বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন মাইলফলক
স্টাফ রিপোর্টার:
বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আসছে বানের জলের মতো। রফতানি আয়ও আসছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ। সব মিলিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৮ অক্টোবর) দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে রির্জাভ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী দশ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে রফতানি আয় বেড়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জাইকার ৩০ কোটি ডলারের সহযোগিতা। এ কারণে রির্জাভের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
প্রথমবারের মতো দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ২৩ জুন। এর আগে ৩ জুন রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এরপর ১ সেপ্টেম্বর ৩৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
করোনা ভাইরাসের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের নিম্নগতি থাকলেও প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে। দেশে উন্নয়নশীল অংশীদারদের বিনিয়োগও আসা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত টানা তিন মাসে রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৭১ কোটি ৩১ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট রেমিট্যান্সের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সের ওপর ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকেই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরেও রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণেই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে গত জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এ বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিভিন্ন দেশ থেকে এক কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই রেমিট্যান্সের অবদান জিডিপিতে ১২ শতাংশের মতো।
এদিকে করোনার মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে আরও বেশি, যার পরিমাণ ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। তিন মাসে মোট ৯৮৯ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রফতানি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (পরিমাণ প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।
চিত্রদেশ//এল/