
কানিজ কাদীরের ভ্রমণ কাহিনি-‘মাদুরাই’ (শেষ পর্ব)
প্লেন ছেড়ে দিল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য চেন্নাই এর সময় সকাল ১১-৪০ এ। টিকিট অনুযায়ী ভেবেছিলাম সকাল ১১-১০ যা ছিল বাংলাদেশ টাইম। খুব আনন্দ লাগছিল। আবার আমার আপন জগতে ফিরে যাচ্ছি। আমার দেশ, আমার ঘর, আমার সন্তান, আমার আপনজনের কাছে। আমার হাসব্যান্ডের সাথে আগেই যোগাযোগ হয়েছে। উনি দুপুর ২.০০টায় গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টে থাকবেন। প্লেন ১-৪০ এ ঢাকা পৌঁছে গেল। অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল। এই আমার দেশ, আমার জন্মভূমি। আমার দেশের আকাশ, মাটি, গাছপালা, নদীনালা, মানুষজন সবকিছুকে আমি খুব ভালোবাসি। প্লেন থেকে নেমেই আমি বললাম ”ওহ্ , এইতো আমার দেশ।”
মনটা আবার ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।আবার আমার মায়ের অভাব অনুভব করলাম হৃদয়ে। বুকটা চিনচিন্ করে উঠলো আবার। পৃথিবীতে কারও জন্য কিছুই থেমে থাকে না। আম্মার মৃত্যুর পনের দিন পরে আমি দেশের বাইরে যেয়ে ট্রেনিং করে আসলাম। মনটাকে অনেক শক্ত করতে হয়েছে। মনকে অনেক বুঝ দিতে হয়েছে । শুধু খারাপ লাগছে আম্মার সাথে কোন অভিজ্ঞতাই শেয়ার করতে পারবো না।
আমার হাসব্যান্ডকে ফোন দিলাম চলে আসার জন্য। আমরা একটু আগেই পৌঁছে গেছি। রকিবুল ও রাফিজার জন্য জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এম্বুল্যান্স আসবে। লাগেজ নেবার জন্য দাঁড়ালাম। আমার হাসব্যান্ডের পরিচিত একজন ভদ্রলোক আমাকে সাহায্য করলেন। উনি আমাদের ভি,আই,পি গেট দিয়ে বাইরে নিয়ে এলেন। সেখানে গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। আমার হাসব্যান্ডকে দূর থেকে দেখে হাত নেড়ে ‘হাই’ বললাম। উনি কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। মোবাইলে রাফিজা ও রকিবুলসহ আমাদের একটা ছবিও তুললেন । রাফিজা ও রকিবুল কে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠলাম। আমাকে পেয়ে আমার হাসব্যান্ডকে বেশ আবেগ আপ্লুত মনে হচ্ছিল। আমিও উনাকে পেয়ে খুব প্রশান্তি অনুভব করছিলাম। উনার সাথে নানা অভিজ্ঞতার গল্প করতে করতে বাসায় এসে পৌঁছালাম। ঘরের দরজায় ঢুকতেই মনে হলো-”ওহ্ মাই সুইট হোম!” এইতো আমার ঘর, আমার শান্তি। মনে হলো আমার ঘর পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘর। এখানেই আমার যত শান্তি, এ শান্তি আর কোথাও যেন খুঁজে পাই না। আমার সন্তানদের কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আর ভাবলাম আবার আমার আপন পৃথিবীতে এসে পড়েছি। আমার দেশ, আমার ঘর, আমার সংসার এখানেই আমার সকল সুখ। ফিরে এলাম আবার আমার আপন ঠিকানায়। কিন্তু তারপরও সবকিছু ফাঁকা লাগছিল ।মনে হচ্ছিল আমি যেন মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেছি। শুধু একটাই অভাব বোধ করছিলাম। ”আমার মা কোথায়, আমার মা তো আর এ পৃথিবীতে নেই! আমি কার কাছে আমার এই অভিজ্ঞতার কথা বলবো!!”
(শেষ)
