কানিজ কাদীর এর গল্প ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’ (২য় পর্ব)
জনপ্রিয় লেখক কানিজ কাদীর এর বন্ধুত্ব নিয়ে হৃদয় ছোঁয়া গল্প ’ফ্ল্যাশ ব্যাক’ পড়তে চোখ রাখুন ‘চিত্রদেশ’ এর সাহিত্য পাতায়।
পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রতি শুক্রবার ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’ প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রদেশে। আজ রইল গল্পটির (২য় পর্ব)
ডা. রেবেকা কাজ শেষে রোগীটাকে দেখার জন্য পোস্ট অপারেটিভ রুমে যান। রোগীর কাছে যেতেই চমকে উঠলেন। একি! এ চেহারা এত পরিচিত মনে হচ্ছে কেন। কােথায় দেখেছি। অপারেশনের সময় ভালো করে তাকায়নি রেবেকা পেশেন্ট এর দিকে। ডা.রেবেকা কোনো দিকেই মনেযোগ দিতে পারছিলেন না। বারবার হাসপাতালের রোগীটার চেহারা মনে ভাসছে। এত পরিচিত কেন! কেন এই অবস্থা আমাদের দেশের মেয়েদের। ডা. রেবেকা বাসায় ফিরলেন রাত সাড়ে ৯টার দিকে। রাস্তায় প্রচন্ড যানজট। ডা. রায়হান এখনো আসেনি। বলেছিল রাতে একটা অপারেশন আছে ওটা করেই বাসায় আসবেন। রেবেকা বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়েই এশার নামাজ পড়ে নিলেন। ছেলেটা টেবিলে তখনো পড়ছিল। সাদাব মা’র কাছে এসে বলল,’মা দুটাে অংক বুঝতে পারি নাই। তোমার কাছে বুঝব বলে রেখে দিয়েছি।’ ‘অংক বইটা নিয়ে আস।’ রেবেকা ছেলেকে অংক বুঝিয়ে দিলেন। ৩-৪টা অংক করতে দিলেন।ছেলে সাদাব বলল, ‘মা, দোয়া করো কালকের ম্যাথ টেস্ট যেন ভালো হয়।’
রেবেকা রায়হানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রাত ১১টা বাজে। রহিমা ডাইনিং টেবিলে খাবার বেড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রায়হান এলো আরো বেশ পরে। তড়িঘড়ি করে ওযু করে নামায পড়ে নিলেন। ততক্ষণে রেবেকা, ওভেনে সবকিছু গরম করে নিয়েছেন। দুজন এক সাথেই খেতে বসলেন। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছিল। ডাইনিং টেবিলটা গুছিয়ে ক্লান্তিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন রেবেকা। রায়হানও এলো বিছানায়। টিভির রিমােটটা হাতে নিয়ে টিভি অন করলেন। রাতের খবর হচ্ছিল । মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। এরপর চ্যানেল ঘুরালেন রায়হান। টকশো হচ্ছিল, বর্তমান রাজনীতি, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে।
ডা. রেবেকা হাসপাতালের রোগীটার কথা মাথা থেকে সরাতে পারছিলেন না। শরীরও খুব ক্লান্ত। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল কিছুই জানেন না। রাতে রায়হান দু-একবার কাছে টেনে নিয়েছিল। রেবেকা পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
রেবেকা ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠলেন, ওযু করে ফযরের নামায পড়ে নিলেন। কুরআন শরীফ বের করে সূরা মোজাম্মেল ও সূরা আর রাহমান পড়ে নিলেন। রেবেকা প্রায়ই কুরআন শরীফের এই দুটো সূরা পড়েন। এটা ওনার অভ্যাস হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতা ও ইচ্ছার কাছে রেবেকার মনটা সমর্পিত হয় যেন এ সময়। রেবেকা হাতে তসবিহ নেন। কিছু দোয়া তিনি প্রতিদিন পড়েন। আজো তিনি তসবিহ হাতে নিতে নিতে রহিমার ঘরে গেলেন।’
রেবেকা সাদাবকেও ডাক দিলেন।ডা. রায়হানও উঠে গেছেন অনেক আগেই । ভোরে প্রায়ই রায়হানের ক্ষুধা লেগে যায় । রায়হান রেবেকার কাছে মিষ্টি খাবার চাইলেন। রেবেকা প্লেটে ওভেনে গরম করে পায়েস খেতে দিলেন। ছেলে সাদাব উঠে স্কুলের ড্রেস পরে তৈরি হয়ে নিয়েছে।ড্রাইভারও এসে গেছেন। রহিমা টেবিলে রুটি ও সবজি দিল। রহিমাকে রেবেকা সাদাবের টিফিন রেডি করে দিতে বলে। স্কুলের পরে ছেলে আবার কোচিংয়ে যাবে । কোচিং সেরে একেবারে বিকেলে বাসায় ফিরবে। সাদাব মা-বাবাকে বিদায় জানিয়ে বের হয়। সাদাবের বাইরে যাওয়ার আগ মুহূর্তটা খুব সুন্দর। মা’র কাছে যেয়ে মাকে বলবে,’মা, আসি।’ এরপর মা’র কপালে ছোট্ট করে একটা ‘চুমু খাবে’। মা মাঝে মাঝে মুখে একটু ক্রিম মাখিয়ে দেবে বা চুলে হালকা তেল মাখিয়ে দেবে ছেলের। মা’র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাদাব বাবার কাছেও যাবে। বাবার শরীর ছুঁয়ে বলবে, ‘বাবা আসি’। বাবাও আলতো করে একটু আদর করে দিবে। ছেলেটা কেমন করে যেন সবার আদর কেড়ে নেয়। রেবেকার মনটা তৃপ্তিতে ভরে ওঠে।
ছেলের স্কুল কাছেই। সাদাবকে স্কুলে দিয়ে ড্রাইভার বাসার নিচেই আছেন। নাস্তা খেয়ে দুজনই হাসপাতালের উদ্দেশ্য বের হয়ে যায়।
আজ অপারেশন নেই। শায়রা ম্যাডাম সবাইকে নিয়ে ওয়ার্ড রাউন্ড দেবেন। ডা. রেবেকার হঠাৎ গতকালের রোগীটার কথা মনে পড়ে যায়। রেবেকা আবার চিন্তার জগতে চলে যায়। কোথা দেখেছি, কোথায় দেখেছি। এত পরিচিত কেন লাগল মহিলাটাকে। ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে দিতে গতকালের রােগীর কাছে গেলেন রেবেকা। কাকতলীয় একটা ব্যাপার ঘটে গেল। নাম জিজ্ঞেস করলেন রোগীটির, বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলেন।