উদ্যোক্তার কথা

ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থাকলে অনেক মেধাবী নারীই ব্যবসায় আসবে: উর্মি

লাভলী হক লাবণ্য:

লেদার প্রোডাক্ট বা চামড়াজাত পণ্য এখন দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প খাত। রপ্তানিতে ভবিষ্যতে বড় আয়ের উৎস হবে চামড়াজাত পণ্য রফতানি। বর্তমানে তৈরি পোশাকের পরই দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চামড়া শিল্পে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছে অনেক মেধাবী নারী উদ্যোক্তারাও। তেমনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলেন ‘স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট’এর প্রোপাইটর মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি।

সম্প্রাতি চামড়াশিল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ‘মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি’-লিখেছেন লাভলী হক লাবণ্য।

চিত্রদেশ: ‘স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট’ এর যাত্রা শুরু হয় কবে? লেদার প্রোডাক্টের ব্যবসায় জড়িত হওয়ার ভাবনা এলো কীভাবে?

মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি:‘ স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট’ এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সাল থেকে। আমার এই বিজনেসের প্ল্যানটা আসে মূলত তখন থেকে যখন শপিংয়ে গিয়ে দেখতাম বিভিন্ন শোরুমগুলো চায়না ব্যাগে পরিপূর্ণ। বাজার ছেয়ে গেছে চায়নাব্যাগে। কাস্টমাররাও প্রচুর কিনতো। কিন্তু এই ব্যাগ বেশিদিন ব্যবহার করা যেতো না। ২/৩ মাস ব্যবহারের পর নষ্ট হয়ে যেত। তখন আমার মাথায় এলো মার্কেটে ব্যাগের যে চাহিদা, আমি যদি লেদারের ব্যাগ তৈরি করে বাজারে দিতে পারি তাহলে ক্রেতাদের কাছে লেদারের প্রোডাক্টগুলোকেও খুব জনপ্রিয় করা যাবে। এই ভাবনা থেকেই আসলে ‘স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট’ প্রতিষ্ঠা করি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমি যেহেতু আগে ‘র-লেদার’এর বিজনেস করতাম, সেজন্য আমার আগেই অভিজ্ঞতা ছিল।

চিত্রদেশ: লেদার প্রোডাক্টের বিজনেসে আসার আগে আপনার প্ল্যানিংটা কী ছিল? কার প্রেরণায় আপনি এই বিজনেসে এসেছেন?

মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি: আমি আজকের অবস্থানে এসেছি তার পিছনে রয়েছে পুরোটাই পরিশ্রম। একই সঙ্গে সততা, ইচ্ছা, আগ্রহ, নিষ্ঠা ছিল প্রবল। আমি মনে করি, প্রতিটা মানুষেরই পরিশ্রম না করলে সফল হতে পারবেনা। আমি আসলে কখনো ভাবিনি ব্যবসা করবো। একেবারে ছোট বেলা থেকেই ভাবতাম ডাক্তার হবো। ফার্স্ট ক্লাস জব করবো। তো যে কারনেই হোক সেটা আর হয়নি। তারপর বিয়ে হয়ে যায়। তখন ভাবলাম বিসিএস দিয়ে চাকরিতো করতেই হবে। তারপর হঠাৎ করেই কিভাবে যে ব্যবসায় চলে এলাম। সেটারও একটা গল্প আছে- আমাদের এক আত্মীয় প্রায় আমার বাসায় বেড়াতে আসতেন। তিনি ‘র-লেদার’এর বিজনেস করতেন। উনার মুখে এই ব্যবসার কথা শুনে আমার খুব ভালো লাগতো। উনি যদি এই বিজনেস করতে পারে আমি কেন পারবো না। তারপর আমার হাজবেন্ডের কাছে বিষয়টা বললে সে বেশ উৎসাহ দেয়ায় ব্যবসা শুরু করি।

চিত্রদেশ: আপনি যখন সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবসা শুরু করবেন, তখন একজন নারী হিসেবে আপনার পারিপার্শ্বিক সমর্থন কেমন ছিল?

মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি: শুরুর দিকে শশুর বাড়ির দিক থেকে একটু-আধট ুবাধাঁ বিপত্তি যে ছিল তা নয়। তবে আমার ব্যবসা করার প্রতি আমার হাজবেন্ডের সমর্থন, উৎসাহ দুটোই ছিল। সে আমাকে বলতো ৯- ৫টা চাকরি না করে তুমি বরং কোনো ব্যবসা করো। যাদের মেধা আছে তারা ব্যবসা করলে সফল হয়। তুমি মেধাবী তুমি ব্যবসা করলে ভালো করবা। এই বিজনেস করার জন্য আমার হাজবেন্ডের কাছ থেকে আমি পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি।

চিত্রদেশ: নতুন নারী উদ্যেক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

মাসুদা ইয়াসমীন উর্মি: বেশির ভাগ মানুষেরই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবে এমনই স্বপ্ন থাকে। বর্তমানে কিন্তু সে ধারণা পাল্টেছে। এখন বেশির ভাগ মানুষই ভাবে ‘আমরা চাকরি করবোনা, চাকরি দিব’। চাকরি করলে প্রকৃতপক্ষে স¦াবলম্বী হওয়া যায়না। কিন্তু মানুষ যখন বিজনেস করে তখন একটা স্বাবলম্বী হতে পারে। বরং ব্যবসা করলে কতগুলো মানুষের কর্মস্থান করা যায়। নিজের মতো করে কিছু সৃষ্টি করা যায়। নারীদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রথম যে সমস্যা দেখা যায় সেটা হলো পুজিঁর অভাব। পুজিঁর অভাবে অনেক নারীরা ব্যবসার উদ্যোগ নিতে পারেনা। আমি মনেকরি ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের যোগ্যতা বেশি। সেক্ষেত্রে সরকার এবং ব্যাংকগুলো যদি নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থাকে তাহলে অনেক মেধাবী নারীই ব্যবসায় আসবে। পাশাপাশি পরিবারের সমর্থনও জরুরি।

চিত্রদেশ: একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে লোনের সহায়তা কেমন পাচ্ছেন?

মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি: ব্যবসার প্রথম পর্যায়ে লোনের কোন সাপোর্ট পাইনি। ব্যাংকগুলো যদিও বলে থাকে যে নারীদেরকে ২৫ লাখ পর্যন্ত লোন দেয় না। আমি দেশের নামকরা ৪/৫টি ব্যাংকে ঘুরেছি। কিন্তু সেখানে জ্জ লাখ টাকার বেশি লোনের সুবিধা পাইনি। এই টাকায় কি আর ব্যবসা করা যায়।

চিত্রদেশ: সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কী করা উচিত বলে আপনার মনেহয়?

মাসুদা ইয়াসমীন উর্মি: নারী উদ্যোক্তাদের কে এগিয়ে নিতে এবং দেশীয় শিল্পে নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ব্যাংক লোনের সর্বনিম্ন পরিমানটা বাড়ানো উচিত। একইসঙ্গে সহজশর্তে অল্প সময়ে ব্যাংক লোন প্রদান করা উচিত। নারী উদ্যোক্তাদের লোন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক বলে আমার মনেহয়। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে হবে। ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের সহজেই লোন দিতে চায় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের কে সহজশর্তে বেশি টাকা লোন দেয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশ আরোপ করতে হবে। যদিও নিয়ম আছে সম্পূর্ণ লোনের ১৫ পার্সেন্ট মেয়েদেরকে দিতে হবে। বাস্তবে ৫ পার্সেন্ট লোন পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ।

চিত্রদেশ: আপনাদের লেদার আইটেমগুলোর সম্পর্কে জানতে চাই? আপনাদের প্রতিষ্ঠানের কী কী লেদার প্রোডাক্ট রয়েছে? অন্যদের চেয়ে আপনাদের প্রোডাক্টের ভিন্নকা কী? আপনাদের প্রোডাক্ট টেকসই কতখানি?

মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি: আমাদের ‘স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট’ অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে একেবারেই ভিন্নধর্মী। কারণ অন্য যাদের লেদারের ফ্যাক্টরি আছে তারা লোকাল কোয়ালিটি দিয়ে লেদার প্রোডাক্ট তৈরি করে মার্কেটে সাপ্লাই দেয়। কিন্তু আমরাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান এক্সপোর্ট কোয়ালিটি লেদার দিয়ে প্রোডাক্ট তৈরি করে দেেেশর বাজারে দিচ্ছি। স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট ১০০% টেকসই।
বিনিয়োগ বার্তা: বাংলাদেশে লেদার প্রোডাক্টের চাহিদা কী বাড়ছে না কমছে বলে আপনার মনেহয়?
মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি: দেশে দিনদিন লেদার প্রোডাক্টের চাহিদা প্রচুর বাড়ছে। লেদার প্রোডাক্টের প্রতি মানুষ এখন বেশ ঝর্ঁুকছে।

চিত্রদেশ: স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট- এর তৈরি প্রোডাক্ট বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে কী?

মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি: আমরা এখনো দেশের বাইরে সরাসরি রপ্তানি করিনি। তবে ইনডাইরেক্টলি করছি। তবে রপ্তানি করার পরিকল্পানা করছি। সে অনুযায়ী কার্যক্রমও চলছে।

চিত্রদেশ: আপনারা এ পর্যন্ত কতটি ফেয়ারে অংশগ্রহণ করেছেন?

মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি: দেশ বিদেশ মিলিয়ে প্রায় ১০/১২ টা ফেয়ারে অংশগ্রহণ করেছি। এর মধ্যে জাপান ফ্যাশন অল টোকিও ফেয়ার, বাংলাদেশ ব্যাংক ফেয়ার, সিলেট এসএমই ফেয়ার, বাণিজ্যমেলা, আইপিউ সম্মেলনসহ প্রভৃতি।

চিত্রদেশ//এলএইচ//

Related Articles

Back to top button