প্রধান সংবাদ

এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দেওয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাগবে কম দামে পণ্য কিনতে আরও এক কোটি লোককে বিশেষ কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা টার্গেট করেছি ১ কোটি মানুষকে আমরা স্পেশাল কার্ড দেবো। যেটা দিয়ে তারা ন্যায্যমূল্যে জিনিস কিনতে পারবে। যে ৩৮ লাখকে আমরা টাকা দিচ্ছি তারা তো থাকবে, তার বাইরেও আরও এক কোটি লোককে দেবো। তাছাড়া ৫০ লাখ লোককে একটা কার্ড দেওয়া আছে সেটা থেকে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থা করা আছে।

সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখনও ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে আমাদের। সেখানে কোনও অসুবিধা নেই।

ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারো এত টুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে। যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করেন। প্রত্যেক এলাকায় কিছু না কিছু উৎপাদন হবেই। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।

ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তেল নিয়ে যে সমস্যা সেটা নিয়ে কালকেও মিটিং করেছি ভার্চুয়ালি। সেখানে আমি বলে দিয়েছি একটা টাস্কফোর্স করা। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। আর প্রত্যেকটা জায়গায় খোঁজ নেওয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ দাম আন্তর্জাতিক বাজারে খুব বেড়ে গেছে, যেমন আমাদের বেশির ভাগ সয়াবিন তেল আসে ব্রাজিল থেকে। আর পাম ওয়েলটা আসে মালয়েশিয়া থেকে। তো এই যুদ্ধের কারণে যাতায়াত খরচ, অতিরিক্ত কার্গো ভাড়া বেড়ে গেছে। আনতে অসুবিধা। এই সমস্ত সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের মজুদ যেটুকু আছে বা এখানে যেটা হচ্ছে সেটা আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কেউ কোনো রকম কিছু করছে কিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হয়, দাম বাড়তে দেখলে সবাই মজুদ করে, সে বিষয়গুলো আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বেড়ে যায় তখন খুব বেশি তো আর আমাদের করার থাকে না। কিছু তো কমপ্রোমাইজ আমাদের করতে হয়। কিন্তু রোজার সময় যাতে অন্তত দ্রব্যমূল্য (সহনীয়) থাকে।

ভোজ্য তেলে বাংলাদেশ এখনো ৯০ ভাগই পরনির্ভরশীল জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, খালি ভোজ্য তেলের ব্যাপারে এখনো আমরা ৯০ ভাগই নির্ভরশীল, পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি। সেটাও আমি বলছি যে আমাদের অবশ্য রিসোর্স ইন্সটিটিউট বারি থেকে কয়েকটা বীজ আবিষ্কার করেছে। খুব ভালো উৎপাদন হবে। ভবিষ্যতে আরও কিভাবে করা যায়।

তিনি বলেন, আমার কথা হলো প্রত্যেকটা জিনিস আমরা যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারি সে একটা অবস্থানে আমাদের থাকবে হবে। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে আমাদের যেন থাকতে না হয়। সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি।

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ পেঁয়াজ রফতানি করার আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পিঁয়াজ নিয়ে যে সমস্যা ছিল, আমার মনে হয় পিঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারি। আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে কৃষি বিজ্ঞানীরা খুব ভালো কাজ করে। সাথে সাথে রিসোর্স করে এখন আমরা বীজ উৎপাদন করতে পারছি।

সরকার প্রধান বলেন, আশা করি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আর বাইরে থেকে আনতে হবে না। আমরা রফতানি করতে পারবো। সেভাবে আমরা কৃষকদের সব রকম সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসা প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও কিন্তু বিনিয়োগ ভালো আসছে। আমরা যে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। ভালো একটা সাড়া আমরা পাচ্ছি। এখন তো অনেকটা কম্পিটিশন এসে গেছে যে বাংলাদেশে কে কে কি কি বিনিয়োগ করবে। সেটার জন্য আমরা আলাদা ভাবে রোড শো করা, বিভিন্ন দেশের মানুষকে আকর্ষণ করা, তাদের আহ্বান করা, অর্থাৎ ভবিষ্যৎটা যাতে চলে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যাতে করে দেশের উন্নয়নটা এগিয়ে যায়।

তৈরি পোশাক শিল্পেও বাংলাদেশ আগের চেয়ে বেশি অর্ডার পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্টসের অর্ডার অনেক বেশি আসছে বাংলাদেশে এখন। অন্যান্য জায়গায় কিছু ঝামেলা হওয়াতে আগ্রহটা বেশি।

দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা ভালো সুখবর হলো, সেটা আমরা ঘোষণা করতে যাচ্ছি। মার্চ মাসে, এই সময়ের মধ্যেই করবো,… পায়রাতে আমি যাবো। ওখানে আমাদের একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেটা উদ্বোধনের সাথে সাথে এই ঘোষণাটা দেবো, আপনাদের আগে আমি বলে রাখি। এখন কিন্তু বাংলাদেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দিয়েছি। যেসব জায়গায় গ্রিড লাইন সেসব জায়গায় সোলার প্যানেল দিয়েছি। খুঁটে খুঁটে বের করছি, কোনও জায়গায় নাই। সর্বশেষ পেলাম গঙ্গাছড়াতে ৭০টা পরিবারের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। সেখানে আমি সোলার প্যানেল করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, এখন কিন্তু শতভাগ বিদ্যুৎ হয়ে গেছে আমাদের বাংলাদেশে। যেটা আমাদের টার্গেট ছিল। কিছু কিছু দ্বীপ অঞ্চল, সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে লাইন নিয়ে গেছি, যেমন সন্দীপে নিয়ে গেছি, ভোলার কিছু অঞ্চল, আর তাছাড়া বেশির ভাগ তো সোলার প্যানেল দিচ্ছি। গ্রিড লাইন আরও তৈরি করছি যাতে আরও সুস্থ ভাবে বিদ্যুৎ দিতে পারি।

জ্বালানি গ্যাস প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, একটা সময় বলতো গ্যাসে ভাসে বাংলাদেশ, এখন আর সেটা না। যার জন্য এখন আমাদের এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে এটাও একটু সমস্যা হচ্ছে। তারপরও প্রচেষ্টা থাকছে যে দাম বাড়ে বাড়বে, কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেভাবে হোক আমাদের উন্নয়নটা যাতে অব্যাহত থাকে।

চিত্রদেশ//এফটি//

Related Articles

Back to top button