নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নে কাজ করবে ‘ওয়েন্ড’ : ড. নাদিয়া বিনতে আমিন
স্টাফ রিপোর্টার:
নারীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে তাদের ক্ষমতায়ন জরুরি। নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান শর্ত হলো নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা। সেজন্য নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদান জরুরি। উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (ওয়েন্ড) নামে ব্যবসায়ীদের নতুন সংগঠনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য নারী ব্যবসায়ীদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা। প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের থিউরিটিক্যাল সাপোর্ট এর পাশাপাশি ট্রেড লাইন্সেস প্রাপ্তি, ই-টিআইএন ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া, ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা, টেকনোলজি বিষয়ে সাপোর্ট দেওয়া, নারীর ক্ষমতায়নে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাসহ নানা কাজ করবেন। সংগঠনটির উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনা পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন ওয়েন্ড এর প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন।
‘ওয়েন্ড’ কি উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে?
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন: আমি ওমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। অনেক সংগঠনের সদস্য ছিলাম। আমি দেখলাম নারী উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক কোন মেলায় অংশ নিতে বিমানের টিকেট করা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয়। ধার করে টিকেট করে, মেলায় পণ্য বিক্রি করে সব ধার করে দেখা গেল কিছুই থাকলো না। পরিশ্রমটাই বৃথা। আবার অনেক নারী উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ট্রেড লাইন্সেস করতে পারেন না, কোথায় করতে হবে সেটাও জানেন না। এক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে সহযোগিতা করলে অনেকে নিতে চায় না। সেজন্য আমরা ভাবলাম এসব নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। সেই ভাবনা থেকেই ওয়েন্ড (উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন) করা। এ সংগঠনের মাধ্যমে আমরা ঢাকার বাইরে অর্থাৎ সারাদেশে নারীদের নিয়ে কাজ করতে চাই।
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন একাধারে বিয়াস এন্টারপ্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী, বেস্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালক, তারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, আরসিএস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ওমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (উইভ) এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন একাধারে বিয়াস এন্টারপ্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী, বেস্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালক, তারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, আরসিএস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ওমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (উইভ) এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট।
‘ওয়েন্ড’ নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন: আমি দীর্ঘদিন থেকে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় কাজ করে এমন বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি দেখেছি সবাই নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়, চেষ্টাও করে। কিন্তু একটা সময় টিমওয়ার্ক গড়ে উঠে না। আমি অনেক সময় নিজের পয়সা দিয়ে মেয়েদেরকে টিকেট করে দিয়েছি, কখনো হোটেল ভাড়া, ট্রান্সপোর্ট খরচ দিয়েছি। কিন্তু এভাবে তো হয় না। একটা মেয়েকে তো ব্যক্তিগতভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার বিকল্প নেই। তখন থেকে ভাবতাম মেয়েদের এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করা যায়। সবাই মিলে নারী উদ্যোক্তাদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারি অনুমোদনের একটা সংগঠন করি তাহলে কেমন হয়। সেই ভাবনা থেকে গত ৫ বছর চেষ্টা করে ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ওয়েন্ড অনুমোদন পেয়েছি। নারী উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট ও প্রমোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংগঠন করা। এ সংগঠনের মাধ্যমে নারীদের থিউরিটিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া যায়। এ সংগঠনের মাধ্যমে ট্রেড লাইন্সেস প্রাপ্তি, ই-টিআইএন ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া। কোন নারী একটি পণ্য তৈরি করে, সে পণ্য বিষয়ে ট্রেনিং এর মাধ্যমে তাকে এক্সপোর্ট করে তোলার ব্যবস্থা করা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা। টেকনোলজি বিষয়ে সাপোর্ট দেওয়া। নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, যাতে একজন আরেকজনের পরিপূরণ হিসেবে নারীরা উঠে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করা। এ সংগঠনের মাধ্যমে আমি নিজের কোন বেনিফিট এর চিন্তাও করি না। কিন্তু বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রমকে বেগবান করতে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় এ সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে যেতে চাই।
‘ওয়েন্ড’ সারাদেশে কিভাবে কাজ করবে?
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন: প্রাথমিকভাবে আমরা ৮টি বিভাগে কার্যক্রম শুরু করবো। ওয়েন্ড এর ৮ জন সদস্য ৮টি বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন। ৮টি বিভাগে ৮ জন নারী উদ্যোক্তাকে একটি নির্দিষ্ট ফোন নম্বর দেওয়া হবে। বিভাগের দায়িত্বে থাকা নারী উদ্যোক্তা তার বিভাগের প্রতিটি জেলার নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা নোট করে আমাদের জানাবেন। আমরা কেন্দ্র থেকে তার সমাধানের চেষ্টা করবো। ইতোমধ্যে আমরা এ সংগঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাণিজ্যমেলায় নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের পণ্য নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভেলিয়নে ওয়েন্ড এর একটি স্টল নেওয়া হয়েছে। সেখানে নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে।
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন ওয়েন্ড এর সভাপতি, শামীমা শারমিন লাইজু সহ-সভাপতি, জিসান আক্তার চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক, আনোয়ারা সিদ্দিকী কোষাধ্যক্ষ, জর্জিনা খালেদ উপ কোষাধ্যক্ষ, আয়েশা সিদ্দিকা, শামীমা খান , নাসিমা হক ও মাহবুবা রব মাহবু নির্বাহী সদস্য।
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন ওয়েন্ড এর সভাপতি, শামীমা শারমিন লাইজু সহ-সভাপতি, জিসান আক্তার চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক, আনোয়ারা সিদ্দিকী কোষাধ্যক্ষ, জর্জিনা খালেদ উপ কোষাধ্যক্ষ, আয়েশা সিদ্দিকা, শামীমা খান , নাসিমা হক ও মাহবুবা রব মাহবু নির্বাহী সদস্য।
‘ওয়েন্ড’ এর মতো নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাজ করা কয়টি সংগঠন আছে?
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন: আমার জানা মতে নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করে উইভ, জয়িতা, তৃণমূল আর ওয়েন্ড সরাসরি ট্রেড বডি হিসেবে লাইন্সেস পেয়েছে। অনেক চেম্বার, ফেডারেশন আছে যারা নারীদের নিয়ে কাজ করে। তারা সরাসরি নয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা অধিদপ্তর, এনজিও ব্যুরো থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজ করে। ওয়েন্ড এফবিসিসিআই এর মেম্বার করা হয়েছে। সম্প্রতি ওয়েন্ড এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কম্বোডিয়ায় বাণিজ্য সফরে গিয়েছি। নারী উদ্যোক্তা শ্রেণির ক্ষমতায়নে ওয়েন্ড কাজ করবে। সারাদেশে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, সুষ্ঠুভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা, সম্প্রসারণে সার্বিক সহায়তা প্রদান, দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান রাখাসহ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করবে ওয়েন্ড। ওয়েন্ড অনুমোদন পাওয়ার পর ইতোমধ্যে আমরা বাণিজ্যমন্ত্রী, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান, বিজিএমই এর প্রেসিডেন্ট এর সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। তারা নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সকল ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
চিত্রদেশ ডটকম//এলএইচ//