বাজেটে জিডিপির আকার বাড়ছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা
স্টাফ রিপোর্টার:
করোনা ভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির চলতি বাজারমূল্য ধরা হচ্ছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে রয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের জিডিপির আকার দুই লাখ ৮৫ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বাড়ছে।
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। একই লক্ষ্য ছিল চলতি বছরেও। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৩২৬ ডলার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ২ হাজার ১৭৩ ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশাল এই জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ধীরে ধীরে পৃথিবী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের টিকাও আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ‘করোনা সংকট’ খুব বেশি প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। এই হিসাব ধরেই আগামী বাজেটের জিডিপির চলতি বাজারমূল্য ঠিক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি ধরা হলে তা হবে অবাস্তব। কারণ আমাদের রপ্তানি ভালো না। উৎপাদনশীল খাতের সাপ্লাই চেইনে সমস্যা। রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিতে সমস্যা। এগুলো ঠিক না হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভালো হবে না।
সূত্র মতে, জিডিপি বলতে বোঝানো হয়ে থাকে, ‘একটি দেশের ভেতর সব রকম দ্রব্যের উৎপাদন ও সেবামূলক কাজের মূল্যভিত্তিক যোগফল।’ করোনার আঘাতে সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার আগে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল উল্লেখ করার মতো। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। উৎপাদন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি প্রায় থমকে আছে। এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। অর্থ মন্ত্রণালয় বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সংশোধন আনে।
চলতি অর্থবছরে জিডিপির চলতি বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। করোনা ভাইরাস আঘাত হানলে সংশোধিত বাজেটে ৮০ হাজার ১৭২ কোটি টাকা কমিয়ে ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হয়। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ থাকলেও তা কমিয়ে ৫.২ শতাংশ করা হয়। আগামী অর্থবছরে অর্থনীতির চাকা আবার সচল হবে এমনটা ধরে নিয়ে নতুন বাজেটে আবারও বড় লক্ষ্য দিতে যাচ্ছে সরকার। চলতি বাজারমূল্যে এর পরিমাণ ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সংশোধিত চলতি বাজারমূল্য থেকে এটি তিন লাখ ৬৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেশি। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮.২ শতাংশ।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হতে পারে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটে ধরা হয় তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর রাজস্বের লক্ষ্য ধরা হতে পারে তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া মোট বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হবে ১০ লাখ ৬১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্য রয়েছে নয় লাখ ৪৬ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য রয়েছে সাত লাখ ৯২ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। যেটি চলমান বাজেটে রয়েছে ছয় লাখ ৯৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হতে পারে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এটি রয়েছে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয় ধরা হতে পারে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটে রয়েছে নয় লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্য ধরা হতে পারে ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্য হতে পারে ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা বর্তমানে রয়েছে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের সমান।
এছাড়া আগামী অর্থবছর রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি অর্থবছর রয়েছে ৪৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। আমদানির ক্ষেত্রে ধরা হতে পারে ৫৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে রয়েছে ৬৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্স আয়ের লক্ষ্য ধরা হতে পারে ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান অর্থবছরের লক্ষ্য রয়েছে ১৯ বিলিয়ন ডলার।
চিত্রদেশ//এস//