বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ২৪
স্টাফ রিপোর্টার:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা এলাকায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাকেসহ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৩ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার সকালে শেখহাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল গণমাধ্যমকে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, দগ্ধ বাকি ১৩ জনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। প্রত্যেকেরই শ্বাসনালি, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। এদের মধ্যে চারজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, আবদুল মালেক (৬২), মিজান হোসেন নিজাম (৪০), নাদিম (৪৫), শামীম (৪৫), জুলহাস ও মোহাম্মদ আলী মাস্টার।
এই দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হাটবুকদিয়া গ্রামের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুর সদর উপজেলার করিম মিজির ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৪), ফতুল্লার জুলহাস ফরাজির শিশু সন্তান জুয়েল (০৭), পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আব্দুল খালেক হাওলাদারের ছেলে গার্মেন্টসকর্মী মো. রাশেদ (৩০), তল্লা এলাকার হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালি গ্রামের মো. বেলায়েতের ছেলে জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টসকর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জ নিউ খানপুর ব্যাংক কলোনির কলেজছাত্র মো. রিফাত (১৮), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার শেখদী গ্রামের মৃত মহসিনের ছেলে মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার আনোয়ার হোসেনের ছেলে জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুক পলাশী গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী নয়ন (২৭), ফতুল্লার আব্দুল খালেকের ছেলে বাহার উদ্দিন (৫৫) এবং তল্লার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০)।
নিহতদের মধ্যে জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১) দুইভাই। তাদের বাসা নারায়ণগঞ্জের তল্লায়। এই ঘটনায় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল মালেক (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার ছেলে জুনায়েদও (১৬) মারা যান।
গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ তল্লার বায়তুল বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায়ে সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে মসজিদের চারপাশে। এতে দগ্ধ হন অন্তত ৪০ জন। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণে আগুন লাগার ধারণা করা হলেও গ্যাসের লিকেজ থেকে এই দুর্ঘটনা হতে পারে বলে জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস।
শনিবার বিকেল থেকে একে একে নিহতদের মরদেহ ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পশ্চিম তল্লা বোমওয়ালার বাড়ির খেলার মাঠে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সৃষ্টি হয় বেদনাবিধূর শোকাহত পরিবেশে।
নিহত ২১ জনের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহ হস্তান্তরের পর গতরাতেই ১৪ জনকে দাফন করা হয় নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। বাকি দুজনের দাফন হয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।
চিত্রদেশ//এল//