কোন সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কত
স্টাফ রিপোর্টার:
মধ্যবিত্ত জীবনে সাধ আর সাধ্যের টানাপোড়েন লেগেই থাকে। এর মধ্যই তিল তিল করে জমা হয় কিছু সঞ্চয়। কখনো সম্পদ বিক্রির টাকা,কখনোবা পেনশন,এফডিআর অথবা প্রবাসী স্বজনের পাঠানো অর্থে আসে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ। কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া তো সহজ নয়। পদে পদে ঝক্কি, লোকসান কিংবা প্রতারণার ঝুঁকি। অনেকেই এ ঝুঁকি নিতে চান না। মুনাফা কম হলেও হন্যে হয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র খোঁজেন। তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র হতে পারে আদর্শ বিকল্প। আপনাদের জন্য দেওয়া হল সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত কিছু তথ্য:
সঞ্চয়পত্রের প্রকার:
বর্তমানে দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে। এগুলো পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র; তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র,পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র।
এর বাইরে আছে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে বিনিয়োগ সুবিধা।
সঞ্চয়পত্রের সুদ/মুনাফা:
স্কিমভেদে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও ভিন্ন। নিচে সংক্ষেপে সুদহারগুলো তুলে ধরা হল-
০১. পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রঃ এই সঞ্চপত্রে মেয়াদান্তে সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে ১ম বছরান্তে ৯.৩৫%, ২য় বছরান্তে ৯.৮০%, ৩য় বছরান্তে ১০.২৫% এবং ৪র্থ বছরান্তে ১০.৭৫% হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে।
০২. তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রঃ তিন বছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদান্তে সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। তবে মেয়াদের আগে এই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করলে সুদের হার হয় কম। আর এক বছরের আগে নগদায়ন করলে কোনো সুদ পাওয়া যায় না।
তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র প্রথম বছর শেষে নগদায়ন করলে ১০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর শেষে নগদায়ন করলে সাড়ে ১০ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়।
০৩. পরিবার সঞ্চয়পত্রঃ পাঁচ বছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে সুদ পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে। আর মেয়াদ পূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে সাড়ে ৯ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে সাড়ে ১০ শতাংশ ও চতুর্থ বছর শেষে ১১ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যায়।
০৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্রঃ পাঁচ বছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে সুদ পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে। আর মেয়াদ পূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক শতাংশ হারে সুদ বা মুনাফা পাওয়া যায়।
সঞ্চয়পত্রের বিক্রয় কেন্দ্র:
বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিস,সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক,জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের অধীন ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং সারাদেশে ডাকঘরে সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায়।
যারা কিনতে পারেন :
প্রকল্পগুলোর মধ্যে শুধু পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবাই কিনতে পারেন। অন্য সঞ্চয়পত্রগুলো বিশেষ টার্গেট গ্রুপের জন্য নির্ধারিত।
এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্র ১৮ বা তারচেয়ে বেশি বয়সী যে কোনো বাংলাদেশী মহিলা,যে কোনো বাংলাদেশী শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও মহিলা) এবং ৬৫ ও তার বেশি বয়সের যে কোনো বাংলাদেশী নাগরিক (পুরুষ/মহিলা) শুধু একক নামে কিনতে পারেন।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী,আধা-সরকারী,স্বায়ত্তশাসিত,আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী,সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি,সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং উল্লিখিত ক্যাটাগরিতে মৃত চাকুরীজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান।
সঞ্চয়পত্র কেনার গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ পরিমাণ:
চাইলেই যে কোনো পরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়পত্রের সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। এর মধ্য তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেবল একক নামে কেনা যায়। এই দুটি সঞ্চয়পত্রের অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমা যথাক্রমে ৪৫ ও ৫০ লাখ টাকা।
চিত্রদেশ ডটকম//এস//