জীবন চলে যায় জীবনের মত। আমরা সবাই পরিবার, সমাজ নিয়ে প্রতিটা দিন পাড়ি দিচ্ছি। একটি করে প্রতিটা দিন যায়। বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান,ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন সব রয়েছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে। সবার সাথে হাসি-খুশী, আনন্দ বেদনায় শরীক হয়ে সময় চলে যায়। কিন্তু সবার মন চলে তার নিজস্ব গতিতে। কারও মনের খবর আমরা জানি না। এই মন যেন সারাক্ষণ কি খোঁজে, কাকে খোঁজে যে তারই মত করে তার আত্মার সাথে মিশে থাকে। তাকে একটু সময় দেবে তার মত করে এ পৃথিবী দেখার । তার সাথে সে এ পৃথিবীর আকাশ দেখবে, ফুল দেখবে, পাখি দেখবে, নদী দেখবে, গাছগাছালি দেখবে, প্রকৃতি দেখবে। একসাথে একটু হাসবে, একটু খেলবে, একটু শ্বাস নেবে। না সে তো চারিদিকে কোথাও নেই । তাকে আমরা প্রতিনিয়ত খুঁজছি। মনের গহীনে তার জন্য অবিরত চলছে হাহাকার। সবার নিজকে গোছানো খুব প্রয়োজন। নিজের জীবন খুব দামী। সবার বিশ্রাম প্রয়োজন, ঘুমানো প্রয়োজন, শরীরটাকে সুস্থ রাখা প্রয়োজন। শুধু যেন প্রয়োজন নেই পাশের মানুষগুলোর হৃদয়ের অনুরণন শোনার, অব্যক্ত ভাষা বোঝার। জীবনে চলার পথে শুধুই কি বাস্তবতা! এখানের মনের সাথে আবেগেরও একটা সম্পর্ক আছে। আবেগহীন মানুষকে পাথরের সাথেই তুলনা করা যায় । মানুষের অনুভূতি আছে বলেই তার প্রকাশ থাকে। তবুও মানুষ এত কৃপণ কেন? নিজের কাছের মানুষগুলোর সাথে তার কিসের এত সংকোচ! কিসের এত বাধাঁ, কিসের এত হিসেব, নিকেশ?
মাঝে মাঝে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় যখন মানুষ একাকী নিজেকে নিয়ে ভাবে। তখন হয়তো নিজেকে পৃথিবীতে খুব একা মনে হয়। সবাই আসলে নিজেকেই বেশি ভালবাসে । সংসারে সবাই আছে। কিন্তু তবু মনে হয় সবাই শুধু সবার প্রয়োজনেই একে অপরকে বেঁধে রেখেছে। এট কি শুধুই প্রয়োজন না মায়র বাঁধন । আমরা কাছের মানুষগুলোকে দীর্ঘদিন চিনি। দীর্ঘবছর একসাথে কথা বলি, তর্ক করি, একই বিছানায় ঘুমাই,ঝগড়া করি, ভালোবাসি আরও কত ভাগাভাগি । কিন্তু তারপরেও অনেক সময়ই একে অপরকে মনে হয় কত অপরিচিত। কখনও কখনও মনে হয় যেন মন খুলে কথাও বলতে পারি না। মাঝে মাঝে যেন কষ্ট দানা বেঁধে উঠে মনের ভিতর। তবুও কারও ভিতরের অনুভূতি কাউকে ছোঁয় না। সবাই যেন শুধু সামনের দিকেই চলছে। সংসারে মন ভাঙ্গে অনেক কারণেই। তবু সংসারে সব দায়িত্ব পালন করতে হয়, হাসতে হয়, অভিনয় করতে হয়। কারও মনের অনুভূতির চেয়ে দায়িত্বটাই অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়। কারও মন ভাঙ্গলে বেশির ভাগই কারও কিচ্ছু যায় আসে না। নিজেকে নিজেই দৃঢ় করা ছাড়া কোন পথ নেই।
কখনো কখনো মানুষের মনটা এমন অস্থিরতায় ভোগে যে, সে চাইলেও তার মূল সমস্যা কারও সাথে ভাগাভাগি করতে পারে না। সে নিজে নিজেই যেন নিজের ভিতরে তার সমস্যার সমাধান খোঁজে, হতাশ হয়, আশায় বুক বাঁধে। কারণ সে জানে তার কষ্ট, যন্ত্রণায় কারও কিচ্ছু যায় আসবে না। অযথা কাউকে নিজের সমস্যার কথা বলে লাভ নেই। মানুষের মন বড় বিচিত্র। সে রাজ্যের গালগল্প করবে। কিন্তু অন্তরের অন্ত:স্থলের চাহিদাটুকু , সুখটুকু কোথায় তার খোঁজ কাউকে জানতে দিতে চায় না। কারণ সে নিজেকে খুব সম্মান করতে চায়, ভালবাসতে চায়। নিজেকে কারও কাছে দূর্বল করে তুলতে চায় না। নিজের সমস্যার সমাধান সে খুঁজে বের করতে চায় নানা ভাবে । কোন না কোন ভাবে সে সত্যিই তার সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়।
লেখক: কানিজ কাদীর