প্রধান সংবাদ

ডা. মুরাদের ভাইরাল যত কাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার:
রাষ্ট্রধর্ম ও ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া নিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি।

সর্বশেষ রোববার রাতে এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে অশ্লীল কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে সেই সমালোচনার ঝড় আরও তীব্রতর হয়। এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকালের মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গত অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। সেসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদীদের আস্তানা হতে পারে না। যে কোনো মূল্যে ’৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। এই ঘটনার পর পর প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের পুরনো কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেটমাধ্যমে। সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ অনেক রাজনীতিকও এর নিন্দা জানিয়েছিলেন।

এ সময় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে ডা. মুরাদ হাসান হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ডা. মুরাদ মাথা নিচু করে কথা বলবে না। মাথা উঁচা করেই কথা বলবে। কাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো, কুশপুত্তলিকাদাহ করো। আমরা যদি শুরু করি তাহলে ঢাকার মাটিতে টিকতে পারবেন না। ডাক্তার মুরাদ হাসান সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিয়েন। তারপরে কথা বলেন। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।’

তখন থেকেই একের পর এক বিকৃত অশালীন বক্তব্য, প্রতিহিংসামূলক আক্রমনাত্মক অঙ্গভঙ্গি সব মিলিয়ে ভাইরাল হয়ে আলোচনায় ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান।

সর্বশেষ ঐতিহ্যবাহী একটি সামাজিক ক্লাবে ঘটিয়েছেন অশোভন কাণ্ড। ক্লাব কর্তারা সদস্যদের তুমুল আপত্তির মুখে তাকে বের করে দেন। এরপর তার দুটি টেলিফোন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে ভাইরাল হয় যেখানে কান রাখা যায় না। এমন অশালীন কথাবার্তা ও আচরণের পরেও তিনি কীভাবে মন্ত্রীসভায় থাকেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি।

রোববার রাতে তার সঙ্গে এক চিত্রনায়িকার কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে সেই সমালোচনার ঝড় আরও তীব্রতর হয়েছে।

এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তার সমালোচনা করে বক্তব্য আসছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই।

এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বেসরকারি নারী সংগঠন নারীপক্ষ।

যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বলা ‘কুরুচিপূর্ণ’ ও ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না বলেও জানিয়েছিলেন ডা. মুরাদ হাসান।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্যকে নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ‘নারীবিদ্বেষী’ বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ফাঁস হয় একটি ফোনালাপ।

জানা যায়, এই কথোপকথনটি ডা. মুরাদ হাসান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। ফোনালাপে থাকা চিত্রনায়ক ইমন ইতোমধ্যে সেটি স্বীকারও করেছেন। ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে ‘অশ্রাব্য’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।

এর দুদিন আগেই ইউটিউবে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার পরিবারের এক নারী সদস্যকে উদ্দেশ্য করে অশালীন বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ হাসান।

প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস করতে করতে ওই নারীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। এসময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করতে শোনা যায় তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রোববার রাতে দুইটি ফোনালাপটি ফাঁস হয়। ফোনালাপের শুরুতে ডা. মুরাদের কণ্ঠের অন্যপাশে চিত্রনায়ক ইমনকে কথা বলতে শোনা যায়।

চিত্রনায়ক ইমন ডা. মুরাদকে জানান, তিনি বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় রয়েছেন। কথা বলার একপর্যায়ে মাহিয়া মাহিও তার সঙ্গে রয়েছেন জানিয়ে ইমন ডা. মুরাদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।

ডা. মুরাদ মাহিয়া মাহিকে ফোনে পেয়ে বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে ‘অশ্লীল ভাষায়’ দেখা করার জন্য ‘নির্দেশ’ দেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোরও হুমকি দেন তিনি।

ওই কথোপকথনের দ্বিতীয় ধাপে আবার কথা হয় এই দুজনের। ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি ‘সঠিক’ বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন চিত্রনায়ক ইমন ও মাহিয়া মাহি।

চিত্রদেশ//এফটি//

Related Articles

Back to top button