প্রধান সংবাদ

কোটা আন্দোলনে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট, ভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক
কোটাবিরোধী আন্দোলন ও রথযাত্রার কারণে যানজটে আজ কার্যত অচল ও স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা। এর সঙ্গে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছিল এইচএসসি পরীক্ষা।

রোববার (৭ জুলাই) সকালে পুরান ঢাকায় শুরু হয় রথযাত্রা। রথযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকেই জয়কালী মন্দির মোড়, ইত্তেফাক মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, রাজউক ভবন চত্বর, গুলিস্তান, হাইকোর্ট মোড়ে যানজট ছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবকে কেন্দ্র করে যানজটের বিষয়ে আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় কোটাবিরোধী আন্দোলন ‘বাংলা ব্লকেড’।

চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলের কারণে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল মোড়, আগারগাঁও, মহাখালী ও পল্টন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

মেট্রোরেলেও বেশ যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। কিন্তু দুপুর আড়াইটা থেকে প্রায় ৩০ মিনিট মেট্রো বন্ধ থাকায় মিরপুর-আগারগাঁও-মতিঝিল রুটের যাত্রীদের আরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন ‘বাংলা ব্লকেড’ বিকেল ৩টায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে শুরু হয়।

 

কর্মসূচি অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর চানখাঁরপুল, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, আগারগাঁও, মহাখালী ও পল্টন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় সড়ক অবরোধ করে ঢাকা কলেজ ও আশপাশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ব্যস্ত মোড় অবরোধ করে আশেপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। যানজটের প্রভাব পড়েছে এসব এলাকায়। দীর্ঘক্ষণ ধরে এসব এলাকায় যানবাহন আটকে আছে। সৃষ্টি হয়েছে যানবাহনের লম্বা লাইন। যানজটের কারণে সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসে অফিস করে বের হওয়া যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আগারগাঁও সিগন্যালে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা চারদিকের সড়কই আটকে রেখেছেন। যেতে দেয়া হচ্ছে না বাস, রিকশা, মোটরসাইকেলের মতো কোনো যানবাহনকেই।

সেখানে এক যাত্রী জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়ে তিনি ফিরছিলেন মহাখালীতে, সেখান থেকে বাস ধরে যাবেন টঙ্গী। অটোরিকশা থেকে নেমে বাহনটি ছেড়ে দিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ব্যর্থ হয়ে ফেরার পর তিনি বললেন, আমি ওদের অনুরোধ করলাম যে- বাবা, আমার সিএনজিটা ছাইড়া দাও। আমি বেশি হাঁটতে পারি না। ওরা আমারে উল্টো বুঝাইল- সরকার ওদের সঙ্গে কতোটা জুলুম করতাছে। আমি বললাম বাবারে, আমি তো কিছু করি নাই, এখন তো আমার উপরে জুলুম হইতাছে। তখন ওরা বলে, আমাদের সবারই নাকি তাদের দাবি সমর্থন করা উচিত আছিল।

অনেক যাত্রীর বনানী থেকে নাবিস্কোতে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। টিকাটুলি থেকে বেলা আড়াইটায় শুরু হয় রথযাত্রা। এ কারণে সেখানকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

অবরোধে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নগরবাসীকে ওইসব এলাকা এড়িয়ে চলতে বলছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি দল ঢাকার শাহবাগের মোড়ে আন্দোলন করছেন গত ১ জুলাই থেকে। তাদের পূর্বঘোষিত রোববারের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে।

Related Articles

Back to top button