গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের গল্প ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’ (শেষ পর্ব)

জনপ্রিয় লেখক কানিজ কাদীর এর বন্ধুত্ব নিয়ে হৃদয় ছোঁয়া গল্প ‌‌’ফ্ল্যাশ ব্যাক’ পড়তে চোখ রাখুন ‘চিত্রদেশ’ এর সাহিত্য পাতায়।

পাঠকদের জন্য আজ রইল গল্পটির- শেষ পর্ব

 

নাসিমা লিখেছে ‘প্রিয় রাবু’, তোমার কথা আমার খুব মনে পড়ে। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। পড়াশুনাটা আর করতে পারলাম না। জানো, গত রাতে আমি তােমারে স্বপ্নে দেখেছি। দেখছি আমরা পরীক্ষা দিতেছি। আমি কিছুই লিখতে পারতেছি না। আর তুমি হন্ হন্ করে সব লিখতেছ। আমি তোমার কাছে সাহায্য চাইলাম। তুমি আমারে একটুও দেখাইলা না। সত্যি তোমরা লেখাপড়া শিখে কত বড় হবে। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল। আমার জন্য দোয়া করো । খালাম্মাকে সালাম দিও । ইতি-নাসিমা। চিঠিটা পড়ে রেবেকা খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন।

ডা.রেবেকা আবারো বাস্তবে ফিরে এলেন। নাসিমার অবস্থা দেখে ওর চোখে পানি চলে এলো। নাসিমার খোজঁখবর নিলেন। ওর অনেকগুলো ছেলেমেয়ে হয়েছে।চেহেরা নষ্ট হয়ে গেছে।স্বামী ছোটখাটো ব্যবসা করেন।স্বামীর অবস্থা খুব বেশি স্বচ্ছল না।শিক্ষা, সচেতনার অভাবে ও অবহেলায় ওর শরীর স্বাস্থ্য দিন দিন ভেঙে পড়েছে। সুশিক্ষা একজন নারীকে আত্নসচেতন, আত্মনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল হতে শেখায়। রেবেকা নাসিমার জন্য একটা ভালো কেবিনের ব্যবস্থা করে দেন। অগ্রিম দশদিনের টাকাও জমা দিয়ে দেন। সব ডাক্তার, নার্সদের বলে দেন নাসিমাকে খেয়াল রাখার জন্য।

ডা: রেবেকার মনটা এমনিতেই স্পর্শকাতর। নাসিমার এই অবস্থা দেখে ওনার মনটা আরও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। সারাদিন তো কত রকমের রোগীদের সাথে কথা হয়। কিন্তু আজ এমন লাগছে কেন? মনের গভীরে নাসিমার জন্য একটা কষ্টবোধ কাজ করছে। সারাদিন নাসিমার কথাই ভাবছিল রেবেকা। আজ রেবেকা কোথায় আর নাসিমা কোথায় ! এতদিন পর নাসিমাকে না দেখলে হয়তো মনের ভিতরে এই অনুভূতিগুলো এত কাজ করতো না। রাতে স্বামী রায়হানকে নাসিমার কথা বললেন। ছেলেকে বললেন ‘জানো আমার প্রাইমারী স্কুলের এক বান্ধবী আমার হাসপাতালে ভর্তি। নাসিমার অবস্থার কথা ও ওর সাথে ছোট বেলার নানা ঘটনার কথাও বললেন।

রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। রেবেকা আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠলেন। আলমারীর চাবিটা নিয়ে আলমারী খুললেন। পুরনো যে ফাইলে সবার চিঠিগুলো রেখেছিলেন সেটা খুললেন রেবেকা। খুঁজে খুঁজে বের করলেন সেই কচি ভাঙা ভাঙা হাতের লেখায় নাসিমার চিঠিটা।
চিঠিটা ভাঁজে ভাঁজে থাকতে থাকতে কিছুটা ছিড়েঁ গেছে। রেবেকা চিঠিটা খুললেন। বার বার পড়লেন ‘তোমরা লেখাপড়া শিখে কত বড় হবে, আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল। সত্যিই নাসিমার মত কত শত শত মেয়ের সুযোগ ও যত্নের অভাবে অকালে সব স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়। জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ধুকে ধুকে মরতে হয়। রেবেকা চিঠিটা বার বার পড়ছিল আর ফিরে যাচ্ছিল সুদূর অতীতে যেখানে শুধু ছিল হাসি, আনন্দ, স্বপ্ন।

ফেব্রুয়ারি,২০০৯

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button