গল্প-কবিতা

মানবতা এবং মানবপ্রেম নিয়ে অবিরাম লিখে চলেছেন কবি ‘মেহেবুব হক’

কবি মোঃ মেহেবুবহক। পেশায় একজন কাস্টমস কর্মকর্তা হলেও তিনি মূলত মানবতার কবি। মেহেবুবহক মানব প্রেম এবং মানবতা নিয়ে লিখে চলেছেন অবিরাম। স্ত্রী আর সন্তানের অনুপ্রেরণায় মূলত তার লেখালেখির জগতে আসা। মানবতার কবি লিখে চলেছেন মানুষের কথা। মানুষ হয়ে মানবীয় গুণাবলি অর্জন করে প্রকৃত মানুষ হতে না পারলে মানবজীবনের সার্থকতা থাকে না- সেই বোধশক্তি জাগ্রত করার জন্য তিনি বারবার সমাজের মানুষকে আহ্বান করেছেন তাঁর কবিতার ছন্দে।

এরই মধ্যে কবি মেহেবুব হকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার নীলপদ্ম’ দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নিরন্তর তুমি’ তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মানবতার দর্পণ’ সবগুলোই অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়।
এবার (২০২০) সালে চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘নীল প্রজাপতি’ অনিন্দ্য প্রকাশ এবং পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ ‘নাতে রাসুল (সা:)’ প্রকাশিত হয়েছে পারিজাত প্রকাশনী থেকে।

সম্প্রতি এবারের একুশে বইমেলায় তাঁর নতুন প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ, কবিতা, কবি জীবন, এবং তাঁর সাহিত্য ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে ‘চিত্রদেশ’ এর সঙ্গে। তার কবিতা, কবি ভাবনা, ইসলামি চিন্তা, মানবতা, মানবপ্রেম সমাজের অসংগতি প্রভৃতি নিয়ে কথা বলেছেন অকপটে। পাঠকদের জন্য তারই কিছু অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো।
সাক্ষাতকার নিয়েছেন- শেখ লাভলী হক লাবণ্য

চিত্রদেশ: এবারের বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে
মেহেবুব হক: এবারের ২০২০ একুশে বইমেলায় আমার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। একটি কবিতার বই ‘নীল প্রজাপতি’ বের হয়েছে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে। আরেকটি ‘নাতে রাসুল (সা:)’ বের হয়েছে পারিজাত প্রকাশনী থেকে

চিত্রদেশ: ‘নাতে রাসুল (সা:)’ নিয়ে এটা আপনার কততম বই?

মেহেবুব হক: ‘নাতে রাসুল (সা:)’ নিয়ে এটিই আমার প্রথম বই।

চিত্রদেশ: ‘নাতে রাসুল (সা:)’ নিয়ে আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?

মেহেবুব হক: বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যে, আমরা যদি ইসলাম ধর্মকে ভালোভাবে জানতে চাই। তাহলে আগে আমাদেরকে আল্লাহ রাসুল (সা:) কে জানতে হবে। পড়তে হবে। বুঝতে হবে। আমি মনে করি, ইসলাম ধর্মের বেসিক জানতে গেলে অর্থাৎ শরিয়ত সুচারুরুপে পালন করতে গেলে আল্লাহ রাসুলের প্রতি মহব্বত থাকতে হবে। একবার যখন আল্লাহ রাসুলের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ মহব্বত তৈরি হবে। তখন হযরত মুহাম্মদ (সা:) উপর যে দ্বীন এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই দ্বীনকে সেই শরিয়তকে আমরা সবাই পালন করতে সমর্থন হবো। সেই হিসেবে আমি মনে করি ‘নাতে রাসুল (সা:)’ যদি বাংলাদেশের মানুষের কাছে থাকে এবং তারা যদি রাসুল প্রেমিক হয় তাহলে মানুষের ঈমান বৃদ্ধি পাবে। দ্বীন পালনের তৌফিক পাবেন।

চিত্রদেশ: আপনার ‘নীল প্রজাপতি’ কাব্যগ্রন্থটি কোন শ্রেণীর পাঠকদের কথা চিন্তা করে লিখেছেন?

মেহেবুবব হক: প্রথমে বলি ‘নীল প্রজাপতি’ কাব্যগ্রন্থের প্রেক্ষাপট একটু ডিফরেন্ট। মানুষে মানুষে প্রেম, এর সাথে পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। মানুষের পাশে থাকা। বিপদে মানুষের পাশে বন্ধুর মতো দাড়ানো। আসলে মানবতার কথা, মনুষত্বের কথা এই বিষয়গুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ‘নীল প্রজাপতি’ কাব্যগ্রন্থে। আমি এই বিষয়গুলো নিয়েই লেখার চেষ্টা করেছি। বর্তমান সময়ে এই কন্টাকীর্ণ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় মানুষ আবদ্ধ । যার মায়াজালে মানুষ জড়িত থেকে আমার এই কবিতাগুলো পড়ে পড়ে মানুষের ভিতরে একটা নতুন বোধের জন্ম নেয়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে মানুষ। সবচেয়ে চেয়ে বড় সত্য হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ধর্ম হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের এই যে দরদ। মানুষের প্রতি মানুষের এই যে অনুভূতি এটাই হচ্ছে বড় ধর্ম। সেজন্যই তো রাসুল (সা:) বলেছেন ‘যার দ্বারা মানবতার উপকৃত হয় সেই মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম। এই মূল কথাগুলোই এ পৃথিবীতে বিভিন্ন মহামানব একেক সময় বলে গেছেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ধর্ম হচ্ছে মানব ধর্ম। আমি যদি একজন মানুষের পাশে থাকি, কাছে থাকি। বিপদে-আপদে তাকে সাহায্য করি। তাহলেই কিন্তু আমি আমার ধর্মসহ সকল ধর্মের মানুষকে ভালোবাসতে পারবো। এই কথাগুলো, এই অভিব্যক্তটাই আমি একজন মানবতাবাদী লেখক হয়ে আমার লেখনিতে তুলে ধরেছি।

চিত্রদেশ: ‘নীল প্রজাপতি’ কাব্যগ্রন্থে কয়টি কবিতা স্থান পেয়েছে?

মেহেবুব হক: ৬৮টি কবিতা স্থান পেয়েছে।

চিত্রদেশ: ‘নাতে রাসুল (সা:)’ কাব্যগ্রন্থটি কোন শ্রেণীর পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত করেছেন?

মেহেবুব হক: বাংলাদেশে এক শ্রেণীর পাঠক আছেন যারা ইসলামি সাহিত্য পড়তে পছন্দ করেন। আমরা কাজী নজরুল ইসলাম, কবি ফররুখ আহমদ, গোলাম মোস্তফার নাতে রাসুল পড়েছি। তবে আমি মনে করি বর্তমান প্রেক্ষিতে কবি ফখরুখ আহমদ এর পর থেকে বাংলা সাহিত্য নাতে রাসুলের শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নাতে রাসুল রচনায় কেউ সেভাবে এগিয়ে আসেনি। সেই শূণ্যতাকে আমি পূরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা যে নবী রাসুল প্রেম, আশেকে রসুলের যে ক্যারেক্টার কেমন হওয়া উচিত, নবীর প্রতি কেমন ভালোবাসা থাকা উচিত সেটাই আমি আমার মতো করে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রচিত করেছি। এটা পাঠ করে বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি। এছাড়াও বিভিন্ন তরিকার মানুষ যারা মানুষে প্রেম মহব্বতের কথা বলে, নবী রাসুলের কথা বলে সে সমস্ত মানুষের কাছে আমার এই ‘নাতে রাসুল (সা:)’ কাব্যগ্রন্থটি খুব সমাদৃত হবে বলে মনে করি।

চিত্রদেশ: এই পর্যন্ত আপনার কয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে?

মেহেবুব হক: এ পর্যন্ত আমার পাচঁটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

চিত্রদেশ: নামগুলো যদি বলেন?

মেহেবুব হক: আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম হচ্ছে ‘ভালোবাসার নীলপদ্ম’ দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নিরন্তর তুমি’ তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মানবতার দর্পণ’ সবগুলোই অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। এবার ২০২০ একুশে বইমেলায় চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘নীল প্রজাপতি’ অনিন্দ্য প্রকাশ এবং পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ ‘নাতে রাসুল (সা:)’ প্রকাশিত হয়েছে পারিজাত প্রকাশনী থেকে।

চিত্রদেশ: ‘নাতে রাসুল (সা:)’ কাব্যগ্রন্থে কয়টি কবিতা রয়েছে?

মেহেবুব হক: ৫৭টি কবিতা রয়েছে।

চিত্রদেশ: এই ৫টি কাব্যগ্রন্থ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে কোন বইটি আপনার কাছে বেস্ট বলে মনে হয়?

মেহেবুব হক: ৫টি বইয়ের মধ্যে থেকে তো দুটি বই মাত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেই দুটা নিয়ে বলা একটু দুরহ হয়ে যাবে। কিছুদিন গেলে হয়তো বলা যাবে। আসলে প্রত্যেক কবির কাছে তার প্রতিটি কাব্যগ্রন্থই সন্তানের মত। আসলে সে লিখে চলে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। আপনারা জানেন যে, আমার রচিত ‘নিরন্তর তুমি’ বেস্ট সেলার বই। বাংলাদেশের বাংলা কবিতার মধ্যে তিন নম্বর ক্যাটাগরিতে আছে এটি। এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য। আমি যেটা দেখেছি বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশনের কাছে এই বইটি খুবই জনপ্রিয়। তারুণ্যের আবেগ, অনুভূতির বিষয়টা আমার কাব্যগ্রন্থ বারবার ফুঠে উঠেছে। যে জন্য পাঠকদের কাছে সাড়া ফেলেছে এবং তরুণ তরুণীদের মনে বেশ নাড়া দিয়েছে। একই সঙ্গে আমি বলব সাহিত্যে মূল্যের বিচারে ‘মানবতার দর্পণ’ ‘নীল প্রজাপতি’ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি কাব্যগ্রন্থে আমি অনেক বেশি মানবতার কথা, মানুষের কথা, প্রেম-ভালোবাসার কথা বিষয়গুলো অনেক বেশি ফুটিয়ে তুলেছি। কিন্তু আমার প্রথম কাব্যেগ্রন্থে ‘ভালোবাসার নীলপদ্ম’ এ সবকিছুই রয়েছে।যেমন- ইসলামি কবিতা রয়েছে, ভালোবাসা- প্রেম, দুঃখ -কষ্ট আছে, ব্যথা আছে, বেদনা আছে। একজন মানুষের জীবনে যে কয়টা দিক থাকে সবকিছু মিলিয়ে ‘ভালোবাসার নীলপদ্ম’ বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে ‘নিরন্তর তুমি’ এবং ‘মানবতার দর্পণ’ এর সাহিত্য মূল্য আছে বেশি।

mehbubb haq
কবি মেহেবুব হক

চিত্রদেশ: ‘নিরন্তর তুমি’ বেস্ট সেলার বই হওয়ার কারণ কী বলে আপনার মনেহয়? আপনি যখন কাব্যগ্রন্থটি লেখেন তখন কি আপনার মনে হয়েছে বইটি বেস্ট সেলার হবে? বা পাঠক মহলে এতোটা সাড়া ফেলবে?

মেহেবুব হক: আমি হয়তো সেভাবে ভাবিনি। আমি লিখি আমার মনের নির্মল আনন্দ থেকে। আমি নিজেকে নিজে আনন্দ দিতে চাই। আমার আনন্দের সাগরে আমি নিজে বাস করতে চাই। আনন্দের সাগরে ডুব দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে আনন্দ দেয়ার জন্য লিখে চলেছি। সেই প্রেক্ষিতেই ‘নিরন্তর তুমি’ কাব্যগ্রন্থটি লেখা। প্রথমে মনে হয়েছিল আমি পুরোপুরি প্রেমের উপরে একটি কাব্যগ্রন্থ লিখবো। ‘নিরন্তর তুমি’র সবগুলো কাব্যই প্রেম নিয়ে রচিত। মানুষের জীবনে প্রেম সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গই বলে আমি মনে করি। মানুষের জীবনে প্রেমই হলো সবচেয়ে বড় বিষয়বস্তু। ভিতরে প্রেম না থাকলে তাহলে এই জগতটা কারো কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় না। প্রেমের বিভিন্ন রুপ আছে, রস আছে, গন্ধ আছে। প্রেমের যে কত ক্যাটাগরি হতে পারে, প্রেমের কত রকম হতে পারে সেটাই আমি আমার লেখনির মাধ্যমে ‘নিরন্তর তুমি’ কাব্যগ্রন্থে ফুটিয়ে তুলেছি। যেখানে ‘প্রথম প্রেম’ ‘শেষ প্রেম’ ‘ক্ষণিক প্রেম’ ‘গুপ্ত প্রেম’ ‘ব্যর্থ প্রেম’ ‘ক্লান্তি প্রেম’ ‘অনুতপ্ত প্রেম’ প্রেমের যে বিভিন্ন ধারা রয়েছে, অনুভূতির যে প্রকাশ রয়েছে, আমি আমার মত করে সেটা লেখনিতে তুলে ধরেছি। যার জন্য তরুণ পাঠকদের কাছে বইটি বেশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কারণ বিভিন্ন অনুভূতি, বিভিন্ন সময়ে যে তাদের হৃদয়ের দোলাচলে আমার এই কাব্যগুলো মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সে কারণেই তারা এটি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছে। এবং তাদের হৃদয়ে বইটি ঠাই করে নিয়েছে। এবং এটা রকমারি ডটকমে বেস্ট সেলার হয়েছে।

চিত্রদেশ: আপনার কবিতায় কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পায়?

মেহেবুব হক: আমার কবিতায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় মানুষের জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা প্রেম, ভালোবাসা, দুঃখ,কষ্ট, আবেগ এবং মানবতার দিকটা। প্রত্যেক কবিতার শেষে আমার যেন মনেহয় একজন মানুষের কাছে মানুষের মূল্যায়নটাই সবচেয়ে বেশি। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা দান করলেও একটা মানুষের মূল্য হবে না। মানবতার মূল্যটাই সবচেয়ে বেশি, সেই কথাই আমি আমার কবিতায় সবচেয়ে বেশি তুলে ধরি।

চিত্রদেশ: দেশের মধ্যে আপনার প্রিয় কবির নাম বলুন? এবং কোন বিষয়টির জন্য আপনার কাছে তার বা তাদের কবিতারগুলো ভালো লাগে?

মেহেবুব হক: আমি যখন ছোটবেলায় কবিতা পড়তাম তখন আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাই আমার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং আমার সাহিত্য চর্চায় ভিতরে তাদের রেশ রয়েছে। এছাড়াও জীবনানন্দ দাশ, ফখরুখ আহমদ, কবি গোলাম মোস্তফা, মীর মোশাররফ হোসেন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। আর আধুনিককালে বাংলা কবিদের মধ্যে কবি নির্মললেন্দু গুণ স্যার, কবি হেলাল হাফিজ স্যার উনাদের কবিতা আমি পড়ি। আরো রয়েছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, পূর্নেন্দপত্রি, তাদের কবিতার যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক কবিতা, আর বিশেষ করে প্রেম ভালোবাসার বিষয়টা।

চিত্রদেশ: আপনি কোন ধরনের পাঠকদের কথা মাথায় রেখে কবিতা লেখেন?

মেহেবুব হক: আমি যখন লিখি তখন পাঠকদের কথা আমার মনে থাকে না। আমি সব বয়সের জন্যই লিখি।

চিত্রদেশ: কবিতা লেখার শুরুটা কীভাবে?

মেহেবুব হক: কবিতা লেখার শুরুটা হচ্ছে খুবই ইন্টারেস্টিং। ২০১৮ সালের ঘটনা। আমি আমার স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে একদিন আসছি। হোটেল সোনার গাঁও এর সামনে গাড়িতে বসে আছি। তো হঠাৎ করে আমার স্ত্রী আমাকে বলে উঠল, ‘তুমি তো অধিকাংশ সময় ফেসবুক চালাও তুমি কি লিখালিখি করতে পারোনা।’ আমার ছেলেও একই সুরে বলে উঠলো ‘আব্বু-তুমি তো কবিতা লিখতে পারো। কাব্যগ্রন্থ লিখতে পারো। খুবই ভালো হবে।’ স্ত্রী এবং সন্তানের –এই যে অনুপ্রেরণা আমার হৃদয়ে বেশ দাগ কাটল। তাদের উৎসাহে আমার রক্তে একধরণের শিহরণ বয়ে গেল। এরপর থেকেই যেন কবিতা নিয়ে আমার নিরন্তর পথচলা। আমি লিখতেই চলেছি। লিখেই চলেছি। লিখেই চলেছি। এমনিভাবে আমার পাচঁটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলো। ২০১৯ সালে প্রথমে ‘ভালোবাসায় নীলপদ্ম’ দিয়ে আমি শুরু করলাম। লিখলাম। আর ২০২০ সাল আসতেই আমার পাচঁটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে গেল। এ যেন আমার কাছে মনে হয় বেশ অলৌলিক ঘটনা। সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় আমি পেরেছি। আর পেরেছি আমার স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য। আমার স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা। কারণ তাদের এই উৎসাহ-অনুপ্রেরণা না থাকলে আমি কখনোই লিখতে পারতাম না।

চিত্রদেশ: আপনি আসলে কোন ধরনের লিখালিখাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

মেহেবুব হক: আমি আসলে কোন ধরণ বুঝে কোনো কবিতা লিখিনা। আমাদের ব্যক্তি জীবনে, সমাজ জীবনে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা যখন আমার মনে নাড়া দেয়, সেটা হতে পারে কোন নৃশংস হত্যা, ধর্ষণ, অন্যায়-অত্যাচার। যেমন আমি আবরার হত্যা, তনু হত্যা নিয়ে লিখেছি। অথবা যেকোন বিদ্রোহের ঘটনা আমাকে যখন খুব নাড়া দেয়। যা মনে কোন অনুভূতির জন্ম দেয় তখনই আমি কবিতা লিখি। আমি হৃদয়ের অনুভূতি থেকে কবিতা লিখি। আমি যখন কবিতা লিখতে বসি। একটা মিউজিক আছে আর্মেনিয়ান মিউজিক, সেই মিউজিকটা চলে আর আমি আমার অনুভূতিগুলোকে অন্তরের অন্তস্থলে নিজের মত করে সেগুলোকে পরিচর্যা করে নিজের মত করে লিখেতে থাকি। তখন হয়ে যায় একেকটা কবিতা।

চিত্রদেশ: কবিতায় কী গল্প বলা যায়? কাহিনী কবিতা বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মেহেবুব হক: অবশ্যই । প্রতিটা কবিতাই একেকটা জীবনের গল্প। আসলে একটি কবিতাই কোন একটা জাগতিক কোন একটা বিষয়কে অনেক সুন্দর করে একটি ফ্রেমে ফুটিয়ে তোলা যায়। সে অর্থে বলা চলে একেকটি কবিতা একেকটা ছোট গল্পের মত।

চিত্রদেশ: এই সময়ের কবিদের কবিতা পড়েন? কার কবিতা ভাবায়? মুগ্ধ করে?

মেহেবুব হক: কবি নির্মললেন্দু গুণ ও কবি হেলাল হাফিজের কবিতা।

চিত্রদেশ: আপনার ছেলেবেলা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি? জন্ম? বেড়ে উঠা? পড়াশোনা? কর্মক্ষেত্র?

মেহেবুব হক: যশোরে আমার ছোটবেলা কেটেছে। সেখান থেকেই স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছি। এরপর যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়াশোনা এইচএসসি পাশ। এরপর বুয়েট থেকে বিএসসি পাশ করেছি। এরপর বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি। আমি তিনবারই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছি প্রথমবার আমি জনস্বাস্থ্যেও ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম। (২৯ তম বিসিএস) ৩০তমে আমি এসিসট্যন্ট কমিশনার কাস্টমস ক্যাডারে যোগদান করলাম। তৃতীয়বার ও আমি উত্তীর্ণ হয় আমি এসিসট্যান্ট কমিশনার পিডাব্লিউডি তেও চাকরি পেয়েছিলাম। সেখানে যায়নি। বর্তমানে আমি বিসিএস কাস্টমস এন্ড এক্সাইজ কমিশনার বন্ড হিসেবে ঢাকাতে কর্মরত।

চিত্রদেশ: কবি পরিচয়ের বাইরেও আপনার একটি বড় পরিচয় আছে। আপনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তো একই সঙ্গে দুটো পরিচয়ের ভারসাম্য রক্ষা করেন কীভাবে?

মেহেবুব হক: আসলে আমার কোন কিছুইতো তেমন স্পেশাল কিছু মনে হয় না। আমি তো আসলে সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকি। হঠাৎ করে যখন আমার কোন অনুভূতি আমার মধ্যে এসে ভর করে সাথে সাথে আমি কম্পিউটারের ওয়ার্ডেও একটা পেইজ ওপেন করি । আর লিখতে শুরু করি। এবং খুব অল্প সময়ের ভিতর আমি আমার অনুভূতিটাকে নিজের মত করে প্রকাশ করি । আর সেটা একটা কবিতা হয়ে যায়। এভাবেই একেকটা কবিতা লেখা হয়ে যায়। এমন নয় যে আমি লিখছি বলে আমার চাকরিতে হ্যাম্পার করছে, আবার আমি চাকরি করছি বলেই আমার লেখালেখিতে সমস্যা হচ্ছে তাও নয়। কক্ষনো নয়। কিছুতেই নয়। বরং আমি সমানতালে দুটোই ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছি।

চিত্রদেশ: কার কবিতা আপনাকে বেশি অনুপ্রাণিত করে।

মেহেবুব হক: কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি কাজী নজরুল। জীবনানন্দ দাশ, ফররুখ আহমদ, নির্মললেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ।

চিত্রদেশ: পাঠকরা কী আগামিতে কবিতা ছাড়া আপনার কোন গল্প বা উপন্যাস পাবে?

মেহেবুব হক: আমি এটা বলতে পারছিনা। আমার প্রথমে ইচ্ছা আছে আমি কবিতার জগতেই থাকবো। কবিতাই লিখতে থাকবো আমি। কবিতার মাধ্যমে আমি মানুষে মানুষে প্রেম, দুঃখ, ব্যথা-বেদনাগুলোকে কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলবো। আপাতত আমি কবিতা নিয়েই ব্যস্ত থাকবো।

চিত্রদেশ: কবিতায় পাঠক তৈরিতে প্রকাশকদের কী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন?

মেহেবুব হক: কবিতায় পাঠক তৈরিতে প্রকাশকদের অনেক ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংগীত নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। এবং নাচের অনুষ্ঠান হয়। ঠিক এমনিভাবে যদি বিভিন্ন কবি, কবিতা নিয়ে এমন কোন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হতো, কিংবা কবিতা উৎসবের আয়োজন করলে পারলে তাহলে নবীন কবিদের আরো অনেক বেশি পৃষ্টপোষকতা দেয়া হতো। নবীন কবিদের তাদের কবিতা লেখায় আরো উৎসাহ, আগ্রহ তৈরি হতো। কবিতা লেখায় বিকাশ হতো। কবিতা পাঠকও তৈরি হতো।

 

চিত্রদেশ//এস//

 

Related Articles

Back to top button