কানিজ কাদীরের এর গল্প ’পরীর গল্প ও ওরা’ (৩য় পর্ব)
জনপ্রিয় লেখক কানিজ কাদীর এর গল্প ’পরীর গল্প ও ওরা’ পড়তে চোখ রাখুন ‘চিত্রদেশ’ এর সাহিত্য পাতায়।
পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রতি শুক্রবার ‘পরীর গল্প ও ওরা’ প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রদেশে। আজ রইল গল্পটির-(৩য় পর্ব)
অমলা ডাকা শরু করল-‘ আমরার রান্ধুন তো শ্যাষ। আফনেরা কি অহনই খাইবাইন না কারেন (কারেন্ট) আইলে খাবার দিতাম।’
অরিত্র ও সুরভি বলল- ‘আমরা একটা মজার ঘটনা শুনছি । আপনি একটু পরেই ভাত বাড়েন।’
জয়নালের গল্পে যেন সবার নেশা ধরে গেল। এরপর কি হলো জানার জন্য সবাই একেবারে উদগ্রীব হয়ে উঠল।
জয়নাল বলল-‘তারপর শুন। আমরার সর্দার রাখাল কইল, ‘ফুলডা আমারে দে।’
আমি কইলাম, ‘আমি, এত কষ্ট কইরা আনছি আপনারে দিমু ক্যান।’
সর্দার কয় ‘দিবি না মানে, দে কইতাছি।’ এই বইলা সে আমারে জড়াইয়া ধইরা ধস্তাধস্তি শুরু করল। আমার মধ্যে যে কি অইল-‘আমি একটা ঘুষি মারলাম। সর্দার যাইয়া এক্কেবারে পড়ল পাশের ডোবায়।সবাই তো তাজ্জব, ওইটুকু পোলায় এত শক্তি কই থেইক্যা পাইল। আমারে আর ধরার কেউ সাহসই পাইল না। আমি ফুলডা পকেটে লইয়া বাড়িতে আইলাম। ‘ কিন্তু কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম আমার পকেটে সে ফুলডা আর নাই। ‘ সে সুগন্ধও আর নাই। আমি অবাক হইয়া গেলাম। ফুলডা গ্যাল কই। ভাবলাম কোনোখানে হয়তো পইরা গ্যাছে। ‘
‘রাইতে ঘরে ঢুকলাম। ঘুম ঘুম আইতাছিল। কখন যে ঘুমাইয়া পড়ছি জানি না।হঠাৎ আমার ঘুম ভাইঙ্গা গেল আবার সেই ফুলের সুগন্ধে। আমার পাশে হাত দিতেই দেখি মানুষের মতন লাগে। দেহি সত্যিই একটা মাইয়া মানুষ শুইয়া আছে। আমি ডরে হেই দিকে না চাইয়া আগে অর চুলের মুডি আমার হাতে পেচাইলাম। কারণ এর আগে শুনছিলাম যে পেত্নীরার চুলের মুডি ধইরা যা চাওন যায় তাই নাকি পাওয়া যায়। আর মনে মনে ভাবলাম একটা লাডি হাতে লই।যদি পেত্নী কিছু করতে আসে এই লাডি দিয়া পিডাইয়া মারমু।’
সুরভি বলল, ‘অপনার গল্প শুনতে শুনতে তে অনেক রাত হবে।’ গল্পে তো আমাদের ভয়ও ধরে যাচ্ছে।’ অরিত্র বলে ‘ আপু তুমি এত ভয় পাও কেন? গল্পটাতে তো একটা রহস্যও আছে তাই না? তারপর কি হলো বলেন?’
জয়নাল শুরু করল-‘আমি এক হাতে পেত্নীর চুলের মুডি প্যাচাইলাম আর এক হাতে যেই লাডিটা তুইল্যা বালিশের তলে রাখছি অমনি পেত্নি কইল ‘হাতে লাঠি নিছ কেন? আমার চুলের মুঠি ছাড়ো নইলে কিন্তু তোমারে একেবারে মাইরা ফেলব।’
জয়নাল থামল না বলতেই থাকল। ‘আমি তাও ভয় পাইলাম না। মনে রাহস রাখলাম। ভালো কইরা চাইয়া দেহি ঘরে এক্কেবারে আলো ঠিকরাইয় পরতাছে। দেখি আমার পাশে কি যে সুন্দর একখান মাইয়া। আরে এইডাতো পেত্নী না এইডা তো মাইয়া জিন। মনে অইতাছিল একটা গোলাপী পরী।’
পরী বলল- ‘শোন, আমি যে তোমার কাছে আসছি, কাউকে বলবা না। তা না হলে তোমাকে কিন্তু মাইরা ফেলব। শোন তুমি জঙ্গল থেকে যে পাঁচটি ফুলের একটা তুলে নিয়ে আসছিলা সেটা আমি। আমরা পাচঁবোন ছিলাম। আমরা মেয়ে জিন। এখন আমাকে আমাদের সমাজে কেউ গ্রহণ করতেছে না। আমি যে মানুষের সমাজে এসে পড়ছি। এখন তুমি যদি আমারে বিয়ে না করো আমি আর জিনদের কাছে ফিরে যাইতে পারব না।’
সুরভি বলল- ‘এখানে তো রোমান্টিকতাও আছে দেখা যায়। আপনার তখন কেমন লাগছিল।।’
জয়নাল বলল-‘আমি বললাম আমি তো মানুষ, আমি জিন কেমনে বিয়া করতাম। ‘
পরী বলল-‘না, তোমার আমাকে বিয়ে করতেই হবে। নইলে তোমাকে আমি মেরে ফেলব।’
‘আমি রাজি হইলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম পরী আমার পাশে নাই।সে আইল আবার কিছুক্ষণ পর অনেক ফলমূল নিয়া । আমারে কি যে সুন্দর মিষ্টি আঙ্গুর খাওয়াইল যা জীবনে কোনো দিন খাই নাই। আমরা বিয়া করলাম।’
‘সত্যি বলছেন জয়নাল চাচা, বিশ্বাস হচ্ছে না।’ অরিত্র অতি আগ্রহে জানতে চাইল। ‘তোমরার বিশ্বাস হউক বা না হউক আমার জীবনে এই ঘটনা ঘটছিল এইডাই সত্যি।’ ‘আচছা তারপর পরী আর আপনি বিয়ে করে কতদিন ছিলেন। সুরভি জানতে চাইল। (চলবে)
লেখক: কানিজ কাদীর