বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের আধুনিকায়নে ৪০০০ কোটি ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
স্টাফ রিপোর্টার:
শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্রুত উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে কাজ করছে সরকার। ২০১৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’। শিল্প নগরটি আরও অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের করতে বিএসএমএসএন-২ জোনে ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল এন্টারপ্রিনিউরশিপ (প্রাইড) ফর বেজা প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে মোট খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে চার হাজার ৩৫৬ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার দেবে ৩৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ঋণ। বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে তিন হাজার ৯৬৯ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় পরিকল্পনা কমিশন মতামতে বলেছে, এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত প্রদেয় তথ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’র ওপর প্রণীত মাস্টার প্ল্যান, যা ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর অনুমোদিত হয়েছে, সেটি রেফার করা হয়েছে। পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে জারি করা পরিপত্র ৪.১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার ওপর প্রাক্কলিত ব্যয়সম্পন্ন সব বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ফলে বিশ্বব্যাংকের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণের এ প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া গ্রহণ করা আইনসম্মত নয় বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।
পাশাপাশি পিইসি সভায় এও বলা হয়েছে, সরকার থেকে ১ শতাংশ সুদে ৩৮৬ দশমিক ২৭ কোটি ঋণ গ্রহণের বিষয়ে আগেই অর্থ বিভাগের সম্মতি গ্রহণ করা আবশ্যক।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের’ বিএসএমএসএন-২ জোনকে অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশীয় বিনিয়োগ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রফতানি আয় বৃদ্ধি ও সর্বোপরি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সহায়ক হবে।
প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বেজা সূত্র বলছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিল্পায়ন করে দ্রুত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বিভিন্ন স্থানে ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে কাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০ অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেজার গভর্নিং বোর্ডের প্রথম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক, চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় তিন হাজার একর জমিজুড়ে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ চলমান। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে পরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। এ শিল্প নগরের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ২০১৪ সাল থেকে বেজাকে সহযোগিতা করে আসছে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মেয়াদে ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-১’ শীর্ষক প্রকল্পটি বেজা কর্তৃক বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের স্বাক্ষরিত প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট (পিএসডিএসপি) ঋণচুক্তির আওতায় গ্রহণ করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-১’ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’র তিনটি জোনের অর্থাৎ বিএসএমএসএন-১ (৫৪৮ একর), বিএসএমএসএন-২ এ এবং বিএসএমএসএন-২বি (৪৭৪ একর) এর প্রায় দুই হাজার একর জমিতে ভূমি উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি সুবিধাদি সৃষ্টির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য শিল্প ইউনিট স্থাপনের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। বিএসএমএসএম-২ (বিএসএমএএন-২এ ও বিএসএমএসএন-২বি জোনে মোট ১০৪টি শিল্প ইউনিট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। একটি সুপার ডাইক, ব্রেক-ওয়াটার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বিএসএমএসএন-২ জোন পর্যন্ত একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে ওই জোনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের ৪৬৭ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় তিন হাজার ৯৬৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ঋণ সহায়তায় ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল এন্টারপ্রিনিউরশিপ (প্রাইড) ফর বেজা প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরও কিছু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যেমন- জোনের অভ্যন্তরে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনবিশিষ্ট সড়ক, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নিরাপত্তা বেষ্টনী, প্রশাসনিক ভবন, সিইটিপি, ডিজেলাইজেশন প্ল্যান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, সলিড ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, ওয়াস্ট সরটিং অ্যান্ড মেটেরিয়াল রিকোভারি, রুফটপ এবং ফ্ল্যাটিং সোলার ভৌত অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে বিএসএমএসএন-২ কে একটি গ্রিন ইকোনমিক জোন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে বিনিয়োগকারীদের কাছে এটিকে অধিকতর আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
উল্লিখিত ভৌত কার্যক্রমের মধ্যে ছয়টি কাজ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটিতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমীক্ষা বা স্টাডি ও পরামর্শক সেবা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলেও জানায় বেজা সূত্র।
চিত্রদেশ//এল//