সিস্টেমের সমস্যাই স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের বাধা
:স্টাফ রিপোর্টার:
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে সিস্টেমের সমস্যা রয়েছে। যারা সেবা দেবেন তারা হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না। নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতা রয়েছে। অনেকে টয়লেটের ব্যবহার জানে না। পয়ঃনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যা দূর করতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা কাজ করছি। আমাদের হেলথ সিস্টেমে আগের চেয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আগামীতে আরও হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সসহ দেশের স্বাস্থ্যসেবা দানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুফল আস্তে আস্তে আসবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দৈনিক ভোরের কাগজ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৬ অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ ও ভোরের কাগজ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জিডিপির মাত্র একভাগ বাজেট দিয়ে স্বাস্থ্য সেক্টরে আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নতি হয়েছে। এ বাজেট বাড়ালে আরো বেশি সেবা দেয়া সম্ভব। এক সময় টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না। এখন টয়লেট, ওয়াশ, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের কথা বলা হচ্ছে। আগে মানুষ হাসপাতালে যেতে চাইতো না। এখন প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিতে ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সবাইকে খুশি রাখা খুব কঠিন কাজ। আমরা সার্বিক সেবা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বাস্থ্যখাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এবছর সাড়ে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে। ১৫ হাজার নার্স নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৮ হাজার বেড বাড়ানো হবে। ২০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। বড় ইনস্টিটিটিউট ও হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা লোকজন বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। তাদের সহযোগিতার জন্য হেল্প ডেস্ক স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়িয়ে পৃথকস্থানে করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান বাড়ানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পুরাতন সব কমিউনিটি ক্লিনিক ভেঙে আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নতুন ডিজাইনের ভবন তৈরি করা হচ্ছে। হাসপাতালেল বর্জ্য বাইরে না ফেলার ব্যাপারে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোকে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রমের ওপর সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। এ খাতের আরো উন্নতির জন্য মাতৃ মৃত্যুহার ১ এ এবং শিশু মৃত্যুহার ৭০ এর নামিয়ে আনতে হবে। শিশু বিবাহ কমিয়ে আনতে হবে। স্বাস্থ্যগত সক্ষমতা আসার আগেই একটি মেয়ে ১৭/১৮ বছরেই বিয়ের পর একটি শিশুর জন্ম দেয়। এতে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেকেই এখনো বাসায় ডেলিভারি করে। ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান অপারেশনের হার বেশি। এসব ব্যাপারে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা সব ক্ষেত্রেই সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছি।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনজিও ফোরাম ফর পালিক হেলথের বিভাগীয় প্রধান আহসান হাবিব।
শ্যামল দত্ত তার বক্তব্যে বলেন, হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত সব ব্যবস্থা থাকা, টয়লেটগুলো নারীবান্ধব করে তৈরি করে সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলেই আমরা এসডিজি’র টার্গেটের আগেই পূরণ করতে পারবো।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে এনজিও ফোরামের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশীদ বলেন, সেবাখাতে বাংলাদেশের উদ্যোগ বিভিন্ন ফোরামে প্রসংশিত হয়েছে। কিন্তু উপজেলা, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিক, দুর্গত ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা অনেক পিছিয়ে আছে। এসব স্থানে সেবার মান সন্তোষজনক না। কোথাও কোথাও অবকাঠামো আছে, কিন্তু সেবা মানসম্মত না। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার আলোকে সব জায়গায় সেবার মান বাড়াতে কাজ করছি। আমরা যেই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করি না কেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাবনায় রাখতে হবে।
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহ পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় জনবলের সংকট আছে। তারপরেও সাধারণ মানুষ এখন হাসপাতালে আসছে। হাসপাতালগুলোতে ২০ ভাগ রোগী ইনফেকশনের কারণে মারা যায়। এক সময় মাতৃ মৃত্যুর হার লাখে ৫৭৪ জন ছিল। এখন তা ১৭৪ -এ নেমে এসেছে। শিশু মৃত্যুর হার এক সময় ২৩ ছিল, ২০০৩ সালের মধ্যে তা আরো কমে আসবে। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে। হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য আমরা কাজ করছি। এনজিওগুলো এ ব্যাপারে তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে।
ওয়াটার এইড বাংলাদেশের হেলথ এডভাইজর ডা. নূরুল্লাহ আউয়াল বলেন, স্বাস্থ্যসেবার জন্য আমাদের পলিসি আছে, গাইড লাইন আছে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কি হচ্ছে তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই। অনেক কাজ কাগজে আছে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে নাই। সব কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ওপর জোর দিতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওয়াশ স্পেশালিস্ট মাহজাবিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্যিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের পর তা রক্ষণাবেক্ষণের দিকে মনযোগী হতে হবে।
চিত্রদেশ //এস//