টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
স্টাফ রিপোর্টার:
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আমি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
সোমবার (২২ মার্চ) রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ষষ্ঠ দিনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। আজকের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’।
শেখ হাসিনা বলেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও অর্ধাহারে বা না খেয়ে প্রতিরাতে ঘুমাতে যায়। অনেকে জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দক্ষিণ এশিয়ায় যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে সে সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করে এ অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এ অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস আমরা অব্যাহত রাখব।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে বাসবাস করি, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশগুলো যেমন ভূমিকম্প, ক্লাউডবার্স্ট, বরফ ধস, ভূমিধস, ফ্লাস ফ্লাড বা হরকাবান ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, তেমনি বাংলাদেশের মত সাগর-উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহ বারবার বন্যা, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি বা খরার মত দুর্যোগের সম্মুখীন হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের এ উপমহাদেশের দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি নাজুক করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের ভূমিকা নিই, তারপরও আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা অভিযোজনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারি, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে। তাই, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম বা সিভিএফের বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব নেতৃত্বকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত বছর ঢাকায় গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন, বাংলাদেশ অফিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা অফিস দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সব সময়ই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। সবার অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা তাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়। বিগত ১২ বছরে আমরা জাতির পিতার দেখানো পথ ধরেই হাঁটছি। আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র নেপালও একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমি নেপালের সরকার ও জনগণকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এর মধ্যে দিয়ে আমাদের একসঙ্গে পথচলা সুগম হলো।
নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক ও অভিন্ন। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বিশেষ করে পানি-বিদ্যুৎ খাত, পর্যটন ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল) চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এর ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। নেপালকে আমরা আমাদের সৈয়দপুর আঞ্চলিক বিমানবন্দর এবং মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন সম্মানিত অতিথি নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, থিমেটিক আলোচক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এছাড়া বাংলাদেশের ফার্ট লেডি রাশিদা হামিদ, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, নেপালের রাষ্ট্রপ্রতির মেয়ে উষা কিরণ ভাণ্ডারিসহ পাঁচশ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব আলোচনা অনুষ্ঠান বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত চলে। এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩০ মিনিটের বিরতি। দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানটি টেলিভিশন, বেতার, অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে শত শিল্পীর যন্ত্রসংগীত, বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধুরাষ্ট্র নেপালের পরিবেশনা, হাজার বছর ধরে (নৃত্যালেখ্য : কবিতা, গান ও নৃত্য), বাংলার ষড়ঋতু (৬০ জন শিল্পীর নৃত্য পরিবেশনা), ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্ববোধক গানের মেডলি : সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা (কোরিওগ্রাফি), ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবেশনা ‘বাংলার বর্ণিল সংস্কৃতি’, যাত্রাপালা ‘মা মাটি মানুষ’, শত বাউলের গানের মেডলি ও নৃত্যালেখ্য: ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রিয় গান ও বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে।
চিত্রদেশ//এসএইচ//