যানজট এড়াতে ডিএমপির ২২ পরামর্শ
কয়েক দিন পরেই কোরবানির ঈদ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এরইমধ্যে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী। এই ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো থেকে। কিন্তু ঈদ যত ঘনিয়ে আসে ততই ঘনীভূত হতে থাকে এই যানজট। সবচেয়ে বেশি হয় রাজধানীর ভেতরে। তার ওপর এবার রয়েছে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা পশুর হাট।
এমন পরিস্থিতিতে বসে নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। ঈদ যাত্রায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা ও যানজট এড়াতে ২২ দফা পরামর্শ দিয়েছে নগরবাসীদের।
বুধবার (১২ জুন) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ থেকে এসব পরামর্শগুলো নির্দেশনা আকারে দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে- রাজধানীতে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের বাইরে সড়কে বাস রেখে বা থামিয়ে যাত্রী ওঠানো যাবে না। যাত্রীরা টার্মিনালের ভেতরে থাকাবস্থায় বাসের আসন গ্রহণ করবেন। সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আন্তঃজেলা পরিবহনের যাত্রীরা বা গমনপ্রত্যাশীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষা বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করার জন্য আহ্বান করা হলো। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল-সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে দাঁড়াবে না। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে নিবৃত্ত থাকতে হবে।
ফিটনেসবিহীন ও রুট পারমিটবিহীন বা অননুমোদিত রুটে কোনো বাস চলাচল করবে না। বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন। বাসের ভেতরে যাত্রীদের অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা অবশ্যই যানবাহনে টিকিট বহন করবেন।
আন্তঃজেলা ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন যেমন- বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, তেজগাঁও, কমলাপুর ইত্যাদি স্টেশনে এবং স্টেশন থেকে যাত্রীসাধারণ যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সে বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট থাকবে।
লঞ্চ টার্মিনালকেন্দ্রিক যেন কোনো যানজট সৃষ্টি না হয়, ট্রাফিক বিভাগ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যাত্রীদের মালামাল নিজ হেফাজতে সাবধানে রাখবেন। কোনো যানবাহনেই ছাদের ওপর যাত্রী বহন করা যাবে না।
যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসের চালকরা এমন কোনো অসম প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না যেন সড়কের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটে ও জীবনহানির আশঙ্কা থাকে। টার্মিনালে বাস ও লঞ্চ কাউন্টারগুলোতে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করতে হবে।
মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীরা যেন সবসময় হেলমেট পরিধান করে ও গতিসীমা মেনে চলাচল করে, সে বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশ নিশ্চিত করবে।
অনেক সময় টার্মিনাল বা আশপাশের ফাঁকা জায়গায় খালি ট্রাক বা পিকআপে যত্রতত্র যাত্রী উঠিয়ে দূরপাল্লার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার প্রয়াস চালানো হয়। ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ এ বিষয়ে অতীতেও সোচ্চার ছিল এবং সব সময় থাকবে।
ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত লাভের আশায় ইন্টারসিটি গণপরিবহনগুলো রুট পারমিটবিহীন বা অনুমোদনবিহীন যেন ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরে যত্রতত্র না চলে, সে বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে মালিক/শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত আছে।
এ ঈদে ঢাকা থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ঢাকায় নিয়মিত জনসাধারণের আসা-যাওয়া চলমান থাকে। এ জন্য মহানগরীর প্রবেশ ও বের হওয়ার স্থানগুলোতে যেন কোনো যানজট তৈরি না হয়, সে লক্ষ্যে এমন প্রতিটি স্থানে হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে ডিএমপি ট্রাফিক পুলিশের শক্ত যৌথ প্রচেষ্টা থাকবে।
পশুবাহী গাড়িগুলো অবশ্যই সিটি করপোরেশন অনুমোদিত হাটের ভেতর লোড-আনলোড করতে হবে। কোনোক্রমেই হাটের বাইরে অথবা রাস্তায় লোড-আনলোড করা যাবে না। গরুর হাটকেন্দ্রিক সুষ্ঠু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, হাট ইজারাদার, পরিবহন মালিক, শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে। কোরবানির পশুবাহী যানবাহনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয়।
বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটকেন্দ্রিক সার্ভিল্যান্স টিম গঠন থাকবে। ঈদুল আজহার সাত দিন আগে থেকে গরুর হাটকেন্দ্রিক সার্বক্ষণিক ফোর্স মোতায়েন করা হবে এবং প্রয়োজনে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে।
শেষে ঈদ উপলক্ষে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনসাধারণের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছে।