প্রধান সংবাদবিনোদন

১২ ডিসেম্বর আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল

স্টাফ রিপোর্টার:
২০২২ সালে বিজয়ের মাসে মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে যাত্রী নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে বলে আজ বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় এক জুম সংবাদ সম্মেলনে জানান মেট্রোরেলের এমডি এমএন সিদ্দিক। তবে আগামী ১২ ডিসেম্বর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। এর আগে গত ২৭ আগস্ট শুক্রবার নগরীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুরের পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো রেল চলাচল করে। প্রথমবারের মতো নগরবাসী মুগ্ধ নয়নে তা দেখেছিল।

প্রথমবারের পরীক্ষায় মেট্রোরেল চলাচলে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। ঢাকার বুকে মেট্রোরেল দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে মানুষ। আশপাশের বাড়ির জানালা, বারান্দা থেকে উৎসুক মানুষ থমকে দাঁড়ায়। ওই দিন শুক্রবার রাস্তায় লোকজন কম, তার পরেও মেট্রো রেল প্রথমবারের মতো একনজর দেখা- এটা তো কম কথা নয়। রাস্তা থেকে দেখা যাচ্ছিল না, তাই আশপাশের ভবন থেকে নাগরিক শহরের মানুষ দেখে মেট্রোরেল।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছিল, এখন পরীক্ষামূলক চললেও যাত্রী নেওয়া হবে না। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হতে পারে। দেশের প্রথম মেট্রোরেল হচ্ছে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে এটি মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত নির্মাণের কাজ চলছে। এটি পরে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথমমেট্রো রেলের নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৮.৪৯ শতাংশ। ২০.১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৬.৫৬৬ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন শেষ হয়েছে। ১৭টি মেট্রোরেল স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। দিয়াবাড়িতে ডিপোর ভেতরে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপরে মূল রেলপথে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করা হয়েছে। ১৫ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪টি মেট্রোরেলের সেট ঢাকার উত্তরাস্থ ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। এগুলোর ১৯ ধরনের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। মেট্রো রেলের ট্রেন চালানো হবে বিদ্যুতের মাধ্যমে।

উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁওয়ের মধ্যে মেট্রো রেলপথের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছ ৯টি স্টেশন। তার মধ্যে কমপক্ষে ৫টি স্টেশনের মধ্যে রেলপথের ভায়াডাক্টের ওপর ট্রেন পরিচালনা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও এ প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

প্রকল্পের নথি বলছে, মেট্রোরেল দিয়ে ৩৫ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যাওয়া যাবে। শুরুতে দৈনিক ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।

যাত্রীরা যেভাবে ট্রেনে চড়বে

ট্রেনে ওঠার একমাত্র পথ স্টেশন ভবন। স্টেশনগুলো ৩ তলা। সড়ক থেকে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা দ্বিতীয় তলার কনকোর্স হলে উঠবে। এ তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা যন্ত্রপাতি থাকবে।

তৃতীয় তলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। একমাত্র টিকিটধারীরাই ওই তলায় যেতে পারবে। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হলে মেট্রোরেল ফজরের নামাজের পর দুদিক থেকে যাত্রা করবে। প্রাথমিকভাবে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত আছে। তবে অফিস সময়ে প্রতি ৩ মিনিট পরপর ট্রেন চলার কথা। রাতে বা যাত্রী চাপ যে সময় কম থাকে, সে সময় এক ট্রেন থেকে অন্য ট্রেনের সময়ের ব্যবধান বাড়বে। এক ট্রেনের সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার কাজটি কেন্দ্রীয়ভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বা লাইনে কোনো বাধা থাকলে ট্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে যাবে।

মেট্রোরেলে যা যা থাকছে

প্রকল্প সূত্র বলছে, একটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবে। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবে ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী চড়তে পারবে। সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) এই ট্রেনের দুই পাশে সবুজ রঙের প্লাস্টিকের দুই সারি লম্বা আসন পাতা হয়েছে।

প্রতিটি কোচের দুই পাশে ৪টি করে ৮টি দরজা আছে। অর্থাৎ স্টেশনে থামলে ট্রেনের ৪টি দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। বাকি ৪টি বন্ধ থাকবে। পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে থাকবে অডিও-ভিজ্যুয়াল ঘোষণা। দুই প্রান্তের দুটি কোচে দুটি করে ৪টি হুইলচেয়ার বসানোর ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। তবে ট্রেন কোন স্থানে কত গতিতে চলবে, সেটা ঠিক করবে কর্তৃপক্ষ।

চিত্রদেশ//এফটি//

Related Articles

Back to top button