আমাদের নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগ ছেলে মেয়ের চিন্তাধারা একেবারেই অন্যরকম । ওরা নিজেদেরকে আপন জগতে বন্দি রাখতে পছন্দ করে। বয়:সন্ধিক্ষণে এলে ( এ সময় শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ও একসাথে শুরু হয়) ওরা ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। পড়ালেখার মাঝে মাঝেই কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শোনে, মোবাইল টিপে, গেইম খেলে, ইংরেজী মুভি দেখে, কার্টুন দেখে ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়েই ওরা ব্যস্ত। সবার সাথে খোলামেলা মিশতে যেতে ওদের যেন কোথায় দ্বন্দ। আর ওদের মুখের দিকে তাকালে মনে হবে তারা কত কি নিয়ে চিন্তিত। একটা অযাচিত গাম্ভীর্য্য ধরে রাখতে চায় সমস্ত মুখ-মন্ডলে। ওরা জোরে হাসতে চায় না, প্রাণখুলে কথা বলতে চায় না। অবশ্য এসব মেকি গাম্ভীর্য্য ওরা বোধহয় ওদের পরিবারের সদস্যদের সাথেই করে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ওদের এই গাম্ভীর্য্যপূর্ণ মুখটাই অন্যরূপ ধারণ করে। যাক, এর জন্য যে কারা দায়ী? পরিবার ,সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া বা রাজনৈতিক পরিবেশ। নাহ্ রাজনীতি নিয়ে ওদের খুব মাথাব্যথা নেই। তবে মিডিয়ার অনেক ভূমিকা আছে ওদের তৈরি করার জন্য। এই যে মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায়িক প্রসারের জন্য যে সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে তাতে নতুন প্রজন্মের তার নিজের জগৎ তৈরি করার দ্বার অবারিত। তাই এই প্রজন্ম আর বাইরের কিছু জানার আগ্রহ প্রকাশ করে না। একটা সুস্থ প্রজন্ম সুস্থ সমাজ ও দেশ উপহার দিতে পারে। পরিবারের প্রথম দায়িত্ব সন্তানদের স্বাভাবিক ও স্বত:স্বতফূর্ত করে গড়ে তোলা। যে কোন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনে সন্তানকে সঠিক শিক্ষা প্রদান করা ও সুন্দর কিছু গ্রহন করতে শিখানোর দায়িত্ব পরিবারেরই। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এইসব নতুন প্রজন্মের সঠিক বিকাশের জন্য শিক্ষামূলক কারিকুলাম অবশ্যই থাকা উচিত। সুন্দর কথা, বাণী, ইতিহাস, সুন্দর সুর, গান, গল্প, কবিতা আর পারিবারিক ও সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ , ভালোবাসা, মূল্যবোধ ইত্যাদি নতুন প্রজন্মের মধ্যে জাগ্রত না হলে একটি
সমৃদ্ধ সমাজ ও দেশ কিছুতেই তৈরি হবে না।
লেখক: কানিজ কাদীর