সেলিমুজ্জামানের কবিতা ‘অন্তহীন এক ট্রেন লাইন’
জয় গোস্বামী বাবু, আপনার মতন একজন “সোনার মেয়ে” আমারো আছে
এই পৃথিবীরই কোন শহরে, কোন বাড়ির কোন এক ছোট বারান্দায়
এক অসমাপ্ত ক্যানভাস সামনে নিয়ে সে বসে থাকে বহু প্রহর
আমি তার সামনে দাড়াই না, যোগাযোগ করি না, দেখা করি না
আমি তার থেকে লুকিয়ে বেড়াই আজ অনেক দিন হয়ে গেলো
এখন তার সাথে আমার শুধু দেখা হয় কবিতার বই গুলির পৃষ্ঠায়
আমি আপনার মতনই নিরুত্তর ছিলাম, ভূমধ্য সাগরের দিকে চেয়ে রইলাম
আমি কেমন করে বোঝাবো তাকে কেমন করে একজন রক্ত মাংসের মানুষ
কবিতার বইয়ের কালো অক্ষর হয়ে বছর বছর বেঁচে থাকতে পারে
মাঝে মাঝে সন্ধ্যে বেলা আমারো খুব জীবনানন্দ হতে ইচ্ছে করে
মনে হয় দেশ বন্ধু পার্কের সামনে একটা চলন্ত ট্রামের সামনে দাঁড়াই
আমি কিন্তু সত্যি সত্যি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি সত্যি সত্যি
তারপর ট্রাম নয় একটা ট্রেন গাড়ী এসে আমাকে ধাক্কা দেয়
আমি চাকার নীচে পড়ে যাই না, অলৌকিকভাবে বেচে যাই
তারপর মানুষেরা হট্টগোল করে , শুনতে পাই কারা যেন আমায় কোলে নেয়
আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, ব্যান্ডেজ বাধে, ইঞ্জেকশন দেয়
কারা যেন সাদা লাল নীল ট্যাবলেট দেয় , পানি দেয় , ব্লাড প্রেশার মাপে
আমি চুপচাপ শুয়ে থাকি , জানালা দিয়ে এক খন্ড আকাশ দেখা যায়
ঠিক তখুনি দরজা দিয়ে সোনার মেয়ে আসে, সাবলীল ভঙ্গীতে বসে
আমার হাত ধরে, একটু হেসে জিজ্ঞাস করে কেমন আছেন ?
সোনার মেয়ে আমায় প্রশ্ন করে “আপনি মরে গেলে কেমন করে হবে”
সেই ছবিটা তো কোনদিন আর শেষ হবে না, ধুলো জমে যাবে ইজেলে
আমি অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিই , মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে
এ সব কি বাস্তব নাকি স্বপ্নময়তার গির্জার ঘন্টা বুঝি না
সাদা নরম বিছানায় সাদা জামা পরা আমি, এত শুভ্রতা কোথা থেকে এলো
একদিন আমি সুস্থ হয়ে যাই , বাসায় ফিরি, কবিতার বই হাতে নেই
এবার দেখলাম বইগুলি একটু অন্যরকম , কেমন সাদা সাদা বর্ণ বিহীন
শুধু এক কোনে সোনার মেয়ে বসে, মাথা নিচু করে , নিজেরই আংগুলের দিকে দৃষ্টি
আমি আবার একটি ট্রেন লাইন ধরে হাঁটতে থাকি , অন্তহীন এক ট্রেন লাইন