প্রধান সংবাদবিনোদন

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার খুলছে আজ

স্টাফ রির্পোর্টার:
দেশের ইতিহাসে এসেছে বহুল প্রত্যাশিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। জাতির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার খুলছে আজ। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার সবচেয়ে বড় অর্জন এই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় আকাশে থাকবে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ও জঙ্গিবিমানের বিভিন্ন প্রদর্শনী। পদ্মার দুই পারে থাকবে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় সাজ সাজ রব বিরাজ করছে।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার। ঐসব জেলার সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দেবে এই সেতু। পদ্মা সেতু সাফল্যের সঙ্গে নির্মাণ করতে পারায় শুভেচ্ছা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, পাকিস্তান। এছাড়া খোদ বিশ্বব্যাংকও উচ্ছ্বসিত এ সেতু নিয়ে। অথচ দুর্নীতির অভিযোগ এনে এই প্রকল্প থেকে সরে এসেছিলো তারা।

বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে সাহসিকা শেখ হাসিনার আরেকটি বিজয় অর্জিত হয়েছে। যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এ কীর্তিগাথা স্মরণ করবে দেশবাসী। তার এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বিশ্বদরবারে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্ববাসী বিস্ময়ে দেখছে বাংলাদেশের সক্ষমতা। পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরস্রোতা নদী পদ্মায় সেতু করা রীতিমতো বিস্ময়ের ব্যাপার। সেই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বের ২০টি দেশের মেধাবী প্রকৌশলী ও হাজার হাজার শ্রমিকের ২ হাজার ৭৬৮ দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খরস্রোতা নদী পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু।

পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো তৈরি হয়েছে ইস্পাত বা স্টিলের স্প্যান দিয়ে। একেকটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। স্প্যানগুলো আয়তাকার, ধূসর রঙের; দেখতে অনেকটা খাঁচার মতো। পদ্মা নদীর দুই পার যুক্ত করতে লেগেছে ৪১টি স্প্যান। সেতুর পিলারের ওপর স্প্যানগুলো বসানো হয়েছে। আর স্প্যানের ওপরে তৈরি করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের পথ। স্প্যানের ভেতর দিয়ে বসছে রেলপথ।

মূল সেতু, নদীশাসন ও সংযোগ সড়কে সিমেন্ট ব্যবহার হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৮৬ হাজার টন। সেতু ও সংযোগ সড়কে রড লেগেছে ১ লাখ ৮ হাজার টন। বালু লেগেছে প্রায় ৬৫ লাখ ঘনমিটার। সংযোগ সড়ক নির্মাণে ইট লেগেছে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। কংক্রিটের ব্লক ব্যবহৃত হয়েছে ৮০ লাখ। এর সবই সংগ্রহ করা হয়েছে দেশীয় উৎস থেকে।

এই সেতু আজ উদ্বোধন হলেও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে আগামীকাল ২৬ জুন। এরপর পদ্মার বুকের ওপর দিয়ে ছুটে চলবে যানবাহন।

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আজ সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে র‍্যাবসহ সাড়ে পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য। এজন্য সাজানো হয়েছে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তাবলয়।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া-প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী নামফলক উন্মোচনের পর টোলপ্লাজার সামনে সুধীসমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর সেতু পেরিয়ে জাজিরা প্রান্তে যাবেন তিনি। সেখানে নামফলক উন্মোচনের পর বিকেলে জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এরই মধ্যে মাওয়া ও জাজিরায় জোরদার করা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌ-পুলিশ সবাই একযোগে মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন পেট্রোলিং ছাড়াও আকাশপথে থাকবে র‍্যাবের হেলিকপ্টারের নজরদারি।

চিত্রদেশ//এফ//

Related Articles

Back to top button