বাড়তি চাল-ডাল ও ডিমের দাম
স্টাফ রিপোর্টার:
নিত্যপণ্যের বাজার কিছুটা সহনশীল হয়ে এলেও এখনো বেশ কিছু পণ্যের দাম চড়া। এর মধ্যে চাল, ডাল ও ডিম অন্যতম। এসব পণ্যের দাম চলতি সপ্তাহে না বাড়লেও আগের বাড়তি দামই রয়েছে। তবে পেঁয়াজ-রসুন, আদাসহ সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কমেছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্য তেল, ছোলাসহ দাম কমেছে বেশ কিছু পণ্যের।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ-খবর নিয়ে এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
বিক্রেতারা বলেন, নিত্যপণ্যের বেশির ভাগ আইটেমের বাজার নির্ভর করে আমদানির ওপর। যখন যে পণ্যের আমদানি বাড়ে, তখন সেসব পণ্যে দাম কমে আসে। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ-রসুন ব্যাপক আকারে আমদানি হচ্ছে। ফলে এসবের দাম কমেছে। বাজারে চালের দাম বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়তি রয়েছে। খুচরা বাজারগুলোতে সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬২ টাকা কেজি। গত সপ্তাহেও এই দামই ছিল। মাঝারি মানের পাইজাম, আটাশ ও লতা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আর মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।
মিরপুর-২ নাম্বার বাজারের চাল বিক্রেতা সালাম বলেন, চালের বাজার মাসখানেক আগে কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু মিল মালিকদের নানা অজুহাতে দাম আবার বাড়তে শুরু করে। তিন সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়তি। তবে আমরাও চাই দাম কমুক। বাড়তি থাকলে আমাদের বিক্রিও কমে আসে।
চাল ছাড়া দাম কমছে না ডালের। বাজারে বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এই দাম তিন মাস ধরে চলছে। অথচ গত বছর এই সময়ে এ ডালের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। কমেনি মাঝারি ও ছোট দানারটাও। মাঝারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা আর ছোট দানা ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। তবে লিটারে এক টাকা কমেছে ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম। এখন খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৮৩ থেকে ৮৬ টাকা লিটার। বোতলজাত ১০০ থেকে ১০৫ টাকা লিটার। ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় স্থির রয়েছে সব ধরনের পাম তেলের দাম। কেজিতে পাঁচ টাকা কমে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। গত সপ্তাহের ৫৭ থেকে ৬৫ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। স্থির আটা, ময়দার দামও।
গত দুই সপ্তাহ চড়া থাকার পর কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে এখন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের বাড়তি দামই রয়েছে ডিমের। ফার্মের মুরগির ডিম এখনো ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা হালি ও ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ডজন। গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।
চলতি সপ্তাহে কেজিতে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে পেঁয়াজ-রসুন ও আদার দাম। এ ছাড়া শুকনা মরিচ, হলুদসহ প্রায় সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দামই কমেছে। চলতি সপ্তাহে কেজিতে পাঁচ টাকা কমে দেশি ও আমদানি করা সব ধরনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আমদানির আদা ১০ টাকা কমে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়, রসুন ১০ টাকা কমে দেশি ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং আমদানি করা ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শেওড়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মামুন বলেন, পাইকারি বাজারে কিছু পণ্যের সংকট থাকায় সেগুলোর দাম বেশি রয়েছে। যেসব পণ্যের সরবরাহ বেশি ও চাহিদা কম সেগুলোর দাম কমে যাচ্ছে। তবে করোনার কারণে এখনো সব ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।
এদিকে বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। যেখানে ঈদের পরেও বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে বাজারে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। আর বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এদিকে বাজারে প্রতি কেজি বরবটিও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। বাজারে শুধু বেগুন, গাজর, টমেটো, বরবটি নয় চিচিঙ্গার কেজি বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে, ঝিঙা ও পটল ৫০ থেকে ৬০, করলা ৫০ থেকে ৭০, কচুরলতি ৪০ থেকে ৬০, কচুরমুখী ৬০ থেকে ৭০, কাকরোল ৬০ থেকে ৭০, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি।
মনিপুরের বাসিন্দা ইয়াসিন মনোয়ার বলেন, কিছুদিন আগে নতুন ধান উঠেছে। এরপরও বেড়েছে চালের দাম। এর সঙ্গে ডাল, আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এখন সবজির দামে তো রিতিমত আগুন লেগেছে। পরিস্থিতি এমন সবজিতে হাত দেয়ার অবস্থা নেই। করোনার কারণে এমনিতেই কষ্টে আছি, এখন সবজির যে দাম তাতে আমাদের অবস্থান খারাপ।
চিত্রদেশ//এফ//