মুজিব চিরন্তন উদ্বোধন
স্টাফ রিপোর্টার:
বর্ণিল আয়োজনে ইতিহাসের দুই মাহেন্দ্রক্ষণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করেছে বাংলাদেশ। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ১০ দিনের আয়োজনের সূচনা হয়।
হাঁটতে হাঁটতে হাত নাড়ছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর হাসিমুখের পেছনে যেন নদীর ঢেউয়ের খেলা। মঞ্চের ওপর পাঁচটি সিঁড়ি যেন বাংলাদেশের পাঁচটি দশক পেরোনোর প্রতীকী নিদর্শন! এভাবেই সাজানো ‘মুজিব চিরন্তন’ আয়োজনের মঞ্চের সজ্জা। মঞ্চের ঠিক সামনেই ফুল দিয়ে সাজানো ও লেখা ‘মুজিব ১০০’।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের অনুষ্ঠান ‘মুজিব চিরন্তন’ শুরু হয় শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে। এর পর একে একে কয়েকটি দেশের গান শোনা যায় তাদের কণ্ঠে। ‘আমি জাতির পিতার স্বপ্নের দেশে জন্ম নিয়েছি’ গানটি দিয়ে শেষ হয় শিল্পকলা একাডেমির শিশুদের এই পরিবেশনা।
এরপর সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা শুরু করেন। তার অনুরোধে অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ মঞ্চে উপবিষ্ট হন।
এরপর কোরআন তিলাওয়াত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করার পর পরিবেশন করা হয় একিট ভিডিও অ্যানিমেশন এবং মুজিব শতবর্ষের থিম সং।
এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। প্রধানমন্ত্রী আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে সস্ত্রীক উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ৪টা ৩৬ মিনিটে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও তাঁর স্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাঁদের স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
আজকের অনুষ্ঠানে সশরীর যোগ না দিলেও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সাংবাদিক মার্ক টালি প্রমুখ।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত এক বছর থমকে গিয়েছিল সব আয়োজন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন গত এক বছর ধরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ ছিল, তার মাঝেই বাঙালির জীবনে এল উদযাপনের আরেক মাহেন্দ্রক্ষণ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। জাতীয় পর্যায়ে দশ দিনের অনুষ্ঠানমালা শেষ হবে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে।
জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মেলবন্ধনে ’অনন্য সময়’ পার করছে বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন, সোনার বাংলা গঠনের জন্য সেই স্বপ্নযাত্রার আরেকটি পর্যায়ের সঙ্গে মেলবন্ধন।
‘এই মেলবন্ধন আমাদের শ্রদ্ধার, আমাদের ভালোবাসার মেলবন্ধন, আমাদের অগ্রগতির মেলবন্ধন। এভাবে ১০ দিনের যে প্রোগ্রামটা সাজানো হয়েছে, প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম, তিনি বিভিন্ন সময়ে যে অবদান রেখেছেন, সেগুলো যতটুকু সম্ভব তুলে ধরা। কেননা এই মহাকাব্যিক জীবনকেতো আমরা ১০ দিনের মধ্যে তুলে ধরতে পারব না।’
জোড়া উদযাপন ঘিরে ওই এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে; রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টানানো হয়েছে প্রচুর ব্যানার-ফেস্টুন। বিভিন্ন ভবনে হয়েছে আলোকসজ্জা। ’মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই আয়োজনে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনে আনা হবে গত ৫০ বছরের ’স্বপ্নযাত্রার’ গল্প।
১০ দিনের আয়োজনের প্রথম দিন ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিমের উপর ভিত্তি করে সব আয়োজন সাজানো হয়েছে। শিশুকণ্ঠে সঙ্গীতের পর মুজিববর্ষের থিম সংয়ের মিউজিক ভিডিও প্রদর্শনা হয়। তারপর ছিলো বিমানবাহিনীর ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও। পরে স্বাগত সম্ভাষণ জানান জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
চিত্রদেশ//এফ//