ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে পাঁচ জেলায় ৮ জনের মৃত্যু
ডেস্ক নিউজ:
সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে বুধবার পাঁচ জেলায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ভোলায় রামদাসপুর চ্যানেল ৩০ যাত্রীসহ একটি ট্রলার ডুবে একজন ও চরফ্যাশনের শশীভূষণ এলাকায় গাছচাপা পড়ে ছিদ্দিক ফকির নামের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। পটুয়াখালীতে শিশুসহ দুজন, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরেও নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া যশোরে গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ভোলা, চরফ্যাশন ও মনপুরা: ট্রলারডুবিতে নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম এলাকায়। ওই ব্যক্তিসহ ৩০ যাত্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসেন। এরা লক্ষ্মীপুর জেলার মজুচৌধুরী ঘাট থেকে ট্রলারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত উপেক্ষা করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলায় রওনা দেন।
রাজাপুর সুলতানীঘাটের কাছে এলে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় স্রোতের টানে ভেসে যান রফিকুল ইসলাম। পরে তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। দুপুরে প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে ইলিশা ফেরিঘাট গ্যাংওয়ে ভেঙে ভেসে যায়। বিধ্বস্ত হয় লঞ্চের পন্টুন।
এদিকে চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছুপিয়া এলাকার রেণ্ডিগাছ ভেঙে মাথায় পড়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ সিদ্দিক ফকির মারাত্মক জখম হন। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ভোলার মনপুরা উপকূলের নিুাঞ্চলসহ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলীর চর ও চরনিজামে ৩-৪ ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
পটুয়াখালী ও দক্ষিণ: পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- কলাপাড়া উপজেলার লোন্দা এলাকার সিপিপির দলনেতা শাহ আলম মীর (৫০) ও গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকার ৫ বছরের শিশু রাশেদ।
বুধবার সন্ধ্যায় রাশেদ মায়ের সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙে গায়ে পড়লে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বুধবার সকালে কলাপাড়া উপজেলা লোন্দা এলাকায় নৌকায় সতর্কতামূলক প্রচার চালাচ্ছিলেন সিপিপির চার সদস্য।
এ সময় প্রবল বাতাসের বেগে নৌকা উল্টে চারজন নদীতে পড়ে গেলে সাঁতারে তিনজন তীরে আসতে সক্ষম হন। নিখোঁজ হন সিপিপির দলনেতা শাহ আলম মীর। পরে বরিশাল থেকে ডুবুরি দল কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিখোঁজ শাহ আলমের লাশ উদ্ধার করে।
পিরোজপুর ও মঠবাড়িয়া: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় বলেশ্বর নদীর অন্তত ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১শ’ হেক্টর জমির সবজি ও অন্যান্য ফসল ভেসে গেছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাঝেরচরের বেড়িবাঁধ ভেঙে হুহু করে এখন বলেশ্বর নদীর বৃদ্ধি পাওয়া পানি ঢুকে পড়ায় চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন সেখানের অন্তত দেড় হাজার মানুষ।
মঠবাড়িয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নির্মাণাধীন একটি ভবনের ওয়াল ভেঙে শাহজাহান মোল্লা (৬০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে তিনি ওই ওয়ালের পাশে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর এলাকায় ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে করিমন বিবি (৪০) নামের এক নারী মারা গেছেন।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাজেদুল হক বলেন, ১৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড় সাতক্ষীরার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। আশাশুনিতে ঘোলপেটুয়া নদীর চাবাল, বন্যতলা ও হিজলা এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এসব এলাকা দিয়ে বিভিন্ন জনপদে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এছাড়া যশোরের চৌগাছা উপজেলার চানপুর গ্রামে বুধবার রাতে ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরের ওপর গাছ পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আমাদের যশোর ব্যুরো। তবে তাদের মৃত্যুর খবর প্রশাসন নিশ্চিত করেনি বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ওই গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর স্ত্রী খ্যান্ত বেগম(৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩)।
ঝড়ের সময় খ্যান্ত বেগম ও তার মেয়ে ঘরে ছিলেন। রাত ১০টার দিকে ঘরের পাশের একটি গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে। এ সময় চাপা পড়ে মা ও মেয়ে নিহত হন।
এ ব্যাপারে জানতে চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজিবকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
চিত্রদেশ//এস//