প্রধান সংবাদমুক্তমত

ঘরের কাজে পুরুষের গাফিলতি

কানিজ কাদীর

কিছু কিছু পুরুষ ঘরের বাইরে কাজে খুব পারদর্শী হলেও ঘরের ছোট ছোট কাজে অন্যের উপর নির্ভরশীল খুব বেশি। অবশ্য সব পুরুষের ক্ষেত্রে এ কথাও প্রযোজ্য নয়। তবে বেশির ভাগ পুরুষের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। তারা ঘরের কাজ যদিও করে সেটাও খুব অগোছালো করে করে। ঠিকমত শেষও করে না। তারা ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলে কোন কিছুই খুঁজে পায় না। টেবিলের উপরে সব থাকলেও হাত বাড়িয়ে কিছু নিতে তাদের কষ্ট। জগ থেকে পানি ঢেলে গ্লাসে নিতেও তাদের নানা সমস্যা। ছেলেরা ছোট খাট কাজে মেয়েদের উপর নির্ভরশীল কেন? কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় গোড়ামী বা জ্ঞানের অভাব
ও সামাজিক কালচার যা পুরুষের মধ্যে বংশানুক্রমে ঢুকে গেছে। পুরুষরা ধরেই নেয় ঘরের কাজ তাদের না। তারা সারাজীবন দেখে আসছে তাদের মা-বোনরা পুরুষদের সব কাজ করে দিচ্ছে যেটা পুরুষরা ইচ্ছে করলে নিজেই করে ফেলতে পারতো। আর পুরষদের একটা ধারনা স্ত্রী বা মেয়েদের উপর তার একচ্ছত্র অধিকার, তার সব কাজকর্ম স্ত্রীরা করে দিতে বাধ্য । তারা সবসময় ভাবে এটাই নিয়ম। কারণ তারা ভাবে তারা বাইরে অনেক কাজ করে। তাদের এটাও ভাবা উচিত ঘরের কাজ কিন্তু অত সহজ নয়। একটা বাড়ীর সবাইকে একজন নারীর সন্তুষ্ট রাখতে হয়। সন্তান লালন পালনের পাশাপাশি ঘরবাড়ী গোছানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, রান্না করা, নাস্তা বানানো মেহমানদারী, আনুসঙ্গিক নানা কাজ কর্ম তো কম পরিশ্রমের নয়। সাহায্যকারী থাকলেও আসল দায়িত্ব ঘরের গৃহিনীরই নিতে হয়। কিন্তু পুরুষবা এত বেশি উদাসীন ঘরের কাজে তিনি শুধু নিজের প্রয়োজন টুকু পেলেই খুশি। পুরুষরা যতই ব্যস্ত থাকুক ছোটখাট কিছু কাজে সাহায্য অবশ্যই করতে পারে। এটা শুধুই একজন পুরুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

বিছানার চাদর বিছানো, বালিশের কভার লাগানো, সোফার কুশন গুছিয়ে রাখা, টেবিল মোছা, রান্না ঘরের জানালা বা ফার্নিচার, গাছে পানি দেয়া, রান্নার কাজে সাহায্য করা বা কখনো রান্না করা, একটু চা, কফি করে খাওয়া। নিজের কাপ প্লেট ধুয়ে রাখা ইত্যাদি। আরো নানারকম ছোটখাট কাজগুলো অনায়াসে করে ফেলতে পারে পুরুষরা। কিন্তু পুরুষরা (সব পুরুষ নয়) এ সব কাজে উদাসীনতা তো দেখাবেই বরং এমন ভাব করবে যেন এ কাজগুলোতো আমার না, আমি করবো কেন।

অন্যদিকে স্বামী/স্ত্রী ঘরে ফিরলে স্ত্রীর দায়িত্বই যেন বেশি ঘরের সব কাজগুলো করার ক্ষেত্রে। অপর দিকে স্বামী কাপড় চোপড় বদলে দিব্যি আছে। পেপার, টিভি অথবা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন টেবিলে খাবার দেবার দায়িত্ব বা চা বানানো নারীদের উপরই পড়ে। ঘরের অগোছালো পরিবেশ ঠিক করার দায়িত্ব তো আছেই। কিন্তু দু’জনই যদি ঘরের কাজগুলো শেয়ার করতো তাহলে দুইজনের জন্যই সহজ হতো।
সুন্দর পরিবেশ তৈরি হতো। অবশ্যই একজন ক্লান্ত মানুষকে মেয়েরা সেবা করতেই অভ্যস্ত। সে তো যৌক্তিক কারণ। কিন্তু যখন তখন এটা আনো, এটা ধর, এটা বন্ধ কর, চা দাও, এটা রান্না কর ইত্যাদি কতটা যৌক্তিক যে কাজটা একজন সুস্থ পুরুষ নিজেই করতে পারে। অবশ্য সুখের বিষয় নতুন প্রযন্ম সন্তান লালন পালনে তার স্ত্রীকে অনেক সাহায্য করে যা প্রশংসনীয়।
নারীর শরীর খুব নাজুক। সন্তান জন্ম দেয়া ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি সবার মনও তাকে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। তাই পুরুষদের যথাসম্ভব তাকে সহযোগিতা করা উচিত। কোন কোন পুরুষ রান্নাও করতে পারে। ঘরের নানা কাজ করে পুরুষরা সাহায্য করতে পারে । তই বলছিত ঘরের কিছু কাজ নিজেরা করুন। মা ও স্ত্রীকে যতটুকু পারেন সাহায্য করুন।

Related Articles

Back to top button