গল্প-কবিতাপ্রধান সংবাদ

কানিজ কাদীরের ছোট গল্প- করোনাময় দিনগুলি (৩য় পর্ব)

৯ জুলাই রাতে আমি বারবার উনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখছিলাম। উনাকে ইনহেলার নিতে বললাম। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪-৯৫% জোরে শ্বাস নিলে ৯৬% হচ্ছিল। জ্বর ছিল না। উনার স্যাচুরেশন নিয়ে আমি বেশ চিন্তায় ছিলাম। এদিকে দু’জনের মুখেই কোন রুচি নাই।সবই স্বাদ-গন্ধহীন লাগছিল। আমি বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার আনার চিন্তা করছিলাম, যদি স্যাচুরেশন কমে যায় আরও। ডাক্তার সাহেব সেন্ট্রাল ইন্ট্রালন্যাশনাল (শ্যামলী) হাসপাতালে ম্যানেজার নাজমুলকে বলে রাখলো যদি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে যেন একটা ব্যবস্থা রাখে।নাজমুল আশ্বাস দিল ‘স্যার কোন অসুবিধা হবে না”।১০ জুলাই শনিবার । বারবার কিছুক্ষণ পর পর স্যাচুরেশন দেখছিলাম ৯৫-৯৬% ছিল। বিকালে দেখি প্যান্ট-শার্ট পরছে। আমি অবাক হয়ে বললাম ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ সে বললো’ চেম্বারে’। আমি বললাম ”এই শরীরে তুমি চেম্বার যাবে কেন”? তাছাড়া তুমি তো এই রোগ ছড়াবে ‘। তাঁর আকাঠ্য যুক্তি ” আমারতো লোকজনের কাছে থেকেই আসছে। তাছাড়া একটু ঘুরে আসলে ভাল লাগবে”। সে আমার কোন যুক্তিই শুনলো না । চলে গেল। ঘন্টা দুই পর ড্রাইভার বাবুল আমাকে ফোন দিল ‘ম্যাডাম স্যারের কি শরীর খারাপ? কেমন জানি লাগতেছে স্যারকে? বাবুল অসুখের ব্যাপারটা জানতো না। ‘ আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। বাবুলকে বারবার ফোন দিয়ে খোজঁ রাখার জন্য বলছিলাম। শুধু ভাবছিলাম রাস্তায় যদি রেসপিরেটরী ডিসট্রেস (শ্বাসকষ্ট) শুরু হয় কি উপায় হবে। উনি চেম্বার শেষ করে বেশ রাতেই বাসায় এলো।আমি ফোন দিয়ে জানলাম উনাকে নাকি বাবুল ধরে ধরে গাড়ীতে তুলেছে। আমার প্রচন্ড টেনশন, রাগ ও কষ্ট হচ্ছিল। এই অসম্ভব রকমের অবুঝ লোকটার জন্য। একটা রোগীর ইমার্জেন্সী চিকিৎসা ছিল তাই সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেম্বারে চলে গেল। চেম্বারে উনি অনেক প্রোটেকশন নিয়ে রোগী দেখতো তারপরও তো উনার করোনা হয়ে গেল।

১০ তারিখ রাতে তাঁর আবার বেশ জ্বর এসে গেল। উনি প্রফেসর মোফাখখারকে ফোন দিয়ে ট্যাবলেট শুরু করলো। আমি খুব টেনশন করছিলাম তাঁর সেকেন্ডারী ইনফেকশন নিয়ে । তাঁর কাঁশিও বেশ বেড়ে গেল। প্রফেসর মোফাখ্খার উনাকে বিভিন্ন টেস্ট ও এক্সরে করাতে পরামর্শ দিল। উনি ১১ তারিখ সকাল ১০-১১টা দিকে হাসপাতালে গিয়ে সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য ইনভেস্টিগেশন করে আসলো। উনার কাঁশি বেশি হচ্ছিল, জ্বর বেড়ে যাচ্ছিল, বেশ অস্থির মনে হচ্ছিল। আমি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করার জন্য আরও সিরিয়াস হচ্ছিলাম। এক জায়াগায় ফোন দিলাম। তারা বাসায় সিলিন্ডার পৌঁছে দেবে বললাে। আমি লাগলে জানাবো বলে রাখলাম। এদিকে উনার স্যাচুরেশন ৯৪-৯৫% হচ্ছিল।, মাঝে মাঝে আরও কমে ৯২-৯৩% হচ্ছিল। আমি খুব অস্থির হয়ে গেলাম । না, আর বোধহয় বাসায় রাখা যাবে না।১২ তারিখ সকালে আমি আমার ক্লাসমেট প্রফেসর মোফাখ্খার কে নিজে ফোন দিলাম। সার্বিক অবস্থা জানালাম। উনি আমাকে বললো স্যাচুরেশন ৯৪% এর নীচে গেলে আর বাসায় রাখা ঠিক হবে না। হাসপাতালে ভর্তি করে দাও । আমি খুব রেস্টলেস হয়ে গেলাম । প্রফেসর ডা: শহীদুল্লাহ চান্দু ভাইকে ফোন দিলাম। উনি করোনা উপদেষ্ঠা কমিটিতে আছেন।ডাক্তার সাহেবের ক্লাসমেটও। উনি অবশ্য বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে খোজঁ নিয়েছেন। আমি শহীদুল্লাহ চান্দু ভাইকে ফোন দিলাম। বললাম ডাক্তার সাহেবকে পি.জি তে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিতে। উনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন । অন্যান্য জায়গায়ও খোজঁ নিতে বললেন। আমাদের খবর রাখার জন্য বলে ফোন রাখলাম। আমি ডাক্তার সাহেবকে বললাম ”তোমার সোসাইটতে লোকজনদের বলো তোমার ভর্তির ব্যবস্থা করতে। এ অবস্থায় আমি কিছুতেই বাসায় রাখবো না। ডাক্তার সাহেব ডা: মোনায়েম কে ফোন দিয়ে জানালো ও ভর্তির ব্যবস্থা করতে বললে। গ্রিনলাইফ হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করবে বললেন। আর তৈরি থাকতে বললেন।গ্রীণলাইফে সিট নাই ।আমরা তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছি। ইতিমধ্যে আমি বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেছি। একটি ছেলে দৈনিক খরচ হিসেবে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে যায়। ডাক্তার সাহেবের শরীরে জ্বর ছিল।তাকে ২টা প্যারাসিটামল দিলাম। নাকে অক্সিজেন দিলাম। উনি বেশ আরাম বোধ করছিলেন।(চলবে)

 

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button