কোটা আন্দোলন নিয়ে তারকারা কে কি বলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ।শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। এনিয়ে মুখোমুখি আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের বিভ্ন্নি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজধানীসহ সারা দেশে আন্দোলকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিষয়ে সরব হয়েছেন দেশের বিনোদন জগতের অনেক তারকারা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন অনেকেই।
চিত্রনায়িকা পরীমনি আহত এক শিক্ষার্থীর ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতায় আপনার জবান বন্ধ থাকলে আপনি মুনাফিক।’, শবনম বুবলী লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?’, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে নির্মাতা সুমন আনোয়ার লেখেন, ‘দুর্দান্ত ঢাকা, উত্তেজিত দেশ। ঘুরে দাঁড়াবেই বাংলাদেশ।’
নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ লেখেন, ‘একের পর এক ভুল। সব পক্ষেরই ভুল। যুক্তি, চিন্তা, স্ট্যাটিকস— সব ভুলে বসে আছি সবাই। হুজুগ আর ক্ষমতা লড়ছে। সংলাপ বসে আছে অসহায় হয়ে।’, নির্মাতা খিজির হায়াত খান লিখেছেন, ‘আমাদের আগামীরা আজকে দেশব্যাপী রাজপথে। ওদের স্লোগান নিয়ে অনেক প্রশ্ন কিন্তু কেন এই স্লোগান সেটা নিয়ে কোনো কথা নাই। ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন কাউকে রাজাকার বানায় না, বরং ওদের হাত ধরেই স্বাধিকার আসে। আমি ওদের পক্ষে দাঁড়ালাম।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে অভিনেতা নিলয় আলমগীর লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই একটা সময় দেশের হাল ধরবে। এত এত ছাত্রছাত্রী ভুল দাবি করতে পারে না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, দয়া করে কোটা সংস্কার করে দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে যে সম্মান এবং ভালোবাসা আপনি সব সময় দেখিয়েছেন, তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এখন হাসির পাত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে হলেও কোটা সংস্কার মেনে নিন। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের এই দুরবস্থা সহ্য করার মতো না। পুরো জাতি আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।’
শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালমান মুক্তাদির লেখেন, ‘এমন কোনো ছাত্র আছেন, যিনি হামলার শিকার হয়েছেন অথবা হলে ঢুকতে পারছেন না? আমি আপনাদের খেয়াল রাখব।… কারও যদি থাকার জায়গার প্রয়োজন হয় অথবা চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন হয়, আমি আছি।… আমি সত্যিই ভেঙে পড়েছি, বিব্রত বোধ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জবাব চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আমার ক্যাম্পাস রক্তাক্ত কেন? শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?’
চিরকুট ব্যান্ডের শারমিন সুলতানা সুমি লেখেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সকলের নিরাপত্তা ও সুদিন; সদ্বিবেচনার সঙ্গে নিশ্চিত করার বিনীত অনুরোধ রইল।’ শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়ে চিরকুটের ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছে।
নির্মাতা আশফাক নিপুন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে কোটা আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ফেসবুকে এ প্রসঙ্গে শোবিজের মানুষদের নীরব থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতা মিশুক মনি।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেক তারকা। মিছিলে ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া কোটা নিয়ে আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে- এমন দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ।
অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি লেখেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলতেও দ্বিধা করে না, আবার তারাই সরকারি চাকরির জন্য কোটা চায়, তাদের হাতে দেশ গেলে কী হবে সেটাই ভাবছি।’, চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার নানা-দাদা মুক্তিযোদ্ধা। আমার কোটা লাগে না। অনেক চাকুরি আছে, কেন শুধু সরকারি চাকুরিই করতে হবে। আর কিছু কোটা থাকলে সমস্যাটা কি? এত মারামারি কেন?’
লেখক ও নির্দেশক মাসুম রেজা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যারা একাত্তরে পরাজিত হলো তাদের পরিচয়ে নিজেদেরকে পরিচিত করছেন! কী দারুণ মেধাবী আপনারা! এত মেধা আপনাদের কোন প্রেতাত্মা সাপ্লাই করছে!’, অভিনেতা রওনক হাসান লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কার হতেই পারে।..কিন্তু হাজারো সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলনকে সুকৌশলে যেদিকে প্রবাহিত করা হলো তা দেখে এটাই স্পষ্ট এর মাস্টারমাইন্ড কারা।’