অর্থ-বাণিজ্যপ্রধান সংবাদ

রোজায় বেড়েছে সব ধরনের ফলের দাম

কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই ধারা দিন দিন বেড়েই চলছে। রমজানেও দাম বেড়েছে বিভিন্ন পণ্যের। এর প্রভাব পড়েছে ফলের বাজারেও। রমজানে ফলের চাহিদা থাকলেও দামের কারণে ক্রেতার নাভিশ্বাস। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে কোনো কোনো ফলের দাম। ফলে বেশি দামের কারণে ফল কেনা থেকে বিরত থাকছেন ক্রেতারা।

রোজায় ফলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম বলে দাবি করছেন পাইকারি ফল বিক্রেতারা। আবার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তদারদের কারণেই বাড়ছে ফলের দাম। তাদের দাবি, সিন্ডিকেটের জন্যই পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে ফল কিনতে হচ্ছে। এ কারণে দাম বেড়েছে বাজারে।তবে উভয় ধরনের বিক্রেতারাই বলছেন, রোজার শুরুতে ফলমূল বেশি কেনার তাড়া থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে চাহিদা কমতে পারে। সেসময় অধিকাংশ ফলের দামও কিছুটা কমতে পারে।

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে, আপেল, আঙুর, মালটা, খেজুর, পেয়ারা, আনারস, তরমুজ, কলা পেঁপেসহ রোজায় যেসব ফল বেশি বিক্রি হয় তার প্রায় সবগুলোরই দাম বেড়েছে। এর মধ্যে খেজুরের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আজওয়া খেজুর আগে যে দামে বিক্রি হতো এখন তা দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে । মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। হাব্বার খেজুর প্রতি কেজি এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার কালভী খেজুরের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা। রোজায় ইফতারের প্রধান ফল খেজুরের সব ধরনেরই দাম বেড়েছে ।খেজুরের মতো বেড়েছে আপেলের দাম। প্রতি কেজি ফুজিয়া আপেলের দাম ১৯০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। হানি আপেলের দাম ৩০-৪০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা। প্রতি কেজি আঙুর বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়। কমলার দাম যেখানে প্রতি কেজি আগে ছিল ১৭০-১৮০ টাকা, সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০-২৩০ টাকা। মালটার দামও বেড়েছ কেজিতে ৪০-৫০ টাকা। আনারের দামও বেড়েছে। ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের আনার কেজিপ্রতি ১৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চায়না নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি।

এদিকে গত বছরের মতো এবছরও কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরম মৌসুমের সবচেয়ে পরিচিত ফল তরমুজ। বাজারের প্রচুর মজুত ও ভোক্তাদের চাহিদা থাকলেও পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। পাইকারি বা আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা পিস হিসেবে কিনলেও তারা বিক্রি করছেন কেজি দরে। ফলে আড়তে যে তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়, সেটি কেজি দরে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।

‘কৃষি বিপণন আইন-২০১৮’তে বলা হয়েছে, ফলের ক্ষেত্রে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা আছে। কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকার বেশি লাভ করা যাবে না । কেজি বা পিস যেভাবেই কিনবে, সেভাবেই বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ফলের বাজারে এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
ফলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে রাজধানীর নিউমার্কেটের ফল বিক্রেতা ইউসুফ আলী বলেন, গত এক সপ্তাহে আগের তুলনায় প্রায় সব ফলেরই দাম বেড়েছে। আগে এক কেজি কমলা বিক্রি করতাম ১৭০-১৮০ টাকা, এখন সেটা বিক্রি করতে হয় ২২০-২৩০ টাকায়। এরকম প্রায় সব ফলেরই দাম বেড়েছে। তরমুজের দাম প্রতিটিতেই ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।

ফলের দাম বাড়ার পেছনে একশ্রেণির সিন্ডেকেটকে দায়ী করছেন খুচরা ফল ব্যবসায়ীরা। আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা প্রতিদিনই ক্যারেটপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে সুবিধামতো দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। এতে বিপাকে পড়ছেন তারা।

এছাড়াও দাম বেড়েছে কলা, আনারস, পেঁপে, বেলসহ সব ফলেরই। রোজায় টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারসের চাহিদা বেশ। এই ফলটির দামও আগের তুলনায় বেড়েছে। আগে যেখানে ৪০ টাকা করে একটি আনারস বিক্রি করা হতো, সেটি এখন বিক্রি করছে ৬০ টাকায়।
পুরান ঢাকার চকবাজারে কলা বিক্রেতা মো. মোবারক হোসেন বলেন, রোজা শুরুর আগেই কলার দাম বাড়তে শুরু করে। চাম্পাকলার হালি ছিল ১২ থেকে ১৫ টাকা, সেটি এখন হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। সাগরকলা আগে ৪০ টাকা হালি বিক্রি হলেও এখন সেটা ৫০ টাকা হয়েছে। ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হালি সবরি কলা বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। বেলের দামও আকার অনুযায়ী ভিন্ন। ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দামের বেল রয়েছে। কেনা দামও বেড়েছে আগের তুলনায়।

বাজারে ফলের চড়া মূল্য হওয়ায় বিক্রি তেমন হচ্ছে না বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ভ্যানে ফল বিক্রি করেন শুকুর মুন্সি। তিনি বলেন, সব ফলের দাম বাড়তি। তাই একদম প্রয়োজন ছাড়া ফল বেশি করে কেউ কিনছেন না। ২০ কেজির এক ক্যারেট আঙুর আগে কিনতাম দুই হাজার ৮০০ টাকায়, সেটা এখন কিনতে হয় ৪ হাজার টাকায়। অনেকটা বাধ্য হয়ে অল্প করে কিনতে হয়। কাস্টমাররা চাইলে যেন অন্তত দিতে পারি। কেউ হয়তো রোগী দেখতে যাচ্ছেন বা বাসার জন্য যেটুকু না হলেই নয় সেটুকু কিনছেন। মানুষের কাছে আসলে টাকা নেই। করোনায় মানুষের ব্যবসা, চাকরি সবকিছুরই ক্ষতি হয়েছে।এদিকে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, ফল কিনতে গিয়ে অনেকটা প্রতিযোগিতা করতে হয়।

চকবাজারে হাফিজ উদ্দিন নামের আরেক খুচরা ফল বিক্রেতা বলেন, বাজারে ক্রেতা কম। আগের মতো আর ফল বিক্রি হচ্ছে না। একদিকে যেমন গত সপ্তাহজুড়ে দাম বেড়েছে, আবার মানুষের হাতেও তেমন টাকা-পয়সা নেই।

তবে ক্রেতারা বলছেন, রোজা এলেই দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ইচ্ছে থাকলেও প্রয়োজনীয় সব ফল কেনা সম্ভব হয় না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে যে পণ্য বেশি বিক্রি হয় সেগুলোর তদারকিতে কাজ করছে তারা। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কিছু পণ্যের চাহিদা থাকে। এ সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার জন্য বেশি মূল্যে বিক্রি করেন। বাজার তদারকির জন্য আমরা ঢাকা শহরে বিভিন্ন আড়ত ও খুচরা বাজারে প্রতিদিন আটটি টিম পাঠাচ্ছি। ফলের বাজার তদারকিতেও আমাদের টিম কাজ করছে। বাজারগুলো সবসময় তদারকিতে রাখার চেষ্টা করছি।

চিত্রদেশ//এফ টি//

Related Articles

Back to top button