স্বাস্থ্য কথা

ডায়াবেটিসের লাগাম টানে যেসব খাবার

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলো ক্রনিক মেডিক্যাল কন্ডিশন, অর্থাৎ সারা জীবনের সমস্যা। এটি শরীরে শর্করা বিপাকের ওপর প্রভাব ফেলে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলে শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা শরীরের কোষ ইনসুলিনের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এর ফলে রক্তে শর্করা থেকে যায় ও শক্তির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় না। ইনসুলিন হলো এমন একটা হরমোন যার মাধ্যমে শরীর শর্করাকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে।

বছরের পর বছর ধীরে ধীরে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ডেভেলপ হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো- ঘনঘন প্রস্রাব করা, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, পিপাসা বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, ঘনঘন সংক্রমণ হওয়া, বগলে/ঘাড়ের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া ও ক্লান্তি।

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের নিরাময় নেই, অর্থাৎ রোগটাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কিন্তু হতাশ হবেন না, লাইফস্টাইলে কিছু সংযোজন-বিয়োজনে রোগটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মানসিক চাপ কমিয়ে, নিয়মিত শরীরচর্চা করে ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে রোগটার লাগাম টেনে ধরতে পারবেন। এখানে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলো।

* বিনস: বিনস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে, যেমন- ব্ল্যাক বিনস, কিডনি বিনস, নেভি বিনস ও পিন্টো বিনস। বিনসে প্রচুর প্রোটিন ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট পাবেন। বিনস হজমের স্পিড কমায়, যার ফলে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি প্রতিরোধ হয়। বিনসের ফাইবার মেটাবলিক সিন্ড্রোমের ঝুঁকি কমায়। বিনসকে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে এটাকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ডায়েটে রাখা উচিত।

* সাইট্রাস ফল: মোসাম্বি, কমলা ও লেবুর মতো সাইট্রাস ফল অ্যান্টিডায়াবেটিস প্রোটেকশন দিতে পারে। সাইট্রাস ফলে ফোলেট, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি ছাড়াও দুটি বায়োফ্লেভানয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে- নারিনজিন ও হেসপারিডিন। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে অ্যান্টিডায়াবেটিস প্রপার্টি রয়েছে। কিন্তু সাইট্রাস ফলের রস খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সাইট্রাস ফলের রসের পরিবর্তে এক পিস সাইট্রাস ফল খান।

* চর্বি সমৃদ্ধ মাছ: যেসব মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ইপিএ এবং ডিএইচএ রয়েছে সেগুলোকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েটে স্থান দেয়া উচিত। এসব স্বাস্থ্যকর চর্বি রক্তের শর্করা ও লিপিড ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করে। এসব চর্বি সিস্টেমিক প্রদাহ কমায়, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায় ও রক্ত শর্করা কমায়।

* সবুজ শাকসবজি: পালংশাক ও বাঁধাকপির মতো সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য পুষ্টি রয়েছে। এসব শাকসবজি রক্ত শর্করার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। এসব খাবারের ফাইবার ও প্রোটিন হজমকে স্লো করে বলে রক্ত শর্করা দ্রুত বাড়তে পারে না। সবুজ শাকসবজিতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ শাকসবজির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত শর্করা ব্যবস্থাপনা উন্নত করে।

* প্রোবায়োটিক: প্রোবায়োটিক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা হজমক্রিয়া ও সমগ্র স্বাস্থ্য উন্নত করে। সাউয়ারক্রাউট, কিমচি ও দইয়ের মতো গাঁজনকৃত খাবারে প্রোবায়োটিক পাওয়া যায়। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও সিস্টেমিক প্রদাহ কমায়। এসব খাবার ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বৃদ্ধি করতে পারে।

* মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স গোল আলুর চেয়ে কম, যার ফলে এটা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আদর্শ খাবার। মিষ্টি আলু ধীরে ধীরে শর্করা রিলিজ করে। এটা গোল আলুর মতো রক্ত শর্করা বাড়ায় না। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও ফাইবার পাবেন।

* হোল গ্রেনস: বাদামী চাল, গম ও রাইয়ের মতো হোল গ্রেনস তথা শস্যদানা জাতীয় খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। হোয়াইট ব্রেড রক্ত শর্করা দ্রুত বাড়ায়। এর পরিবর্তে হোল গ্রেনস ব্রেড বেছে নিন। হোল গ্রেনসে প্রচুর ফাইবার থাকে বলে এসব খাবার ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় বেশ কার্যকর। হোল গ্রেনসের ফাইবার হজমকে ধীর করে ও রক্ত শর্করার মাত্রা স্থির রাখে।

 

 

চিত্রদেশ//এলএইচ//

Related Articles

Back to top button