খােজঁ-খবরপ্রধান সংবাদ

রাজধানীর পশুর হাটে বেচাকেনা পুরোপুরি জমেনি

স্টাফ রিপোর্টার:
ঈদের দু’দিন বাকি থাকলেও করোনা আতঙ্কে এখনও রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে পুরোদমে বেচাবিক্রি জমে উঠেনি। ক্রেতারা আসছেন হাতেগোনা, উৎসুক মানুষের ভিড় বেশি।

তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে গরু বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। এদিকে হাটে আগতদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা করছেন না। মাস্ক পরিধান ছাড়া অনেককেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

সরেজমিন একাধিক পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার মাঝারি আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে বেশি। করোনাকালে সাধ্যে কুলাতে না পেরে অনেকেই কমিয়েছেন বাজেট। ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দামের দেশি ষাঁড় ও গরুর দরদাম করছে সবাই।

বড় আকারের গরু বিক্রি খুবই কম। তবে উৎসুক জনতাকে বড় গরুর সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলতে দেখা গেছে। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, হাটে আগতদের কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। কারও কারও মাস্ক থাকলেও তা নামানো থুঁতনিতে, অনকের কানে ঝোলানো।

পশুর দরদাম নিয়ে মতপার্থক্য আছে। ক্রেতাদের কেউ বলছেন, দাম আগের বছরের চেয়ে বেশি। আর বেপারিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় দাম অনেক কম। তারপরও ক্রেতারা আরও কম দাম হাঁকছেন। আগতদের দরদামে হতাশ বেপারিরা। উপযুক্ত দামে গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বিক্রেতারা।

আফতাবনগর হাট থেকে গরু কিনে বাসায় ফিরছিলেন রামপুরার বাসিন্দা আবদুস সালাম। তিনি বলেন, প্রতি বছরই সাধ্য অনুযায়ী মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি দিয়ে আসছি।

এবারই করোনাভাইরাসের কারণে মাঝারি আকারের গরু কিনেছি। অন্যবার ১ লাখ টাকার ওপরে গরু কিনলেও এবার ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছি। দুই কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ও গরিব ও দুস্থদের কথা চিন্তা করেছি। গরুর কিছু টাকা গরিব-দুস্থদের দান করব। হাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করা হলেও সে দিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই।

ক্ষুব্ধ হাট ইজারাদারের এক প্রতিনিধি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানতে কিছুক্ষণ পর পরই মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু তা কেউই মানছে না। কথা কেউ শুনছেন না।

সিরাজগঞ্জ থেকে হাটে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছিলেন আসলাম মিয়া। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মাত্র মাঝারি আকারের ৩টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, এবার বড় গরুর চাহিদা কম। অনেকে কম দামের গরু খুঁজছে। প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম দাম হাঁকছেন। এই দামে গরু বিক্রি করলে লালন-পালনের জন্য ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবানা।

তিনি আরও বলেন, খামারিরা কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে পশু মোটাতাজা করে। বর্তমানে পশুর খাবারের দাম যে হারে বাড়ছে, সেই হারে পশুর দাম বাড়েনি। সারা বছরের লালন-পালনের খরচের চেয়ে একটু বেশি দাম পেলেই সব গরু ছেড়ে দেব।

এদিকে কোরবানির পশু সরবরাহে চালু হয়েছে রেলওয়ের বিশেষ ট্রেন ‘ক্যাটেল সার্ভিস’। বুধবার সকালে জামালপুর থেকে পশুবাহী ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে। প্রথম ট্রিপে ২৬১টি গরু নিয়ে ঢাকায় আসে ট্রেনটি।

জামালপুর থেকে প্রতিটি গরু আনতে খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। সড়ক পথের চেয়ে কম খরচে গরু পরিবহন করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও যানজটসহ অন্যান্য ভোগান্তি ছাড়াই গরু পরিবহন করতে পেরে স্বস্তি ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামিল বলেন, বেপারিদের চাহিদা থাকলে আরও সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত চাহিদা পাওয়া যায়নি।

দনিয়া প্রতিনিধি জানান, হাটের বেপারিরা গরুর দাম চাইছে চড়া। সে কারণে ক্রেতারা গরু কিনছে কম। দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা পশুর হাটে এমনটিই দেখা গেছে।

হাটে ১২ থেকে ১৫ হাজার গরু ওঠেছে। তারপরও খামারিরা বলছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় হাটে গরু কম। ঈদের বাকি আছে আরও দু’দিন। শেষের দিকে গরুর সংকট দেখা দিতে পারে। সে জন্য বেশি দরে বিক্রির আশায় গরু বিক্রি করছে না।

এ হাটে ১৩শ’ কেজি ওজনের গরু ওঠেছে। নাম রাখা হয়েছে কালো পাহাড়। এটির মূল্য হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। গরুর মালিক আবুল শেখ। মাদারীপুরের শিবচর থেকে এ গরু নিয়ে হাটে আসেন। ক্রেতারা সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাম বলেছেন।

উত্তরা প্রতিনিধি জানান, উত্তরায় জমে ওঠেছে পশুর হাট। উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে অবস্থিত এই হাটে পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়াসহ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-ছাগল আনা হয়েছে।

তবে দামের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই বাজারে ৪০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা দামের গরু এবং ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের ছাগল পাওয়া যায়।

উত্তরা পশুর হাটের ইজারাদার নূর হোসেন জানান, মাঠে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল এসেছে। বিকিকিনিও শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ভালো বেচাকেনা হবে।

চিত্রদেশ//এফ//

Related Articles

Back to top button