলো ‘আমি বোধহয় বাচঁবো না।’ যাক, ১৩ তারিখ সকালে আবার আশা ফিরে পেলাম।
নাসিফ প্রতিদিন হাসপাতালে যায় বিকালের দিকে । বাসা থেকে যা যা প্রয়োজন নিয়ে যায়। আবার হাসপাতাল থেকে কিছু জিনিস বাসায় নিয়ে আসে। হাসাপাতালে যাবার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে আমার জন্য স্যুপ, ফ্রাই (চিকেন) এসব নিয়ে যায়।আমার মুখে তেমন রুচি নাই। হাসপাতালের খাবার বেশ ভাল। বাসা থেকেও কোন খাবার আনতে হয় না। এখন খাবারে একটু একটু গন্ধ পাচ্ছি। কিন্তু কোন স্বাদ নেই। নাসিফ বিকালে যেয়ে আমাকে ঘুমানোর সুযোগ দেয়। আমার পাশে বসে থাকে। বাবাকে নানা কাজে সাহায্যে করে। ওর দায়িত্ববোধ দেখলে খুব ভালো লাগে। পরদিন ডা: নোমানও (মেয়ের জামাই) চেম্বারে যাবার আগে নাসিফের সাথে হাসপাতালে আসে। এদিকে আত্মীয় স্বজন অনেকেই ফোন করে খোজঁ নিচ্ছে। ডা: সালেহা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিয়েছে। তিজী (আমার মেয়ে) ও ডা: নোমান(মেয়ের জামা্ই) ও ফোন দিয়ে আমাদের খোজঁ নিচ্ছে।(চলবে)