অপরাধ ও আইনপ্রধান সংবাদ

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে কিডনি-লিভার বিক্রি করে পাচার চক্র

স্টাফ রিপোর্টার:
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হয় কিডনি-লিভার। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি ও লিভার নিয়ে প্রতারণা করে আসছে একটি চক্র। আর এই চক্রের অন‌্যতম কয়েকজন সদস‌্যকে গ্রেপ্তার করে চাঞ্চল‌্যকর তথ‌্য দিয়েছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলন বিস্তারিত তথ‌্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, কিডনি-লিভার নিয়ে এই চক্রের প্রধান মো. শাহরিয়ার ইমরান। তিনি মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ও লিভার দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করে ডোনার খুঁজতে থাকেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র‌্যাবের সাইবার ক্রাইমের ইউনিট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনুসরণ করে ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস‌্য মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ, মো. মেহেদী হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আব্দুল মান্নান, মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজুকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি পাসপোর্ট এবং ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।’

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চক্রের মোট সদস্য ১৫-২০ জন। তারা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধ কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।
চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তৃতীয় দলটি প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভূক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভূক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই চক্র বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং অগ্রীম ২ লাখ টাকা দেয়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর কিডনি দাতাদের পুরো অর্থ না দিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতো। চক্রের প্রধান ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করতো।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন। ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেসেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামে ২টি পেজের এডমিন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রয়ের জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছেন।’

চিত্রদেশ//এফটি//

Related Articles

Back to top button