গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের গল্প ‘এমনও তো হতে পারে’ (৪র্থ ও শেষ পর্ব)

কানিজ কাদীরের গল্প ‘এমনও তো হতে পারে’ পড়তে চোখ রাখুন ‘চিত্রদেশ’ এর সাহিত্য পাতায়। পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রদেশে। আজ রইল গল্পটির (৪র্থ ও শেষ পর্ব)

ঈদ পার হয়ে গেল। শোভনের স্কুলও খুলে গেছে। বরাবরের মতো শোভন গাড়িতে মা’র সাথে স্কুলে যায়। মিসেস আতিয়া আবারো রাজু, হীরার জামা দুটো গাড়িতে নিয়ে রাখল। যদি ওদের পায় দিয়ে দেবে।
বেশ কয়েকদিন পর শোভন ও মিসেস আতিয়া রাজুকে দেখে চমকে গেল। রাজু এসে গাড়ির কাছে দাঁড়াল। হাতে ফুল আছে ঠিকই। কিন্তু খুবই উস্কুখুস্কু অবস্থা। নির্বাক চেহারা। শোভন রাজুকে দেখেই বলে উঠল, ‘কিরে কই ছিলি এতদিন। তোর বােন কই। এই নে তোদের দুজনের জন্য দুটো জামা আছে।’ রাজু হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, ‘আল্লাগো, এই জামা দিয়া আমি কি করমু। ঈদের দিন নতুন জামা পিন্দনের খুব সখ অইছিল বইনডার। হেইডা আর অইল না। বস্তির খালা আমার বইনরে হাসপাতালে ভর্তি করছিল। কিন্তু মেলা পরে। জ্বরের গোরে বইনডা আমার কাতরাইছে আর নতুন জামা গায় দিব কইছে। নতুন জামা করতে করতেই আমার বইনডা মইরা গেল।’ রাজু ভাবছে, কি সুন্দর জামা, এইডা গায় দিলে বইনডারে আমার কত সুন্দর লাগত, বহু সুন্দর ঈদ হইত। ওর চোখের সামনে ভেসে আসছে হীরা লাল টুকটুকে নতুন জামা পরে খুশিতে লাফাচ্ছে। মিসেস তাহিরা ভাবে- ‘দুই শত টাকার একটা ফ্রক একটা বাচ্চা মেয়েকে কতটা আনন্দ দিতে পারত। আনন্দ আর ঈদ তো সবার জন্যই। এরকম চিন্তাই করছিল মিসেস আতিয়া তাহিরা ——–। না তা হয়নি।

এমনটাই হয়েছিল অবশেষে-শোভন রাজুকে দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠল, ‘মা, ঐ যে দেখ রাজু।’ রাজু ফুল নিয়ে গাড়ির কাছে এলো। সাথে বোন হীরাও আছে। তবে পরনে জরাজীর্ণ কাপড়’ মিসেস আতিয়া সিগনালে গাড়ি থামাতেই দুটি জামা বের করে রাজুকে দিয়ে বলল, এই নে তােদের জন্য ঈদে কিনেছিলাম। রাজু যেন ছো মেরে কাপড় দুটো নিয়ে নিল। খুশিতে আটখানা হয়ে শার্টটা নিজে পড়ল আর হীরাকে ফ্রকটি পরিয়ে দিল। হীরা তো জামা পড়ে আনন্দে ফ্রক ধরে লাফাচ্ছিল ।রাজু বলল, ‘কাপড়গুলো ঈদে পাইলে আরো ভালো লাগত। বইন তুই খুশি হইছিস? ‘হ‌্যাঁ, ভাইজান, আমার খুবই আনন্দ লাগতাছে।’
সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। মিসেস আতিয়া রাজু ও হীরার খুশিতে দেখতে পেলে হাজার খুশির আনন্দ। একটা তৃপ্তি আর অতৃপ্তির দোলায় দুলে উঠল তার মন। দুইটা শিশুর সাময়িক আনন্দ তার মন ভরে গেল ঠিকই কিন্তু ভাবল এমনি কত না হাজার শিশু রয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে, পথে ঘাটে। আমরা কিইবা করছি এইসব শিশুদের জন্য। ২০০০ সালে জাতিসংঘের মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের (এমডিজি) লক্ষ্য অর্জন ছিল শিশুদের জন্য ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণ ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণ। বিশ্বের এই উন্নতির লক্ষ্যে ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে চতুর্থ টি হলো শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা। বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে কিছু্টা এগিয়ে গেলেও এখনো আমাদের দেশে শিশুমৃত্যুর হার অনেক। বাংলাদেশের শিশুরা প্রাইমারী শিক্ষায় অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তবে এসব পথশিশুর বেশিরভাগই বাবা -মা হারা। বাসস্থান, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব অনেক অনেক বেশিই রয়ে গেছে। সরকার ও সমাজের সচেতনতা এসব শিশুর অশিক্ষা, কুশিক্ষা থেকে অনেকখানি রক্ষা করতে পারে। শিশুদের নিরাপদ আবাস, বাবা-মা’র নিবিড় সান্নিধ্য শিশুদের জীবনকে করুক বিকশিত । অনেকখানি গভীর ভাবনায় চলে গিয়েছিল আতিয়া তাহিরা। স্কুলের কাছে এসেই শোভন ডাকল। ‘মা, আসি।’ ছেলেকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে মা বলল – ‘যাও’।

২০ নভেম্বর ২০১০,বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে লেখা- ‘টুকরো কথা’


লেখক: কানিজ কাদীর

 

Related Articles

Back to top button