উদ্যোক্তার কথা

‘উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প’

তোফাজ্জল হোসেন তপু

দেশের যেসব তরুণ-তরণীরা সফল উদ্যোক্তা হতে চান। উদ্যোক্তা হলে কী কী গুণের অধিকারী হতে হবে। কী কী বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কোন সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করবেন।দেশের বাজারে পণ্যের চাহিদা সৃষ্টির জন্য কী করতে হবে। মানসিকভাবে কেমন থাকতে হবে সবকিছুই আপনারা জানতে পারবেন একজন চলমান উদ্যোক্তার ‘উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প ‘ থেকে। জাতীয় অনলাইন দৈনিক নিউজ পেপার ‘চিত্রদেশ ডটকম’

সেসব উদ্যােক্তাদের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের কিছু সফল, উদিয়মান, তরুণ, পরিশ্রমী, মেধাবী অগ্রগামী উদ্যোক্তার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প নিয়েই চিত্রদেশ’র এই নিয়মিত আয়োজন। আপনিও আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে আপনার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প বলে। আপনার সফলতা, ব্যর্থতা, নানা প্রতিকুলতা, অর্জনের গল্পগাথাঁ শেয়ার করে আগামির তরুণ উদ্যোক্তাদের চলার পথকে আরো সুগম করুন।

আপনি আপনার গল্পটি লিখে আজই আমাদের ইমেইল করুন। অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে ইনবক্স করুন।

e-mail:  chitrodesh@gmail.com , https://www.facebook.com/Chitrodeshcom-103573677807110/

আমাদের এ আয়োজনে এবার আপনাদের সঙ্গী হয়েছেন। এনেক্স লেদারের চেয়ারম্যান, তোফাজ্জল হোসেন তপু। আমরা আজ তার থেকে শুনবো একজন ‘উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প’। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প :

তোফাজ্জল হোসেন তপু:

আমি যখন একটু বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বাবাকে একজন উদ্যোক্তা হিসাবে দেখে এসেছি। বাবা বিভিন্ন জাতের ফলের বীজ থেকে চারা উৎপাদনের জন্য আমাদের এলাকার সু পরিচিত ছিলেন। আমি নিজ চোখে দেখেছি কতটা ধৈর্য নিয়ে এই চারাগুলো বাজারে বিক্রি করতেন। মাঝে মাঝে আমাকে বাজারে নিয়ে যেতেন আমাকে দেখাতে এবং শিখাতে কিভাবে ১ টাকা ২ টাকা করে একটা পেঁপের চারা, ২৫ পয়সা আর ৫০ পয়সা করে মরিচের চারা বিক্রি করতে করতে দিন শেষে ৫০০/৭০০ টাকা বিক্রি করা যায়। আমার বয়স যখন ৮ বছর বয়স তখন থেকে আমি একা একা বাজারে গিয়ে পেঁপের, মরিচের এবং বেগুনের চারা বিক্রি করেছি। প্রথম প্রথম কম দামে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে বাড়ি চলে আসতাম। বাবা একদিন বললেন কতগুলো চারা কত টাকা বিক্রি করেছো। তুমি যা বিক্রি করেছো সমপরিমাণ চারা আমি দ্বিগুন টাকায় বিক্রি করব। আমি বললাম কীভাবে সম্ভব? বাবা বললেন তোমার ধৈর্য্য কম আর আমার ধৈর্য্য বেশি। তুমি যখন দেখ যে, ৩০ মিনিটের ভিতরেও কেউ কিনছেনা তখন কম দামে বিক্রি শুরু করে দাও তাই তাড়াতাড়ি বিক্রি শেষ হয়ে যায়। আমি জানি চারা বিক্রি হবেই তাই ধৈর্য নিয়ে বসে থাকি । এবং বেশি দামে বিক্রি করতে পারি।

একজন উদ্যোক্তার সাহসিকতা :

১৯৯৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম কিন্তু নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ না করার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। বাবা রাগ করে আমার লেখাপড়া বন্ধ করে দিলেন। একদিন মামা বাড়িতে ক্ষেতে ধান কাটছে এমন সময় আমার চাচাতো বড় মামা সামসু মামা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোফাজ্জল তুই এবার পরীক্ষার্থী এখানে কাজ করছিস যে? আমি কোন কথা বলিনি। বাবা বললেন লেখাপড়া করে আর কী হবে। পরীক্ষায় খারাপ করেছে। তাই মাস্টাররা পরীক্ষা দিতে দিচ্ছে না। মামা বললেন তাতে কি হয়েছে। আবার আগামি বছর পরীক্ষা দিবে। মামা বললেন জামাই ছেলেটার লেখাপড়া বন্ধ কইরেন না। মামা চলে যাওযার পর বাবাকে আমি বললাম আব্বা আমি আবার পরীক্ষা দিব । কথা দিলাম যদি পাশ না করতে পারি তাহলে এই মুখ নিয়ে আর কোন দিন আপনার সামনে এসে দাঁড়াবোনা । সেই দিনই আমি একজন সাহসি উদ্যোক্তা। আমার জীবনের ব্যার্থতাগুলোই আমাকে আজ উদ্যোক্তা হতে সাহস দিয়েছে। এই রকম অসংখ্য ব্যর্থতাকেই আমি সাফল্যের গল্প বানিয়েছি।

১. একদিন স্কুলের ১৬ ই ডিসেম্বর এর বিজয় দিবসের বক্তব্য দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে আর কিছুই বলতে পারিনি। সেই দিন থেকে আমি কলাগাছের সারিকে জনতা ভেবে কত দিন বক্তব্য দিয়েছি। এখন মাইক্রোফোন পেলে আর ছাড়তে ইচ্ছে করেনা।

২. বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম মাইক্রোফোন পেয়ে লোভ সামলাতে না পেরে কিছু বলতে শুরু করলাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাড়ুল তলায় পেছন থেকে এসে এক বড় ভাই আমাকে থামিয়ে বলল এত উচ্চারণে সমস্যা তুই তো অঙ্গনের মান সম্মান সব শেষ করে দিবি। সেই আমি বুঝতে পারি আমার উচ্চারণে সমস্যা রয়েছে। ভর্তি হই প্রমা আবৃত্তি সংগঠনে। ৬ মাসের কোর্স করি এবং নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আমি ভাল আবৃত্তি করতে শিখে গেলাম। একাধারে আবৃত্তি, বিতর্ক, কবিতা পাঠ চক্র ও উপস্থাপনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে। ‘অঙ্গন’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কর্মী হিসাবে কাজ করেছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।

৩. আমার আরেকটা ব্যর্থতার জায়গা আবিষ্কার করি যখন আমি শেষ বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়া জীবনে কোনদিন প্রথম হওয়ার সাধ নিতে পারিনি। এই শেষ সুযোগ জীবেনে প্রথম হতে হবে। মাস্টার্সে ১ম হওয়ার একটা চেষ্টা করে দেখি। এই বারের উদ্যোগেও সফল হলাম।

আমি জানি এই রকম অসংখ্য উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা তাদের বাস্তব জীবনে তাদের উদ্যোগের সফলতা পেয়েছেন। তারা সফল উদ্যোক্তা। কিন্তু উদ্যোক্তা বলতে শুধু ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হতে হবে এমন কোন কথা নেই।

 

 

চলবে… (বাকীটা পড়বেন আগামী পর্বে)

 

 

 

Related Articles

Back to top button